Skip to main content

Posts

Showing posts from March, 2015

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ৬ : কাঁড়ি দিবস

আমরা তখন ক্লাস টেনে পড়ি, ২০০১ সাল, একদিন কেমিস্ট্রি ক্লাসে গৌরহরি ঘোষবাগদা কথায় কথায় বলে ফেললেন যে কয়েক বছর আগে সিনিয়র সেকশনের হস্টেলগুলোয় ছেলেরা ডিনারে কাঁড়ি দিবস পালন করেছিল  |  কনসেপ্টটা আমাদের কাছে নতুন ছিল, স্যারকে জিজ্ঞাসা করলে উনি বললেন ‘কাঁড়ি দিবস’-এর অর্থ হল ‘কাঁড়ি কাঁড়ি খাওয়া’, মানে এতটাই বেশি খাওয়া যে খাবার কম পড়ে যাবে, ফলে ডাইনিং হল ও মেইন কিচেনে হুলস্থুল পড়ে যাবে এবং তারা বাধ্য হবে আবার রান্না বসাতে  |   গৌরহরি দা-র সাথে আমরা ক্লাস 10 E- এর ছাত্ররা (২০০১ সাল )   পাঠকদের জানিয়ে রাখি, নরেন্দ্রপুরের সিনিয়র সেকশনে ছয়টি হস্টেল (ভবন), এদের সবার রান্না একসাথে হয় মেইন কিচেনে, তারপর সেখান থেকে ঠেলা গাড়িতে করে খাবার হস্টেলের ডাইনিং হলগুলোতে পাঠানো হয়  |  খুব স্বাভাবিকভাবেই এই রান্নাবান্নার পর্ব খাওয়া শুরুর অনেক আগেই শেষ হয়ে যায়, ফলে কোনদিন যদি এতো বেশি খাওয়া যায় যে অনেক লোকের খাওয়া বাকি থাকতেই সব খাবার শেষ হয়ে যাবে, তাহলে নিঃসন্দেহে কিচেন-স্টাফ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভবনের স্যার, মহারাজ সবাই বিচলিত হয়ে পড়বেন এবং তারপর যুদ্ধকালীন ত ৎপ...

জনমেজয়-বৈশ্যম্পায়ন সংবাদ : পর্ব ১: ভারতীয় ক্রিকেট ফ্যান

জনমেজয় কহিলেন, “ হে মহর্ষে ! আপনি কহিলেন যে কলিযুগে ‘ক্রিকেট ফ্যান’ নামক এক প্রকার জীব ভারতবর্ষে আবির্ভূত হইবেন | তাহারা কি প্রকার জীব হইবেন এবং পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করিয়া কি কার্য করিবেন, তাহা শুনিতে বড় কৌতুহল জন্মিতেছে | আপনি অনুগ্রহ করিয়া সবিস্তারে বর্ণন করুন |” বৈশম্পায়ন কহিলেন, “হে নরবর ! আমি সেই বিচিত্রবুদ্ধি, হুজুগে এবং দোষারোপপ্রিয় ভারতীয় ‘ক্রিকেট ফ্যান’গনকে আখ্যাত করিব, আপনি শ্রবণ করুন | হে রাজন, যাহারা ব ৎসরে মাত্র পনের দিন নীল জার্সি পরিধান করিয়া, মুখমন্ডল ত্রিবর্ণে রঞ্জিত করিয়া এবং হস্তে জাতীয় পতাকা ধারণ করিয়া নিজদিগকে শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিক মনে করিবেন তাহারাই ক্রিকেট ফ্যান |   যিনি ক্রিকেটের কিছুই বুঝিবেন না, অথচ কম্পিউটার গেম ‘ই এ স্পোর্টস’ খেলিয়া নিজেকে ক্রিকেটের দিকগজ মনে করিবেন এবং একটিমাত্র ম্যাচ হারিবার জন্য দেশজ ক্রিকেটারদের অকথ্য ভাষায় গালিমন্দ করিয়া উহাদের পূর্বপুরুষ উদ্ধার করিবেন ও ক্রিকেটারদের বাসস্হান ভাঙ্গনে উদ্যোগী হবেন তিনিই ক্রিকেট ফ্যান | যিনি দেশের একটি ম্যাচ জয়ের পরে ক্রিকেটারের চিত্রে মাল্যদান করিয়া আনন্দের আতিসজ্যে জাম্বুমানের ন্যায় লম্ফঝম্ফ...

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur): পর্ব ৫ : নিখিলদা

বহু বছর পেরিয়ে আসার পরও প্রাক্তনী বন্ধুদের আলোচনায় নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বারেবারে ফিরে আসে  |  আসলে ওটা তো আমাদের কাছে নিছক 'স্কুল' ছিল না, বছরের নয় মাস আমরা সেখানে থাকতাম, ফলে নিজের বাড়ি হয়ে যেত 'সেকেন্ড হোম' আর স্কুল হয়ে উঠত 'বাড়ি' | পুরনো বন্ধুদের সেই স্মৃতিচারণায় নানা মজাদার ঘটনার পাশাপাশি উঠে আসে কিছু মানুষের নাম - যাঁরা আমাদের বড় করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন  |  এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি ঊদ্ধৃতি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক - “ অতএব যাদের উচিত ছিল জেলের দারোগা বা ড্রিল সার্জেন্ট বা ভূতের ওঝা হওয়া, তাদের কোনমতেই উচিত হয় না ছাত্রদিগকে মানুষ করিবার ভার লওয়া  |  ছাত্রদের ভার তাঁরাই লইবার অধিকারী, যাঁরা নিজের চেয়ে বয়সে অল্প, জ্ঞানে অপ্রবীণ ও ক্ষমতায় দুর্বলকেও সহজেই শ্রদ্ধা করিতে পারেন, যাঁরা জানেন শক্তস্য ভূষনং ক্ষমা, যাঁরা ছাত্রকেও মিত্র বলিয়া গ্রহণ করিতে কুন্ঠিত হন না  | ” (ছাত্রশাসনতন্ত্র, শিক্ষা, জ্যৈষ্ঠ, ১৩২৬) উপরের শর্তানুযায়ী বলতে পারি আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে অন্ততঃ শতকরা নব্বই জন সত্যি সত্যিই ছাত্রদের ভার নেবার অধিকারী ছিলেন ...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...

ফেসবুক আপডেট: পর্ব ১

ফেসবুক আপডেট   সেদিন একটা মজাদার ফটো দেখলাম | প্রস্তর যুগের দুই শিকারী এক বিশালকায় বাইসন মেরে ফিরেছে | এক শিকারীর তো আর তর সইছে না, তার দাবী হলো তখুনি খাওয়াদাওয়া শুরু করা হোক, অন্যদিকে আরেক শিকারী গুহার দেওয়ালের উপর কিসব আঁকিবুঁকি কেটে চলেছে পাথর দিয়ে | প্রথম শিকারী কৌতুহলবশত জিজ্ঞাসা করলে দ্বিতীয় শিকারী জানায় যে সে শিকারপর্বের সচিত্র-আপডেট দিচ্ছে গুহার ওয়াল-এ | ইতিহাসের নিয়ম মেনেই মানুষ আজও সেই আপডেট দিয়ে চলেছে | মার্ক জুকেরবার্গ পাথরের দেওয়াল খোদাইয়ের পরিশ্রম কমিয়েছেন ফেসবুকের জন্ম দিয়ে | স্মার্টফোন নামক যন্ত্রটি ‘সেলফি’ নামক যন্ত্রণার জন্ম দিয়েছে | মধ্যবিত্তের আশা আকাঙ্খার তালিকায় একটি নতুন জিনিস যোগ হয়েছে – ফেসবুকে ‘লাইক’ পাওয়া | চূড়ান্ত মূল্যবৃদ্ধির যুগেও বাজারে মিলছে নানা রকম সস্তা ইন্টারনেট-প্যাক | এই সুযোগে মেয়েরা মুখে ফেসপ্যাক লাগিয়ে আরো সুন্দরী হয়ে উঠে এবং ছেলেরা  সিক্স-প্যাক বানিয়ে আরো মাচো হয়ে উঠে নিজেদের সেলফি তুলে পটাপট আপডেট দিচ্ছে ফেসবুকে | আজকাল আর রাস্তায় দু’দন্ড দাঁড়িয়ে লোকের সাথে দু-চারটে কথা বলার সুযোগ এবং সময় যখন হচ্ছে না, তখন বিভিন্ন...

অবাক ধূমপান

******************************************************* দুর্গানগর , রোববার দুপুর ৩ টে , ১৫ই মার্চ ২০১৫ | ক্যালেন্ডারে বসন্ত কাল হলেও বেজায় গরম পড়েছে | ঘরে ঘরে বাঙালী দুপুরে ভালোমন্দ খেয়ে ঘুম দিচ্ছে | দোকানপাট সব বন্ধ হয়ে গেছে , খুলবে আবার সন্ধ্যার পর | উস্কখুস্ক চুলে এক পথিকের আগমন | রাস্তার পাশেই একটা নীল-সাদা বাড়ি , তার ব্যালকনিতে বসে বছর ২৭-২৮ এর এক যুবক ফোনে কার সাথে কথা বলছে | পথিক:   দাদা , কোথায় এখানে একটু সিগারেট পাই বলতে পারবেন ? যুবক :   ‘সিগারেট-পাই’ ? তা তো জানি না | তবে এবাড়িতে এক ‘কিউটি-পাই’ আছে | এখন সেজেগুজে সেলফি তুলছে , ফেসবুকে আপলোড করবে বলে | ডেকে দেব ? পথিক:   আরে না না দাদা , আমেরিকান পাই , পাই কেক , জলপাই , অঙ্কের পাই , পাইথন - এসব কোনকিছুর কথা   বলছি না | আসলে বলছি সেই কখন বেরিয়েছি বাড়ি থেকে , রোদের মধ্যে ঘুরে মাথা বনবন করছে , একটু ধুম্রপান করতে পারলে বাঁচতাম | তাই জিজ্ঞাসা করছিলাম কাছাকাছি কোনো পান-বিড়ির দোকান আছে নাকি ! যুবক:   বাড়ি কোথায় আপনার ? পথিক:   বারাসাত | যুবক :   সেই সুদুর বারাসাত থ...

ব্যোমকেশ, বিজ্ঞাপন এবং বাঙালীর হালচাল

বৃহঃস্পতিবারের সকাল দশটা | ১২ই মার্চ, ২০১৫ | সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সী তার এম জি রোডের (পূর্ব নাম হ্যারিসন রোড) ভাড়াবাড়ির ড্রয়িং রুমে বসে সিগারেটে সুখটান মারতে মারতে আনন্দবাজার পত্রিকা পড়ছিল | সত্যবতী বাড়ি নেই, খোকাকে বগলদাবা করে সে তার দাদা সুকুমারের বাড়ি গেছে সপ্তাহখানেকের জন্য | অজিত একটু বেরিয়েছে, কাছেই কলেজস্ট্রিটে পাবলিশার্সের অফিসে গিয়েছে বকেয়া টাকা আদায় করতে | চাকর পুঁটিরাম ঘন্টা খানেক আগে জলখাবার দিয়ে গেছিল, আজ হয়েছিল কালো জিরে কাঁচালঙ্কা দিয়ে আলুর তরকারী আর ফুলকো লুচি | আজকাল ব্যোমকেশের হাতে সেরকম কেস-টেস আসছে না | অবশ্য শুধু ব্যোমকেশ নয়, ফেলু মিত্তির সহ বাকি সমস্ত প্রাইভেট ইনভেষ্টিগেটরদেরও হাল একই রকম | আজকাল বাজারে ক্রাইম-টাইম যে কম হচ্ছে তা নয়, কিন্তু সব ক্রাইমেই আজকাল সরকার পক্ষের নাম চলে আসছে, আর তারপর সব কেস কম্প্রমাইসড হয়ে যাচ্ছে, সিবিআই পর্যন্ত স্বাধীনভাবে তদন্ত করতে পারছে না | সুতরাং এসব ক্ষেত্রে ব্যোমকেশদের কেউ ডাকছে না , অবশ্য ডাকলেও সরকার আর নানা পার্টির চাপে এরা কিছু করতেও পারত না | অগত্যা এইসব বেসরকারী গোয়েন্দাদের অনেকেই সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে –...