কাজের মাসি
গতকাল আনন্দবাজারের
রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু
অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল –
তখন আমি যাদবপুর
ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে
রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই
সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে |
মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা
উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে
চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার
চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের
ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায়
আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল,
এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম,
তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো
পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট
খানেক পরে অবশ্য এই তিন আঙ্গুলের রহস্যভেদ হয়েছিল |
ক্লাইম্যাক্সে আসা যাক | নরেন্দ্রপুর
থেকে যাদবপুর ট্রেনে মিনিট কুড়ির যাত্রা | সবিতাদি একবার কথায় কথায় আমাকে বলেছিল
যে প্রতিদিন এই সময়টায় সে আর তার কিছু কাজ-তুতো বান্ধবীরা ট্রেনের ভিতর না বসে
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আসাটাই পছন্দ করে | আমি কারণ জিজ্ঞাসা করায় সবিতাদি যা
বলেছিল তা আমার সারাজীবন মনে থাকবে | ট্রেনের দরজার কাছে দাঁড়ালে নাকি রেল লাইনের
ধারে কাটা পড়া লাশ দেখতে ভারী সুবিধা হয়, এই দৃশ্যটা ট্রেনের জানলা দিয়ে মোটেও
ভালো দেখা যায় না | প্রায় প্রতিদিনই ওই লাইনে এরকম দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, ফলে
জার্নিটা বোরিং কাটে না সবিতাদিদের |
অবাক পৃথিবী !!!
(দুর্গানগর, ২৩-০৩-২০১৫)
Comments
Post a Comment