Skip to main content

ডিসকাউন্ট


( চিত্রঋণ - ইন্টারনেট ) 
পুজোর মরশুম এসে গেছে | চারিদিকে এখন ডিসকাউন্ট আর সেলের বন্যা বয়ে যাচ্ছে | কে কার থেকে বেশি ছাড় দিয়ে ক্রেতাকে আকর্ষণ করতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলছে |

ছোটবেলায় স্কুল-লেভেলে পাটিগণিতে আমরা লাভ-ক্ষতির অনেক অঙ্ক কষেছি | কিন্তু সেখান থেকে আসলে কিছুই শিখিনি | ব্যাপারটা খোলসা করে বলছি | একটা অঙ্কের উদাহরণ দেওয়া যাক - “At what rate per cent above cost price, a person have to mark the price of an article, so that he can enjoy 20 % profit after allowing 10 % discount ?অর্থাৎ “দোকানদারকে ক্রয়মূল্যের কত শতাংশ বৃদ্ধি করে ধার্যমূল্য স্থির করতে হবে, যখন ধার্যমূল্যে ১০ শতাংশ ছাড় দেবার পরেও দোকানদারের ২০ শতাংশ লাভ (ক্রয়মূল্যের উপর) থাকবে” ? খুবই কমন অঙ্ক |

ছোটবেলায় আমরা সবাই এ জাতীয় অঙ্ক করেছি | ‘ডিসকাউন্ট’ ব্যাপারটায় আমাদের যথেষ্ট ধারণা আছে | আমরা প্রত্যেকেই আদতে জানি যে আজকাল বাজারঘাটে অহরহ যেরকম ছাড় দেবার হিড়িক পড়েছে, সেটা নিতান্তই ধোঁকার টাটি, আসলে ওটা কোম্পানিগুলোর (বা দোকানদারের) বিজনেস পলিসি ছাড়া আর কিছুই না |  জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে আমাদের সামনে পেশ করা হয়, তারপর সেখান থেকে মনমুগ্ধকর ছাড় দেওয়া হয়, আর আমরা মহানন্দে বগল বাজিয়ে জিনিসপত্তর কিনে ভাবি যে “আজ হেব্বি লাভ হল” | সত্য সেলুকাস !!


( চিত্রঋণ - ইন্টারনেট )
তবে এটা সত্যি যে বিভিন্ন অনলাইন ডেলিভারি সংস্থাগুলো বাজারদরের চেয়ে কম দরে আমাদের কাছে জিনিসপত্র পৌঁছে দিচ্ছে, আর সেজন্যই এই সংস্থাগুলোর জনপ্রিয়তা আর বাজার দুই-ই বাড়ছে | এর ব্যাখ্যাও অঙ্ক বইতে রয়েছে | “আসল ক্রয়মূল্য = ক্রয়মূল্য (/উৎপাদন মূল্য)  + আনুসঙ্গিক খরচ” (Actual cost price = Cost price + Overhead expenses) | অনলাইন সংস্থাগুলো এই Overhead expenses(আনুসঙ্গিক খরচ)-গুলো কমিয়ে দিয়েছে, যে মাল আগে সাত হাত ঘুরে আমাদের কাছে পৌছোতো সেগুলো আজ এই সংস্থাগুলোর দৌলতে মাত্র তিন হাত ঘুরে আমাদের কাছে পৌঁছোচ্ছে, ফলে সাধারনভাবেই বিক্রয়মূল্য (selling price) কমে যাচ্ছে | লাভের পরিমান কিন্তু একই থাকছে | এটাই তাদের ডিসকাউন্টের রহস্য | তবু যেহেতু আমাদের খরচ কম করতে হচ্ছে, তাই এটাই আমাদের কাছে সুবিধাজনক | কিন্তু এই অনলাইন কেনাকাটা করতে গিয়ে মাঝেমাঝেই ‘তৃষ্ণার্ত হইয়া চাহিলাম এক গ্লাস জল / ত্বরায় আনিয়া দিল একখানি বেল” হয়ে যাচ্ছে সেটার খোঁজ আমরা রাখছি না |

আর একদল রয়েছে যারা সত্যিই অবিশ্বাস্য কম দামে জিনিসপত্র বেচছে | আসলে এরা আলাদা করে অর্ডার দিয়ে খারাপ কোয়ালিটির জিনিস বানিয়ে তারপর সেটা কম দামে আমাদের বেচছে | ফলে কেনার সময় বিলকুল ঝকঝকে, কিন্তু কয়েকদিন ব্যবহার করার পরেই সেটা “ছিল রুমাল, হয়ে গেল বিড়াল” হয়ে যাচ্ছে | আসলে আজকাল চারিদিকে সবাই গান্ধীজির আদর্শকেই অনুসরণ করছে |

কি বলুন তো সেই আদর্শ ?

ইতিহাস বই, সিনেমা, ইন্টারনেট – কোত্থাও দেখেছেন গান্ধীজির মাথায় টুপি আছে ? অথচ বাপুর লক্ষ লক্ষ অনুগামী সেই কবে থেকে মাথায় টুপি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, নামও দেওয়া হয়েছে ‘গান্ধী টুপি’ !! উইকিপেডিয়া বলছে গান্ধীজি নিজে মাত্র এক-দুই বছর (১৯২০-২১ সাল)ওই টুপি পরেছিলেন, তারপর আর কখনো তিনি নিজে ওটা পরেন নি | নিজে প্রায় কোনদিন টুপি না পরেও অগণিত লোককে দিনের পর দিন টুপি পরানো – চাট্টিখানি কথা ?



_________________
© অর্ঘ্য দাস
দুর্গানগর, ১৩-১০-২০১৫



Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...
  ঝাড়গ্রাম : বসন্ত ১৪২৭ স্কুল পাশ করেছি সতেরো বছর হয়ে গেল | তারপর এই প্রথম আমার সুযোগ হলো স্কুলের বন্ধুদের সাথে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার | দু তিনটে জায়গা মাথায় ছিল – ঘাটশিলা , ঝাড়গ্রাম, অযোধ্যা পাহাড় | এই বসন্তের শুরুতে তিনটে জায়গাই মনোরম | শেষমেষ ঝাড়গ্রাম WBFDC এর গেস্ট হাউসের ছবি দেখে সেটাই ফাইনাল করা হলো | 6 ই মার্চ, 2021, শনিবার          ডিমসেদ্ধ : সকাল সাড়ে দশটা - ক্যালেন্ডারে মার্চের শুরু হলেও বেজায় গরম. আমি দরদর করে ঘামছি ডেবরা চৌমাথায় (পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) দাঁড়িয়ে, হাতে আমার একুশটা হাঁসের ডিম সেদ্ধ, সাথে পেঁয়াজ লঙ্কা কুচি এবং সাদা ও কালো নুন | এক সপ্তাহ আগে করা প্ল্যান অনুযায়ী আমরা নাকি আগামী দু’ ঘন্টায় গাড়িতে বসে পার হেড পাঁচটা করে হাঁসের ডিম খাবো | ওদিকে সৌমাভ ওর গাড়িতে গোল (সুমিত্র) আর পকাই (অর্ক) কে নিয়ে আসছে কলকাতা থেকে |          বব মার্লে : শেষমেষ আমায় প্রায় ঘন্টা খানেক রোদে দাঁড় করানোর পর তাঁরা এলেন এবং বসন্তের এই অকাল দাবদাহ থেকে আমায় মুক্তি দিলেন | ঠান্ডা গাড়িতে উঠে ওদের আনা এগ স্যান্ডউইচ আর কোলাঘাট KFC থেকে কেনা মুর...