Skip to main content

Posts

Showing posts from 2016

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১১ - জোড়া ভৌগলিক

আমাদের স্কুলে ভূগোল বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে দু’জন ছিলেন একই নামের  |   একজনের নামের আদ্যক্ষর পি.পি. ( P.P.), আরেকজনের পি.এম. ( P.M.)  |   প্রথমজন পড়াতেন বাংলা মাধ্যমের ছেলেদের , দ্বিতীয়জন ইংরাজি মাধ্যমের ছেলেদের  | প্রথমজন হাসানোর একটুও চেষ্টা করতেন না , বরং যথাসাধ্য গাম্ভীর্য বজায় রাখতেন , কিন্তু তাঁর কথাই আমাদের কাছে ছিল কৌতুকসম  |   দ্বিতীয়জন হাসাবার জন্য অনেক হাস্যকৌতুক বলতেন , সেগুলো বলে নিজেই হেসে কুটিকুটি হয়ে যেতেন , কিন্তু কোনটাতেই ছাত্রদের একটুও হাসি পেত না  | ************************************************************ প্রথম ভাগ : পি.পি. পিপিবাবু ছোটদের বলতেন , “ তোমরা ছোট তাই তোমাদের কিছু বলছি না  |   বড় দাদাদের জিজ্ঞাসা করে দেখো  |   দুষ্টুমি করলে আমি মার দিয়ে ওদের চামড়া গুটিয়ে দিই  | ” আর বড়দের বলতেন , “ তোমরা এখন বড় হয়ে গেছ , মারধোর করলে খারাপ দেখায় , তাই কিছু বলছি না  |   নাহলে মেরে চামড়া গুটিয়ে দিতাম  |   জুনিয়র ভাইদের জিজ্ঞাসা করে দেখো ওদের আমি কিরকম শায়েস্তা করি...

|| বালিশের পাশে, মনের সাথে ||

ছোটবেলায় একটা অভ্যাস ছিল আমার - পছন্দের জিনিসকে বিছানায় বালিশের পাশে নিয়ে রাতে শোওয়া  |   সারাদিন বগলদাবা করে রেখেও যেন সাধ মিটত না , ঘুমের মধ্যেও তাকে সঙ্গে চাই  |   তাছাড়া আমি ঘুমোচ্ছি , এই সুযোগে যদি চোর-ডাকাত এসে জিনিসটা নিয়ে নেয় ! পাশে নিয়ে শুলে জিনিসটা বেদখল হবার সম্ভাবনা কম থাকে  | স্কুলে পড়াকালীন নানা সময়ে নানা রকমের ' হবি ' ( শখ) ছিল আমার  |   যেমন – একেবারে প্রথমে , যখন প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম , তখন অভ্যাস ছিল ট্রেনের টিকিট জমানোর  |   তারপর হল বাবল গামের সাথে পাওয়া ফুটবলারদের ছবিসহ কার্ড জমানোর  |   এরপর হল ‘স্টোন-স্টিকার’ জমানোর শখ - মনে আছে একটা ছোট্ট খাতায় সেগুলো আটকে রাখতাম  |   পরে এল ডাকটিকিট সংগ্রহের অভ্যাস  |   সবশেষে কয়েন কালেকশন  |   সব কটা হবি চলাকালীন সেই ‘হবি’-সংক্রান্ত ডাব্বা বা ডায়েরিটা প্রতি রাতে আমার সাথে বিছানায় শুতে যেত  | ছোট থেকেই কেন জানি আমার যুদ্ধবিগ্রহের প্রতি খুব শখ !! একটা খেলনা ‘স্টেইন-গান’ ছিল আমার , সেটা ছিল আমার প্রাণ  |   ফি বছর দু...

|| নোংরা নোট ||

খুব নোংরা , কালিঝুলি লাগানো পুরোনো নোট (টাকা) হাতে পেলে অবাক হয়ে মাঝেমাঝে আমি তার দিকে চেয়ে থাকি  |   ভাবি এই কালো দাগ কি মেহনতি হাতের পরিশ্রমের চিহ্ন , নাকি অসৎ কারবারীর মনের কালিমা ! নাকি এই কালো দাগ শুধুমাত্র সময়ের পদচিহ্ন ? বহুদিন ধরে কত পথ ঘুরে এই টাকা আমার কাছে এসেছে  |   কত সুখ-দুঃখের ইতিহাস রয়েছে এই বিশেষ নোটটিকে ঘিরে , কিন্তু সেই সব কাহিনী উদ্ধারের কোনো উপায় আমার জানা নেই  |   কেউ হয়তো এই টাকায় প্রেমিকার জন্য কোনো উপহার কিনেছে , কেউ হয়তো নিজের কোনো সাফল্যের আনন্দ  বন্ধুদের সঙ্গে উদযাপন করেছে , কেউ হয়ত নিজের পাওয়া প্রথম বেতন থেকে টাকা তুলে এই নোট হাতে পেয়েছে – মুখে ফুটেছে তার হাজার ওয়াটের বাতি , আবার কেউ হয়তো প্রিয়জনকে শ্মশানে দাহ করে তার দাম মিটিয়েছে এই নোট দিয়ে  |   কোনো ধনী ব্যক্তি হয়তো নিতান্ত অবহেলাভরে কোনো হোটেলের চাপরাশিকে এই টাকা বখশিস দিয়েছে , আবার কোনো দিন-আনি-দিন-খাই মানুষ হয়তো দিনের শেষে এই টাকা দিয়ে পরিবারের জন্য খাবার কিনেছে  |   কত ভালবাসা , কত আনন্দ , কত দায়িত্ব , কত অবহেলা , কত উচ্ছ্বাস , কত ব্যথা ...

সুন্দরী ফুলকুমারী

আজ বলিব ফুলকুমারীর কথা  |   ফুলকুমারী আমার প্রতিবেশী , বেশ কিছু দিন ধরিয়া গুরুতর অসুস্থ  |   তাহার মা-বাবা এই বিষয়ে অতিশয় চিন্তিত , পূজা-পাঠ করিয়া , জ্যোতিষীর শরণাপন্ন হইয়াও লাভ হয় নাই  |   এখন কথা চলিতেছে মনোবিদের নিকট পরামর্শ লইবার  |   অসুখটি বড় কঠিন , ইহার নামটিও শক্ত - ' নার্সিসিসম '  |   গ্রীক পুরাণে বর্ণিত নার্সিসাস নামক যুবক নিজ রূপে এমন মগ্ন হইয়াছিল যে প্রাণ পর্যন্ত হারাইতে হইয়াছিল তাহাকে  |   ফুলকুমারীও নিজ রূপে মজিয়া নিজেরই প্রেমে পড়িয়াছে  | ফুলকুমারীকে ' সুন্দরী ' বলা যাইতে পারে  |   সদ্য স্কুলের চৌকাঠ পার করিয়া সে মহাবিদ্যালয়ে প্রবেশ করিয়াছে  |   ফুল ফুটিলে ভ্রমর আপনি জুটিয়া যায়  |   উপরন্তু এই কথাও সত্য যে এই বঙ্গভূমি যতই দুর্ভাগা হউক না কেন সেইখানে বুভুক্ষু , হ্যাংলা ছোকরাদের কখনই অভাব হয় নাই  |   ফলাফল এক গুচ্ছ প্রেমের প্রস্তাব , ফটোতে অগণিত ফেসবুক লাইক , হোয়াটসঅ্যাপে ফ্রাস্টু বালকদিগের প্যানপ্যানানি বার্তা  |   এই সমস্ত দেখিয়া শুনিয়া ফুলকুমারী...

দেশপ্রেমিক পাঁচুগোপাল

আজ বলিব পাঁচুগোপালের কাহিনী  |   পাঁচুগোপাল আমার প্রতিবেশী , চরম দেশপ্রেমিক  |   ল্যাপটপে নীলছবি দেখিবার পূর্বেও সে জাতীয় সঙ্গীত চালাইয়া প্যারেডের ' সাবধান ' পজিশনে দাঁড়াইয়া থাকে  |   প্রত্যহ প্রত্যুষে নিদ্রাভঙ্গের পরক্ষণে "ভারত মাতা কী জয়" শ্লোগান দিয়া থাকে   |   প্রতিটি আলোচ্য বিষয়ে   ভারতীয় সেনার প্রসঙ্গ উত্থাপন করা তাহার অভ্যাস  |   ভারতীয় সেনা সীমান্তে চব্বিশ ঘন্টা দাঁড়াইয়া প্রহরা দেন , ফলে ব্যাঙ্ক-এটিএম-পোস্টাপিসে টাকা তুলিবার লাইনে সে প্রত্যহ পাঁচ ঘন্টা অনায়াসে দাঁড়াইয়া থাকে  |   কখনো রেগিস্তানের সীমানায় দ্বিপ্রহরে প্রহরারত সেনার কষ্টের কথা ভাবিয়া সে জলন্ত স্টোভের উপর দশ মিনিট বসিয়া থাকে , কখনো বা হিমালয়ের গিরিশ্রেনিতে প্রহরারত সেনার কষ্টের কথা ভাবিয়া মধ্যরাত্রে ফ্রিজ খুলিয়া তাহার ভিতর ঢুকিয়া ঘন্টা দুয়েক বসিয়া থাকে  | পাঁচুগোপালের এই দেশপ্রেমের হাতেখড়ি শৈশবে ' বর্ডার ', ' গদর ' প্রভৃতি হিন্দি সিনেমা দেখিয়া  |   কৈশোরে ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচ দেখিয়া দেশপ্রেম তাহার অধিকতর পোক্ত হয়...