Skip to main content

|| নোংরা নোট ||



খুব নোংরা, কালিঝুলি লাগানো পুরোনো নোট (টাকা) হাতে পেলে অবাক হয়ে মাঝেমাঝে আমি তার দিকে চেয়ে থাকি | ভাবি এই কালো দাগ কি মেহনতি হাতের পরিশ্রমের চিহ্ন, নাকি অসৎ কারবারীর মনের কালিমা ! নাকি এই কালো দাগ শুধুমাত্র সময়ের পদচিহ্ন ?

বহুদিন ধরে কত পথ ঘুরে এই টাকা আমার কাছে এসেছে | কত সুখ-দুঃখের ইতিহাস রয়েছে এই বিশেষ নোটটিকে ঘিরে, কিন্তু সেই সব কাহিনী উদ্ধারের কোনো উপায় আমার জানা নেই | কেউ হয়তো এই টাকায় প্রেমিকার জন্য কোনো উপহার কিনেছে, কেউ হয়তো নিজের কোনো সাফল্যের আনন্দ বন্ধুদের সঙ্গে উদযাপন করেছে, কেউ হয়ত নিজের পাওয়া প্রথম বেতন থেকে টাকা তুলে এই নোট হাতে পেয়েছে – মুখে ফুটেছে তার হাজার ওয়াটের বাতি, আবার কেউ হয়তো প্রিয়জনকে শ্মশানে দাহ করে তার দাম মিটিয়েছে এই নোট দিয়ে | কোনো ধনী ব্যক্তি হয়তো নিতান্ত অবহেলাভরে কোনো হোটেলের চাপরাশিকে এই টাকা বখশিস দিয়েছে, আবার কোনো দিন-আনি-দিন-খাই মানুষ হয়তো দিনের শেষে এই টাকা দিয়ে পরিবারের জন্য খাবার কিনেছে | কত ভালবাসা, কত আনন্দ, কত দায়িত্ব, কত অবহেলা, কত উচ্ছ্বাস, কত ব্যথা, কত দীর্ঘশ্বাস জুড়ে আছে এই বিশেষ নোটটার সাথে | একমাত্র সময়ই তার সাক্ষী !

কেউ কেউ আবার সময়ের বুকে নিজের ছাপ রাখতে নোটে নিজের নাম লিখে রাখে – কবে কোথায় তার সময় শেষ হয়ে যাবে ঠিক নেই, কিন্তু তার হস্তাক্ষর ঘুরতে থাকবে স্থান থেকে স্থানান্তরে, সময় থেকে সময়ান্তরে |

শুধুই কি কাগজী-মুদ্রা ? নাকি মানুষ, অনুভূতি আর সময়ের কোলাজ ?

© অর্ঘ্য দাস @ টুকটাক লেখালেখি, 15-12-2016


Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ৩ - ঘন্টা, আলু এবং ব্রহ্ম

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ছাত্রদের দৈনন্দিন আবাসিক জীবনকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছে এই ছোট্ট ছড়াটা - “ নরেন্দ্রপুরে সময় ঘন্টাময় , খাদ্য আলুময় , চিন্তা ব্রহ্মময়  | ” অনেকদিন আগে শোনা এই ছড়ার রচয়িতার নাম আমার জানা নেই , কিন্তু ছড়াটা এতটাই প্রাসঙ্গিক যে এটা আমার মনের মধ্যে যেন গেঁথে গেছে  | ************************************************************ প্রথম ভাগ : ঘন্টা বাস্তবিকই আমাদের আবাসিক জীবন ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  |   ভোর পাঁচটায় rising bell শুনে ঘুম ভাঙতো , তারপর ঘন্টার তালে তালে সেই যে লেজ তুলে দৌড় শুরু হত , সেটা থামত রাত সাড়ে দশটা নাগাদ , ‘lights out’ এর ঘন্টাধ্বনি শুনে  |   চার বেলা ডাইনিং হলে খেতে যাওয়ার ঘন্টা , প্রার্থনা কক্ষে যাবার ঘন্টা , স্কুলে যাবার ঘন্টা , হোস্টেলে পড়া শুরু করার ঘন্টা , খেলতে যাবার ঘন্টা , রাত্রে শুতে যাবার ঘন্টা – আমাদের প্রতিটা কাজ ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  | প্রতিদিন এই সময়ে-অসময়ে ঘন্টা বাজানোর জন্য প্রত্যেক ভবনে (হস্টেলে) প্রতি মাসে দু’জন ছাত্রকে নিয়োগ করা হতো , এদের বলা হতো ‘...