Skip to main content

Posts

Showing posts from 2015

অমিতবাবু ও জেরক্স

আমি বেশ কিছুদিন মধ্যপ্রদেশের একটি বেসরকারী স্কুলে শিক্ষকতা করেছিলাম | সেই স্কুলে শিক্ষকদের সুবিধার্থে একটি প্রিন্টার আর একটি জেরক্স মেশিনের ব্যবস্থা ছিল | প্রিন্টারটা ছিল টিচার্স রুমের ভিতর, সেটা ব্যবহারের উপর কোনো বিধিনিষেধ ছিল না, যে যত খুশি পাতা প্রিন্ট নিতে পারত – সেদিনের কাগজের বরাদ্দ শেষ না হওয়া পর্যন্ত | অন্যদিকে জেরক্স মেশিনটা ছিল টিচার্স রুমের ঠিক বাইরে একটা ছোট্ট ঘরে | যে লোকটা জেরক্স মেশিনটা অপারেট করত তার কাছে একটা রেজিস্টার ছিল, সেখানে সই করে আমরা দরকার মত জেরক্স করাতে পারতাম | প্রিন্ট নিতে বা জেরক্স করতে আমাদের কোনো খরচ হত না, তবে একটা অলিখিত নিয়ম ছিল যে এই সমস্ত প্রিন্ট বা জেরক্সগুলো স্কুল সংক্রান্ত কাজের জন্য হতে হবে | ব্যক্তিগত কাজের জন্য আমরা যে এই সুবিধাগুলো ব্যবহার করতাম না তা নয়, তবে সেটা খুবই কম | যাইহোক, কাজের কথায় আসি | অমিত কুমার নামক আমার এক সহকর্মী একদিন কম্প্যুটারে প্রিন্ট কম্যান্ড দিয়ে প্রিন্টারের কাছে গিয়ে দেখেন কাগজ নেই | অথচ ভদ্রলোকের খুবই দরকার, পাঁচ মিনিটের মধ্যে প্রিন্টটা না নিলেই নয়  | ভদ্রলোক অগত্যা জেরক্সের ঘরে গিয়ে কয়েকটা সাদা A4 পৃষ্ঠা...

আকস্মিক আবিষ্কার

(কৈফিয়ৎ: আমাদের পাড়ার এক দাতব্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের ম্যাগাজিনের জন্য আমাকে একটা লেখা দিতে বলা হয়েছিল | গাইডলাইন হিসাবে বলা হয়েছিল যে লেখাটি informative এবং তার বিষয় স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান সম্পর্কিত হলে ভালো হয় | স্বাভাবিকভাবেই এই ধরনের লেখায় মৌলিকত্ব থাকা সম্ভব নয়, কারণ সমস্ত তথ্য ইন্টারনেট বা অন্যান্য জায়গা থেকে সংগ্রহ করতে হয় | এছাড়া এরকম লেখার আরেকটা অসুবিধা হল যেহেতু এর পাঠক সাধারণ মানুষ, ফলে এই লেখায় যতসম্ভব বিজ্ঞানের কচকচি দুরে সরিয়ে খুব সহজ, প্রাঞ্জল ভাষায়, যাকে বলে layman’s language- এ মূল প্রতিপাদ্য বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করতে হয়, যা রীতিমত কঠিন কাজ | যাইহোক, শেষমেষ একটা লেখা খাড়া করেছি  |  লেখাটাকে যাতে হারিয়ে না ফেলি সেজন্য এই ব্লগে জুড়ে দিলাম |   কোনরকম বৈজ্ঞানিক ত্রুটি যদি পাঠকের নজরে আসে তাহলে জানাতে দ্বিধা করবেন না |)      _____________________________________________________________________________ ইংরাজি ভাষায় একটা প্রচলিত কথা আছে - Necessity is the mother of all inventions – অর্থাৎ প্রয়োজনের তাগিদই আবিষ্কারের উৎস | কিন্তু আজ পর্যন্ত ...

বিষয় : গোমাংস

আজকাল গো-মাংস নিয়ে খুব হইচই হচ্ছে | রোজ রোজ নানা রকম খবর শোনা যাচ্ছে | একদল মানুষ গো-মাংস নিষিদ্ধ করে রাজনীতি করছে তো অন্যদল গো-মাংস খেয়ে প্রতিবাদী রাজনীতি করছে | দাদরি কান্ডের স্মৃতি এখনো দগদগে | এর উপর সম্প্রতি এক ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা নেতা হুমকি দিয়েছেন যে কর্ণাটকের মুখ্যমত্রী যদি গো-মাংস খান তাহলে তাকে নাকি হত্যা করা হবে ! আমার একটা বেসিক প্রশ্ন আছে – গরু কে হিন্দু ধর্মে পূজা করা হয় বলে তার মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ বলে বিশুদ্ধ হিন্দুত্ববাদীরা দাবি করছেন | খুব ভালো কথা | কিন্তু হিন্তু ধর্মে তো বরাহ (শুয়োর), কুর্ম (কচ্ছপ) ও মৎস্যকেও অবতার বলে ধরা হয় | তাহলে তাদের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ নয় কেন ? এই প্রশ্ন এক সাচ্চা হিন্দুকে করায় সে উত্তর দিয়েছিল, বাকি তিনটি জীবের থেকে গোরুর পার্থক্য হল যে আমরা গোরুর দুধ খাই, ফলে গোরু আমাদের মায়ের সমান, তাই তাকে খাওয়া মহাপাপ | ভালো যুক্তি নিঃসন্দেহে, কিন্তু আজকালকার এই দুর্মূল্যের বাজারে গোরুর খাঁটি দুধ কে খেতে পাচ্ছে কে জানে !! সবই তো সিন্থেটিক দুধ | সেই হিসাবে তো আর গো-জাতি আমাদের (অন্ততঃ শহুরে মানুষদের ক্ষেত্রে) মা হবার দাবি রাখতে পারে না ! joke...

পাঁচুর বাবার হোটেল

আমরা যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন গড়ফা নামক জায়গায় একটি মেসে থাকতাম  |   এই মেসসূত্রেই পাঁচুর সাথে আমাদের আলাপ  |   পাঁচুর ভালোনাম একটা আছে বটে , কিন্তু সেটা দীর্ঘদিনের   অব্যবহারে প্রায় লুপ্ত হয়ে গেছে  |   পাঁচুর বাড়ি কাটোয়ায় , সেখানে পাঁচুর বাবার একটা খাবারের হোটেল আছে  |   পাঁচুর বাবা দক্ষ ব্যবসায়ী , ফলে এই হোটেল চলে খুব ভালো  |   ছুটিছাটায় বাড়ি গেলে পাঁচুও মাঝেমাঝে এই হোটেলের ম্যানেজারি সামলায় , ফলে হোটেল-ব্যবসার নাড়ি-নক্ষত্র পাঁচুরও জানা আছে  |   সেই ট্রেড-সিক্রেটের কিছুটা পাঁচু আমাদের কাছে ফাঁস করেছিল  |   পাঁচুর বলা চার আনা ঘটনার সাথে আমরা বারো আনা জল মিশিয়ে পুরো ব্যাপারটাকে এমন রূপ দিয়েছিলাম যে একটা সময়ের পরে পাঁচু এই বিষয়ে আমাদের সামনে মুখ খোলাই বন্ধ করে দিয়েছিল  |   কিন্তু পাঁচু কে উত্ত্যক্ত করবার জন্য আমরা মাঝেমাঝেই এই প্রসঙ্গের অবতারণা করে থাকতাম এবং আজও সবাই একজায়গায় জড়ো হলে এই ব্যাপারে কথা উঠবেই  | শেষমেশ পুরো ব্যাপারটা কেমন দাঁড়িয়েছে সেটা আপনাদের বলি  | পাঁচুর ...

ডিসকাউন্ট

( চিত্রঋণ - ইন্টারনেট )   পুজোর মরশুম এসে গেছে | চারিদিকে এখন ডিসকাউন্ট আর সেলের বন্যা বয়ে যাচ্ছে | কে কার থেকে বেশি ছাড় দিয়ে ক্রেতাকে আকর্ষণ করতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলছে | ছোটবেলায় স্কুল-লেভেলে পাটিগণিতে আমরা লাভ-ক্ষতির অনেক অঙ্ক কষেছি | কিন্তু সেখান থেকে আসলে কিছুই শিখিনি | ব্যাপারটা খোলসা করে বলছি | একটা অঙ্কের উদাহরণ দেওয়া যাক - “ At what rate per cent above cost price, a person have to mark the price of an article, so that he can enjoy 20 % profit after allowing 10 % discount ? ” অর্থাৎ “ দোকানদারকে ক্রয়মূল্যের কত শতাংশ বৃদ্ধি করে ধার্যমূল্য স্থির করতে হবে, যখন ধার্যমূল্যে ১০ শতাংশ ছাড় দেবার পরেও দোকানদারের ২০ শতাংশ লাভ (ক্রয়মূল্যের উপর) থাকবে ” ? খুবই কমন অঙ্ক | ছোটবেলায় আমরা সবাই এ জাতীয় অঙ্ক করেছি | ‘ডিসকাউন্ট’ ব্যাপারটায় আমাদের যথেষ্ট ধারণা আছে | আমরা প্রত্যেকেই আদতে জানি যে আজকাল বাজারঘাটে অহরহ যেরকম ছাড় দেবার হিড়িক পড়েছে, সেটা নিতান্তই ধোঁকার টাটি, আসলে ওটা কোম্পানিগুলোর (বা দোকানদারের) বিজনেস পলিসি ছাড়া আর কিছুই না |  জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে আমাদে...

শারদীয়া

শরতের গন্ধ : শিউলির সুবাস শরতের রূপ : ঝকঝকে নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মত মেঘ, কাশ বন   শরতের অনুভূতি : শেষ রাতে পায়ের কাছে থাকা কাঁথা টেনে গা মুড়ি দেওয়া পুজোর শব্দ : বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, ঢাকের বাদ্যি, দীপাবলীর শব্দবাজি    পুজোর স্বাদ : প্যান্ডেলের ভোগের খিচুড়ি, বাড়ির কচি পাঁঠার ঝোল, রেঁস্তোরার বিরিয়ানি পুজোর রূপ : পাড়ার প্যান্ডেলের ষোড়শী আর দক্ষিন কলকাতার রূপসী পুজোর জ্বালাতন : বাড়ির দরজায় চাঁদা সংগ্রহকারীদের হানা স্কুলজীবনের পুজো :                 (১) এক গাদা নতুন জামাকাপড় হবার আনন্দ               (২) ক্যাপ বন্দুক               (৩) শারদীয়া আনন্দমেলা আর শুকতারা               (৪) বেড়াতে যাওয়া               (৫) দূরদর্শনের ‘ছুটি ছুটি’ প্রোগ্রাম ...

|| অরণ্যের দিন-রাত্রি : পর্ব ১ - মাধব ন্যাশনাল পার্ক, শিবপুরী, মধ্যপ্রদেশ ||

" I am always astonished by a forest. It makes me realize that the fantasy of nature is much larger than my own fantasy. I still have things to learn. " -   Gunter Grass ভূমিকা : আমাদের দেশের উত্তর-মধ্য ভাগে, মধ্যপ্রদেশের শিবপুরী জেলায় ‘মাধব ন্যাশনাল পার্ক’ নামে একটি অখ্যাত জঙ্গল আছে  |  করবেট-রণথম্বর-বান্ধবগড়-কানহা-কাজিরাঙ্গা-গীর ইত্যাদি কুলীনদের তুলনায় সে নিতান্তই ব্রাত্য, কারণ এই জঙ্গলে বাঘ-সিংহ-হাতি-গন্ডার কোনটাই নেই  |  ফলে যে সমস্ত পর্যটক হিংস্র শ্বাপদ দর্শনকেই জঙ্গলযাত্রার একমাত্র মাপকাঠি মানেন তাঁদের এই জঙ্গল কখনোই ভালো লাগবে না  |  তবে জঙ্গলের নিজস্ব নৈসর্গিক রূপের সন্ধানে যদি কোনো পর্যটক সেখানে গিয়ে হাজির হন তাহলে হয়তো তিনি নিরাশ হবেন না  |  আর তিনি যদি এখানকার সরকারী বনবাংলোয় একটা রাত থাকতে পারেন, তাহলে এই জঙ্গলভ্রমণ তাঁর সারাজীবনের এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে  |   কর্মসূত্রে আমি মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র শহরে সাড়ে তিন বছর ছিলাম – 2011 সালের জুলাই থেকে 2015 সালের জানুয়ারী অবধি  |  এই মা...