===================================================
“The impulse
to travel is one of the hopeful symptoms of life”
– Agnes Repplier
পাহাড়ে ঘেরা চম্বা শহর চিত্রঋণ– মার্সেলা |
গেট দিয়ে ঢুকেই চোখে পড়বে এই দৃশ্য |
সামনে অতন্দ্র
প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে পাহাড়ের সারি
|
তাঁবুর ভিতরে চিত্রঋণ – মার্সেলা |
‘বাদশাহ ঠৌল’ আর ‘রানীচোরি’ – বড় অদ্ভুত এই নামদুটোর পারস্পরিক সহাবস্থান ! ‘ঠৌল’ শব্দের অর্থ জমায়েত বা সমাবেশ | কবে কোন সুদূর অতীতে একঝাঁক রাজারাজড়ার
মজলিশ থেকে কে কোন রানীকে চুরি করে নিয়ে পালিয়েছিল কে জানে !!
![]() |
চম্বা শহর |
এই সেই রানিচোরি মোটর রোড |
পাঁচ
দিন ও চার রাত্রির এই ট্যুর ছিল নানা রোমাঞ্চকর কর্মসূচিতে ঠাসা | প্রথমদিন ব্রেকফাস্টের
পর ছিল নানারকম অ্যাডভেঞ্চার অ্যাক্টিভিটি যেমন- Flying fox, Valley crossing ও
Burma bridge | এসব
জিনিসকে আমি আজীবন ভয় করেই এসেছি, কিন্তু আজ ক্যাম্পের ট্রেনারের তত্ত্বাবধানে ওই
একরত্তি বাচ্চাগুলোকে অনায়াসে ঐসব কান্ডকারখানা করতে দেখে সাহস করে ‘জয় মা’
বলে আমিও দড়ি ধরে ঝুলে পড়লাম !
উপরের দুটো ছবি burma bridge-এর (চিত্রঋণ – মার্সেলা), নিচের বাঁ
দিকের ছবিটা valley crossing (চিত্রঋণ – দেবদত্ত নাথ), আর ডান দিকেরটা flying
fox-এর
|
না, চিন্তা নেই, দড়িটা
ছেঁড়ে নি !
|
অন্ধকার জঙ্গলে
সান্ধ্যভ্রমণ (যেটুকু আলো দেখা যাচ্ছে সেটা ক্যামেরার ফ্ল্যাশের জন্য !)
|
ক্যাম্পে
ফিরে দেখি অগ্ন্যুৎসবের (bonfire) আয়োজন করা হয়েছে (বস্তুতঃ শুধু এদিন নয়, ট্যুরের
প্রতিদিনই আমরা bonfire করেছিলাম ) | আগুনের চারদিকে গোল করে বসে মজলিস শুরু হলো, সঙ্গে গরম
চা আর নুডলস-স্যুপ |
আমাদের ছাত্রদের মধ্যে বেশ কিছু সিকিমি ছেলে ছিল, তারা কয়েকটা সিকিমি গান গেয়ে
শুনালো | কনকনে ঠান্ডা হাওয়ার
মধ্যে বসে আগুন পোহাতে পোহাতে সেই গানগুলো শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল যে কোনো এক অজানা
সিকিমি গ্রামে পৌঁছে গিয়েছি |
উত্তাপ (চিত্রঋণ – মার্সেলা) |
দ্বিতীয়
দিন আমরা গেলাম চম্বা থেকে 22 কিলোমিটার দূরে, 2757 মিটার (9976 ফুট) উচ্চতায়
অবস্থিত গাড়োয়ালের বিখ্যাত সুরকন্ডা (Surkanda) দেবীর মন্দিরে | মন্দিরের নিচের গাড়ি-পার্কিং জোন
থেকে 3 কিলোমিটার খাড়াই পথ হেঁটে পৌঁছতে হয় এই মন্দিরে | দেবীমাহাত্ম্য ছাড়াও এই মন্দিরের
ভৌগলিক অবস্থান উল্লেখযোগ্য | মন্দিরের প্রাঙ্গণ থেকে চারিদিকের যে নৈসর্গিক দৃশ্য দেখা
যায় তা এক কথায় অনির্বচনীয় | আকাশ পরিষ্কার
থাকলে খালি চোখে স্পষ্ট দেখা যায় উত্তর দিকের উত্তুঙ্গ হিমালয়ের শ্বেতশুভ্র পর্বতশ্রেণী
|
দেবীদর্শনের পর আমরা গেলাম মন্দির
থেকে আট কিলোমিটার দুরে অবস্থিত ‘ধনৌলটি’ (Dhanaulti) নামক
ছোট্ট জনপদে |
দেওদার, রডোডেনড্রন আর ওক গাছের জঙ্গলে ঘেরা এই ছোট্ট জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পটটি চম্বা
ও মুসৌরীর সংযোগকারী রাস্তার ধারে অবস্থিত, এখান থেকে মুসৌরীর ও চম্বার দুরত্ব যথাক্রমে 24 ও 29 কিলোমিটার |
জায়গাটা পিকনিকের পক্ষে আদর্শ, ফলে ট্যুর অপারেটর এখানেই আমাদের মধ্যাহ্নভোজনের
ব্যবস্থা করেছিলেন |
![]() |
মূল মন্দিরের সামনে
|
হনুমানজীর সাথে একগুচ্ছ হনুমান
|
প্রভব, চেঙ্গিস, অমৃত আর য়োহেন এর সাথে
|
সুন্দরী ধনৌলটি
|
আকাশছোঁয়া গাছের নীচে
|
পেল্লায় সাইজের ভুঁড়িটা না থাকলে ছবিটা আরো ভালো হতো !!
|
ধনৌলটিতে পিকনিক লাঞ্চ
|
চম্বা শহরের ব্যস্ততা
|
এরকম জায়গায় একটা বাড়ি হলে মন্দ হতো না !!
|
তৃতীয় দিন সকালে আমাদের প্রকৃতি-ভ্রমণে (nature-walk) নিয়ে যাওয়া হলো | পাহাড়ি
জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে শিশিরে ভেজা নরম পথ ধরে ঘন্টাখানেক হাঁটা | কানে আসে জানা-অজানা নানা পাখির
ডাক, চোখে পড়ে রং-বেরঙের নানা পাহাড়ি ফুল ও লতাপাতা | মাঝেমাঝে গাছের পাতার ফাঁক-ফোকর
দিয়ে গায়ে এসে পড়ে ‘কচি লেবুপাতার মত নরম রোদ' | বিশুদ্ধ হিমেল বাতাসে মন-প্রাণ সতেজ হয়ে
ওঠে |
সকালে হাঁটতে বেরিয়ে (চিত্রঋণ – দেবুদা)
|
পাহাড়ের কোলে ভাগীরথী নদী
|
ভাগীরথী |
দক্ষিণী ডন মুত্তুস্বামী
|
তেহরি ড্যাম
|
তেহরি ড্যাম
|
![]() |
বাচ্চারা মন দিয়ে ছবি আঁকছে |
আমার আঁকা ছবি
|
চতুর্থ দিন সকালে আমাদের তাঁবু খাটানো (tent pitching) সেখান হল | ব্রেকফাস্ট করে আমরা বেরোলাম ট্রেকিংয়ে | কখনো পাহাড়ি শস্যক্ষেতের পাশ দিয়ে, কখনো বা পাহাড়ি ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পথ চলা | পাহাড়ের রূপের সঙ্গে নিবিড়তম অন্তরঙ্গতা অনুভব করতে হলে এই ট্রেকিংই সর্বোত্তম পন্থা | ঘন্টা দু’য়েক পথ চলার পর এক জায়গায় থেমে আমরা লাঞ্চ সেরে নিলাম | আরো ঘন্টা তিনেক (সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ ঘন্টা) হাঁটার পর আমরা গন্তব্যস্থানে এসে পৌঁছলাম |
মহাসমারোহে চলছে তাঁবু খাটানোর প্রাকটিস
|
পথ চলার শুরু (চিত্রঋণ – মার্সেলা) |
The
road less traveled
|
solitude (চিত্রঋণ – মার্সেলা)
|
পাহাড়ি শস্যক্ষেতের মধ্যে দিয়ে পথ চলা (চিত্রঋণ
– মার্সেলা)
|
চরৈবেতি |
চলতি কা নাম গাড়ি (চিত্রঋণ – মার্সেলা)
|
আমি আর লুকাস
|
চারিদিকের উঁচু টিলা আর
পাইনের জঙ্গল দিয়ে ঘেরা অনেকটা সমতল জায়গা – অনেকটা একটা বাটির (bowl) মতো আকৃতি বিশিষ্ট
এই জায়গাটা | এটাই
আমাদের আজ রাতের আস্তানা | হৈ হৈ করে মহা সমারহে ছাত্ররা তাঁবু খাটিয়ে ফেলল, আমরা মাস্টারমশাই-দিদিমনিরাও
হাত লাগলাম |
সবাই মিলে তাঁবু খাটানোর পর
|
চারিদিকে উঁচু গাছের সারি (চিত্রঋণ – দেবুদা)
|
![]() |
ছোট্ট তাঁবুর মধ্যে ইশান, নিখিল, প্রতীক আর পপাই
|
The Geren Family
|
বিশালদেহী মার্কের পাশে আমাকে রীতিমতো লিলিপুট লাগছে !! (চিত্রঋণ –
মার্সেলা)
|
তাঁবু
খাটানোর পর আমরা সবাই মিলে জঙ্গল থেকে কাঠ জোগাড় করে আনলাম, তাতে আগুন জ্বালিয়ে
ম্যাগি রান্না করা হল | ম্যাগিকে এর আগে এত সুস্বাদু কখনো মনে হয়নি ! এরই মধ্যে
আমাদের ছাত্ররা চারদিক থেকে রাশি রাশি pine-cone
জোগাড় করে আনলো, সন্ধ্যার পর bonfire আয়োজন করার জন্য |
দুই মিনিটের ম্যাজিক, ভাগ্গিস তখন কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না এর উপর !!
|
![]() |
লুকাস আর রাশিকৃত পাইনের cone (চিত্রঋণ – মার্সেলা)
|
টর্চ আর গ্যাসের স্তিমিত আলোয় চলছে ডিনার
|
‘যার শেষ ভালো তার সব ভালো’ | বোধহয় এজন্যই ট্যুরের সবথেকে বড় আকর্ষণকে শেষ দিনের জন্য বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে | পঞ্চমদিন সকালে চম্বার ক্যাম্প থেকে তল্পিতল্পা গুটিয়ে আমরা হৃষিকেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম, গঙ্গাবক্ষে rafting করার জন্য | হৃষিকেশে আমরা এসে উঠলাম MHE-এর রিসর্ট ‘Bull’s Retreat’-এ | লাঞ্চের পর আমরা গিয়ে পৌঁছালাম গঙ্গার তীরে | নদীর গর্জনে এখানে কান পাতা দায় | আধঘন্টার ছোট্ট ট্রেনিং সেশনের পর আমরা শুরু করলাম rafting | সে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা | নদী যেখানে শান্ত সেখানে রাফটে বসে হালকা চালে দাঁড় টানার পাশাপাশি ফটোশ্যুট করা, নদীর জলে ঝাঁপিয়ে raft-এর দড়ি (raft perimeter rope) ধরে সাঁতার কেটে এগোনো | আর নদী যেখানে উচ্ছ্বল (rapid) সেখানে শক্ত হাতে অবিরাম প্রাণপন দাঁড় টানা | তখন প্রতি মুহুর্তে মনে হয় যে এই বুঝি raft উল্টে গেল !! এই rapid গুলোর সবকটার আলাদা আলাদা নাম আছে, হৃষিকেশের গঙ্গার কয়েকটা বিখ্যাত rapid-এর নাম হল – Sweet sixteen, Cross fire, Three blind mice, The wall, Roller coaster, Golf course, Double trouble ও Return to the sender | এরই কয়েকটা পার করে রামঝুলা ও লছমনঝুলার নীচ দিয়ে গিয়ে ঘন্টাখানেক পর অবশেষে আমরা পৌঁছালাম হৃষিকেশের ঘাটে |
ভেসে যাওয়ার আগের মুহূর্তে (২০১২ সাল) চিত্রঋণ – দেবুদা |
সহকর্মী মৃগাঙ্ক পান্ডের (হিন্দী শিক্ষক) সাথে - ২০১১ সাল
|
উচ্ছসিত কচি-কাঁচার দল
|
জলকেলি |
‘গঙ্গা নদীর মাঝি’
|
রাফটিং পর্ব শেষ করে আমরা
গেলাম হৃষিকেশের ঘাটের ধারের আশ্রমে | সেখানে
সন্ধ্যারতি দেখে সন্ধ্যা নাগাদ আমরা ফিরে এলাম হোটেলে | সেখানে campfire, তারপর
ডিনার করে ব্যাগপত্তর নিয়ে চেপে বসলাম দিল্লীগামী বাসে | সারারাতের সফরের পর ভোর
নাগাদ বাস দিল্লি পৌঁছালো, সেখান থেকে ভোপাল-জনশতাব্দী চেপে সকাল দশটা নাগাদ
গোয়ালীয়র এসে পৌঁছালাম |
হৃষিকেশের আশ্রমের সন্ধ্যারতি
|
সাতটা দিন যেন ঝড়ের বেগে কেটে গেল ! অনেকগুলো রঙিন
ভালোলাগার মুহূর্ত পেরিয়ে আমরা আবার সাদা-কালো জীবনে ফিরে এলাম | সঙ্গে রইলো স্মৃতি আর
ওখানে তোলা একগাদা ফটো | মাঝেমাঝেই মন খারাপের মুহুর্তে এই ফটোগুলো আমায় নিয়ে যায়
সেই ভালোলাগার দেশে |
পুনশ্চ:
1. MHEএর ওয়েবসাইটের লিংকটা নিচে দিলাম | ফোন নম্বর সহ যাবতীয় তথ্য ওখানেই পাওয়া যাবে | http://www.mheadventures.com/
2. সবশেষে আসি খাওয়াদাওয়ার প্রসঙ্গে | MHE-এর চম্বা ক্যাম্পের খাওয়াদাওয়া এক কথায় অসাধারণ | সকালে
ব্রেকফাস্টে টোস্ট,ওমলেট,আলুর পরোটা, পুরি-ভাজি, দালিয়ার পায়েস – ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সব
পেয়েছি |
দুপুরে প্রতিদিন নিরামিষ খাবার পরিবেশন হতো | বিনা সারে ফলানো সব্জিপাতির কি
অপূর্ব স্বাদ ! বিকালে স্ন্যাকস হিসাবে চা-কফি, আলু কিম্বা ফুলকপির পকোড়া |
সন্ধ্যাবেলা campfireএর সময় পেতাম চা-কফি আর ন্যুডলস-স্যুপ | রাতে
দু’দিন ভেজ আর তিনদিন নন-ভেজ (মুরগির মাংস) পরিবেশিত হয়েছিল | ওখানে
একদিন পালং-মুরগি কারি (palak-chicken) বানিয়েছিল, দুর্দান্ত হয়েছিল খেতে !!
_________________________
© অর্ঘ্য দাস, দুর্গানগর, ১৬-০১-২০১৬
বিঃ দ্রঃ : চিত্রঋণ সম্বলিত ছবিগুলো বাদে বাকি ছবিগুলো লেখকের তোলা এবং সেগুলির স্বত্ব লেখকের দ্বারা সংরক্ষিত
সাতটা দিন যেন ঝড়ের বেগে কেটে গেল ! অনেকগুলো রঙিন
ভালোলাগার মুহূর্ত পেরিয়ে আমরা আবার সাদা-কালো জীবনে ফিরে এলাম | সঙ্গে রইলো স্মৃতি আর
ওখানে তোলা একগাদা ফটো | মাঝেমাঝেই মন খারাপের মুহুর্তে এই ফটোগুলো আমায় নিয়ে যায়
সেই ভালোলাগার দেশে |
পুনশ্চ:
1. MHEএর ওয়েবসাইটের লিংকটা নিচে দিলাম | ফোন নম্বর সহ যাবতীয় তথ্য ওখানেই পাওয়া যাবে | http://www.mheadventures.com/
2. সবশেষে আসি খাওয়াদাওয়ার প্রসঙ্গে | MHE-এর চম্বা ক্যাম্পের খাওয়াদাওয়া এক কথায় অসাধারণ | সকালে
ব্রেকফাস্টে টোস্ট,ওমলেট,আলুর পরোটা, পুরি-ভাজি, দালিয়ার পায়েস – ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সব
পেয়েছি |
দুপুরে প্রতিদিন নিরামিষ খাবার পরিবেশন হতো | বিনা সারে ফলানো সব্জিপাতির কি
অপূর্ব স্বাদ ! বিকালে স্ন্যাকস হিসাবে চা-কফি, আলু কিম্বা ফুলকপির পকোড়া |
সন্ধ্যাবেলা campfireএর সময় পেতাম চা-কফি আর ন্যুডলস-স্যুপ | রাতে
দু’দিন ভেজ আর তিনদিন নন-ভেজ (মুরগির মাংস) পরিবেশিত হয়েছিল | ওখানে
একদিন পালং-মুরগি কারি (palak-chicken) বানিয়েছিল, দুর্দান্ত হয়েছিল খেতে !!
_________________________
© অর্ঘ্য দাস, দুর্গানগর, ১৬-০১-২০১৬
বিঃ দ্রঃ : চিত্রঋণ সম্বলিত ছবিগুলো বাদে বাকি ছবিগুলো লেখকের তোলা এবং সেগুলির স্বত্ব লেখকের দ্বারা সংরক্ষিত
Wonderful as usual
ReplyDelete