Skip to main content

অমিতবাবু ও জেরক্স

আমি বেশ কিছুদিন মধ্যপ্রদেশের একটি বেসরকারী স্কুলে শিক্ষকতা করেছিলাম | সেই স্কুলে শিক্ষকদের সুবিধার্থে একটি প্রিন্টার আর একটি জেরক্স মেশিনের ব্যবস্থা ছিল | প্রিন্টারটা ছিল টিচার্স রুমের ভিতর, সেটা ব্যবহারের উপর কোনো বিধিনিষেধ ছিল না, যে যত খুশি পাতা প্রিন্ট নিতে পারত – সেদিনের কাগজের বরাদ্দ শেষ না হওয়া পর্যন্ত | অন্যদিকে জেরক্স মেশিনটা ছিল টিচার্স রুমের ঠিক বাইরে একটা ছোট্ট ঘরে | যে লোকটা জেরক্স মেশিনটা অপারেট করত তার কাছে একটা রেজিস্টার ছিল, সেখানে সই করে আমরা দরকার মত জেরক্স করাতে পারতাম | প্রিন্ট নিতে বা জেরক্স করতে আমাদের কোনো খরচ হত না, তবে একটা অলিখিত নিয়ম ছিল যে এই সমস্ত প্রিন্ট বা জেরক্সগুলো স্কুল সংক্রান্ত কাজের জন্য হতে হবে | ব্যক্তিগত কাজের জন্য আমরা যে এই সুবিধাগুলো ব্যবহার করতাম না তা নয়, তবে সেটা খুবই কম |

যাইহোক, কাজের কথায় আসি | অমিত কুমার নামক আমার এক সহকর্মী একদিন কম্প্যুটারে প্রিন্ট কম্যান্ড দিয়ে প্রিন্টারের কাছে গিয়ে দেখেন কাগজ নেই | অথচ ভদ্রলোকের খুবই দরকার, পাঁচ মিনিটের মধ্যে প্রিন্টটা না নিলেই নয়  | ভদ্রলোক অগত্যা জেরক্সের ঘরে গিয়ে কয়েকটা সাদা A4 পৃষ্ঠা চান, কিন্তু জেরক্স-অপারেটর জানায় যে সাদা পৃষ্ঠা দেওয়া যাবে না কারণ তা  নিয়ম বহির্ভূত | অমিতবাবু একটা দশ টাকার নোট বার করেন, কিন্তু জেরক্স-অপারেটর বলে যে পয়সাকড়ি নিতে সে অপারগ, যদি নিতান্তই যদি সাদা A4 পৃষ্ঠা নিতে হয় তাহলে নাকি অ্যাপ্লিকেশন লিখে স্কুলের হেডমাস্টার বা অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টারকে দিয় সই করিয়ে আনতে হবে |

রীতিমতো বিরক্তিকর অবস্থা | হাতে সময় নেই অথচ মশা মারতে কামান দাগতে বলা হছে | অমিত কুমার দশ সেকেন্ড ভাবলেন | এরপর নিজের ব্যাগ থেকে একটা বই বার করে প্রথম পৃষ্ঠাটা জেরক্স করলেন | এরপর জেরক্সের সেই পৃষ্ঠাটার অন্য পাশ, মানে যে দিকটায় জেরক্স হয়নি সেই ফাঁকা দিকটায় পেন দিয়ে শুধু একটা ডট (বিন্দু) এঁকে বললেন সেই ডট-আঁকা দিকটার পনেরো কপি জেরক্স করতে | আর রেজিস্টারে নিজের নামের পাশে ১৬ পৃষ্ঠা জেরক্স লিখে নাম সই করে দিলেন |

বেচারা জেরক্স-অপারেটর তাজ্জব বনে গেল | সেই তো বকলমে পনেরোটা ফাঁকা A4 পৃষ্ঠাই দেওয়া হয়ে গেল !!    
___________________  
© অর্ঘ্য দাস
দুর্গানগর, ০৮-১২-২০১৫


Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ৩ - ঘন্টা, আলু এবং ব্রহ্ম

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ছাত্রদের দৈনন্দিন আবাসিক জীবনকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছে এই ছোট্ট ছড়াটা - “ নরেন্দ্রপুরে সময় ঘন্টাময় , খাদ্য আলুময় , চিন্তা ব্রহ্মময়  | ” অনেকদিন আগে শোনা এই ছড়ার রচয়িতার নাম আমার জানা নেই , কিন্তু ছড়াটা এতটাই প্রাসঙ্গিক যে এটা আমার মনের মধ্যে যেন গেঁথে গেছে  | ************************************************************ প্রথম ভাগ : ঘন্টা বাস্তবিকই আমাদের আবাসিক জীবন ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  |   ভোর পাঁচটায় rising bell শুনে ঘুম ভাঙতো , তারপর ঘন্টার তালে তালে সেই যে লেজ তুলে দৌড় শুরু হত , সেটা থামত রাত সাড়ে দশটা নাগাদ , ‘lights out’ এর ঘন্টাধ্বনি শুনে  |   চার বেলা ডাইনিং হলে খেতে যাওয়ার ঘন্টা , প্রার্থনা কক্ষে যাবার ঘন্টা , স্কুলে যাবার ঘন্টা , হোস্টেলে পড়া শুরু করার ঘন্টা , খেলতে যাবার ঘন্টা , রাত্রে শুতে যাবার ঘন্টা – আমাদের প্রতিটা কাজ ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  | প্রতিদিন এই সময়ে-অসময়ে ঘন্টা বাজানোর জন্য প্রত্যেক ভবনে (হস্টেলে) প্রতি মাসে দু’জন ছাত্রকে নিয়োগ করা হতো , এদের বলা হতো ‘...