Skip to main content

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ৩ - ঘন্টা, আলু এবং ব্রহ্ম




নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ছাত্রদের দৈনন্দিন আবাসিক জীবনকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছে এই ছোট্ট ছড়াটা -

নরেন্দ্রপুরে সময় ঘন্টাময়,
খাদ্য আলুময়,
চিন্তা ব্রহ্মময় |

অনেকদিন আগে শোনা এই ছড়ার রচয়িতার নাম আমার জানা নেই, কিন্তু ছড়াটা এতটাই প্রাসঙ্গিক যে এটা আমার মনের মধ্যে যেন গেঁথে গেছে |

************************************************************

প্রথম ভাগ : ঘন্টা

বাস্তবিকই আমাদের আবাসিক জীবন ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত | ভোর পাঁচটায় rising bell শুনে ঘুম ভাঙতো, তারপর ঘন্টার তালে তালে সেই যে লেজ তুলে দৌড় শুরু হত, সেটা থামত রাত সাড়ে দশটা নাগাদ, ‘lights out’এর ঘন্টাধ্বনি শুনে | চার বেলা ডাইনিং হলে খেতে যাওয়ার ঘন্টা, প্রার্থনা কক্ষে যাবার ঘন্টা, স্কুলে যাবার ঘন্টা, হোস্টেলে পড়া শুরু করার ঘন্টা, খেলতে যাবার ঘন্টা, রাত্রে শুতে যাবার ঘন্টা – আমাদের প্রতিটা কাজ ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত |

প্রতিদিন এই সময়ে-অসময়ে ঘন্টা বাজানোর জন্য প্রত্যেক ভবনে (হস্টেলে) প্রতি মাসে দু’জন ছাত্রকে নিয়োগ করা হতো, এদের বলা হতো ‘Time keeper’ |

মিশনে আমাদের প্রত্যেকেরই প্রতিমাসে কোনো না কোনো ডিউটি পড়ত | যেমন ডাইনিং হলে খাবার পরিবেশন, 'প্রেয়ার হল' পরিষ্কার করা এবং সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা, ডাইনিং হলে খাবার পর প্রত্যেকের থালা-গ্লাস ধোয়া ঠিকঠাক হল কিনা তা দেখা, রবিবার হস্টেলের চারিদিকের আগাছা-জঞ্জাল পরিষ্কার করা, হোস্টেলের প্রত্যেকটা ঘর প্রতিদিন ঠিকঠাক করে পরিষ্কার করা হচ্ছে কিনা তার তদারক করা, এমনকি বাথরুম পর্যন্ত পরিষ্কার করা !! কিন্তু এই টাইম-কিপার দের কাজ ছিলো সবথেকে কঠিন, ঘন্টা বাজাতে এক মিনিট দেরী হলেই শুনতে হতো বকাঝকা | তবে এই টাইম-কিপার দের স্কুল বা ডাইনিং হলে কোনো ঘন্টা বাজাতে হতো না, সেসবের জন্য লোক নিযুক্ত থাকত |

সারাদিনের এই অসংখ্য ঘন্টানিনাদের মধ্যে সকাল বেলার ঘুমভাঙানি ঘন্টাধ্বনি আমাদের কাছে ছিল সবচেয়ে অপছন্দের আর যেদিন ডিনারে মাংস থাকত (সাধারনত: শনিবার) সেদিনের ‘ডাইনিং বেল’টা ছিলো আমাদের কাছে ছিল সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর |



ডাইনিং হলের সামনে ঝোলানো সেই ঘন্টা – যেটা পিটিয়েই আমাদের জানানো হত যে খাওয়ার সময় হয়েছে [চিত্রঋণ – শাশ্বত (রায়)দা] 


***********************************************************

দ্বিতীয় ভাগ : আলু

বাস্তবিকই মিশনের হোস্টেলের সব রান্নাতেই থাকত আলুর জয়জয়কার | আমাদের পরমপ্রিয় এক মহারাজ, জুনিয়র-সেকশনের তপনদা, স্বামী আদিজানান্দ, প্রায়ই বলতেন ‘হস্টেলেও থাকবে আর আলু-ও খাবেনা, তা কি হয় !!” | এই কথা বলে বলে তিনি আমাদের সকলকে জোর করে যে কত আলু খাইয়েছেন তার হিসাব নেই | আমাদের এক প্রণম্য মাস্টারমশাই, জীবন বিজ্ঞানের অজিতদা, প্রয়াত শ্রী অজিত কুমার সেনগুপ্ত, বলতেন যে মিশনের খাবারের প্রেক্ষিতে আলু হল ‘ভগবান’ কারণ সবেতেই সে বিরাজমান !


নরেন্দ্রপুরীয় আলুর স্মৃতিতে প্রথমেই চোখে ভেসে ওঠে প্রতি সপ্তাহের সোমবার প্রাতঃরাশে পরোটার সাথে দেওয়া আলুর তরকারীর কথা | সে তরকারিতে যেন জাদু মিশে থাকত | দেখতে অতি নিরীহ সেই তরকারী মুখে দিলে মনে হত যেন অমৃত আস্বাদন করছি | জীবনে ওই স্বাদ আর কখনো পাইনি | বোধহয় আলুর সাথে মশলাপাতি ছাড়াও পাচক ভালবাসা মিশিয়ে দিতেন | না হলে ওই জিনিস হয় না | 

এই সেই বিখ্যাত আলুর তরকারী  [চিত্রঋণ – সুদীপ (পালিত)দা ]

শনিবার রাতে পাওয়া মাংসের ঝোলের আলুও ছিল অনবদ্য | হোস্টেল তো আর বাড়ি নয়, ফলে মাংস সেখানে ইচ্ছামতো পাওয়া যেত না | ওই ছোট-মাঝারি মিলিয়ে চার টুকরোই বরাদ্দ ছিল সবার জন্য | তবে সুখের বিষয় হল ঝোল আর আলু চাইলেই পাওয়া যেত | ওই দুটো জিনিস দিয়েই আমরা হাতার পর হাতা ভাত খেয়ে নিতাম | 


আমাদের স্কুলে বিকালে খেলতে যাওয়ার আগে কিছু হাল্কা স্ন্যাকস দেওয়া হত যাকে ওখানকার ভাষায় ‘light tiffin’ বলা হত | খেলা থেকে ফেরার পর সন্ধ্যার জলখাবার দেওয়া হত, যার নাম ছিল ‘heavy tiffin’ আমরা যখন ক্লাস নাইনে উঠেছি, সেটা 2000 সাল, তখন থেকে বিকালে সপ্তাহে একদিন ‘লাইট টিফিন’ হিসাবে ফুচকা দেওয়া শুরু হয়, সেদিনই 'হেভি টিফিন'য়ে থাকত চপ-মুড়ি |  ওই দিনগুলোতে আমরা কয়েকজন খেলা থেকে ফিরে খুব তাড়াতাড়ি হাত-মুখ ধুয়ে, ‘হেভি টিফিনে’র বেল পড়ার আগেই ডাইনিং হল গিয়ে হাজির হতাম | আসলে প্রতিদিনই ফুচকার কিছুটা আলুমাখা উদ্বৃত্ত থাকত, সেটা দিয়ে মুড়ি মেখে খেতে বড় ভালো লাগত | কিন্তু জিনিসটা খুব বেশি পরিমানে থাকত না, মানে প্রথম মাত্র নয়-দশ জনই সেটা পেত, সেজন্যই আগেভাগে দৌড়ে ডাইনিং হল যাওয়া |


বিকালের ফুচকার আসর ( বাঁ-দিকের ফটোতেই দেখা যাচ্ছে সেই বিখ্যাত আলুমাখা )

ক্লাস ইলেভেনে ওঠার পর আমরা নরেন্দ্রপুর কলেজে চলে গেলাম, কারণ আমাদের সময়ে H.S. সেকশন কলেজের অন্তর্ভুক্ত ছিল | সেসময় সপ্তাহে একদিন ডিনারে আলুরদম দেওয়া হত | আমরা কয়েকজন খাওয়াশেষে আরো কিছুটা আলুরদম একটা গ্লাসে করে নিয়ে আসতাম | গভীর রাতে যখন খুব খিদে পেত, তখন ওই আলুরদমটা মুড়ি সহযোগে খেতাম | সেই স্বাদও ভোলার নয় |

আলুর পাহাড় - নরেন্দ্রপুর মিশনে ‘নরনারায়ণ সেবা’র রান্নার প্রস্তুতি [চিত্রঋণ – বিশ্বনাথ মহারাজ]  


*********************************************************

তৃতীয় ভাগ - ব্রহ্ম

মিশনে ঢুকে প্রথম কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা শুনলাম ‘ব্রহ্ম’ শব্দটা | আমরা এর আগে প্রজাপতি ‘ব্রহ্মা’র নাম শুনেছি, তাঁর সমন্ধে নানা পৌরানিক গল্প পড়েছি, এমনকি নানা টিভি সিরিয়ালে তাঁকে চাক্ষুষ পর্যন্ত করেছি | কিন্তু ‘ব্রহ্ম’ নামটা এর আগে কোনদিন শুনিনি | অথচ এখানে এসে শুনছি ব্রহ্ম নাকি সর্বত্র বিরাজমান | দুবেলা খাওয়ার আগে এই ‘ব্রহ্ম’কে নিবেদন করেই আমরা খাওয়া শুরু করছি | মহারাজরা বলছেন যে ব্রহ্মজ্ঞান হল আসল জ্ঞান | কিন্তু কে এই ‘ব্রহ্ম’ ? তিনি নাকি নিরাকার, ফলে তাঁকে দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না, শুধু নাকি অনুভব করতে হয় !! এইসব কঠিন কথা তখন আমাদের মাথায় মোটেও ঢুকত না | ক্লাস ফাইভ-সিক্সের বাচ্চা এসব জিনিস কী করেই বা বুঝবে !!

জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষক অজিতদা ‘ব্রহ্ম’কে খুব মজাদার ভাবে ব্যাখা করেছিলেন | একেবারে বাংলা ব্যাকরণের নিয়ম মেনে | ক্লাস এইটে আমাদের তিনি বলেছিলেন, “বিভিন্ন টিভি সিরিয়ালে তোরা সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা কে দেখেছিস - তিন মাথা ওয়ালা, মুখে সাদা দাড়ি - রীতিমতো আকার, আয়তন যুক্ত | এবার ‘ব্রহ্মা’ বানান থেকে আ-কার টা বাদ দিয়ে দে, কি পড়ে থাকল ? ‘ব্রহ্ম’ তো ? ফলে ব্রহ্ম ‘নিরাকার’ ! বুঝতে পেরেছিস তো ? ব্রহ্মা হলেন সাকার আর ব্রহ্ম হলেন নিরাকার |” 

মিশনে সকাল-বিকাল দুইবেলা আমাদের মন কলুষমুক্ত করতে ভগবান-আরাধনার ব্যবস্থা ছিল | ধুতি-পাঞ্জাবী পরে আমরা প্রার্থনাকক্ষে যেতাম এবং সাধ্যমত বেসুরো গলায় খানিকটা গান গাইতাম আর শেষের দিকটায় খানিকটা ঘুমিয়ে নিতাম | কেউ কেউ আবার পাঞ্জাবী-উত্তরীয়র আঁড়ালে গল্পের বই নিয়ে যেত, আমাদের এক বন্ধু তো গোটা হ্যারি পটার সিরিজ আর সিডনি সেলডনের গোটা দশেক বই প্রেয়ার হলে বসেই পড়ে শেষ করলো |

সকাল-সন্ধ্যের এই আধ্যাত্মিক অভ্যাসের ফলে আমরা হোস্টেলের ঘরে বসে যে ঈশ্বর বা ব্রহ্ম নিয়ে আলোচনা করতাম তা একেবারেই নয়, তবে পড়াশুনায় মনোনিবেশ করতে খুব সুবিধা হতো | আরেকটা সুবিধা হল- পরবর্তীকালে নানারকম পূজা-পার্বণ বা অনুষ্ঠানের সময় ধুতি পরতে আমাদের কোনো সমস্যা হয় না |

তবে সন্ধ্যার প্রার্থনা কক্ষে “খন্ডন ভব” গানটা কিন্তু আমাদের অনুভূতির এক বিশেষ স্তরে উন্নীত হয়ে রয়েছে | আমাদের প্রত্যেক প্রাক্তনীর মনেই নরেন্দ্রপুর মিশন নিয়ে একটি আলাদা জায়গা সযত্নে বরাদ্দ করে রাখা আছে, এই গানটা সেখানকার সবথেকে জোরালো অনুভূতিগুলোর একটা | আজও যদি কখনো সন্ধ্যাবেলায় টিভি-রেডিও-মাইক থেকে ‘খন্ডন-ভব-বন্দন’ গানটা কানে আসে তাহলে কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে পড়ি, মনটা আজ থেকে ১৫-১৬ বছর আগের কোনো এক সন্ধ্যাবেলায় ফিরে যায় | স্পষ্ট দেখতে পাই, ধুতি-পাঞ্জাবি পরে সেই ছোট্ট-আমি বন্ধুদের মাঝে প্রেয়ার হলে বসে আছি ||

সেই প্রেয়ার হল – আমাদের ব্যাচের নিলাদ্রী আর ইন্দ্রজিত তবলায়, জুনিয়র ব্যাচের দেবাঞ্জন হারমোনিয়ামে | সেদিন কোনো বিশেষ দিন ছিল, বোধহয় ভবন-জয়ন্তী বা ঠাকুর-মা-স্বামীজি কারোর জন্মদিন, তাই সমীর মহারাজ এসেছেন আরতি করতে |


(সমাপ্ত)

পুনশ্চঃ : নরেন্দ্রপুর সংক্রান্ত আমার বাকি লেখাগুলো একসঙ্গে পরপর পড়া যাবে এখানে :   নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা

 অর্ঘ্য দাস @ টুকটাক লেখালেখি
প্রথম লেখা : 17-02-2015
পরিমার্জন : 27-12-2016


Comments

  1. খুব ভালো লাগলো।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অনেক ধন্যবাদ | পাঠকের ভালোলাগাতেই লেখকের পরিশ্রম সার্থক ||

      Delete
  2. Replies
    1. অনেক অনেক ধন্যবাদ | তোমাদের ভালোলাগাই আমার লেখার প্রেরণা | ভালো থেকো |

      Delete
  3. Arghya khub bhalo likhechhis. Koyekta porlam. Proti ta kothai narendrapur ke abar mone poralo.

    Soumyajyoti Da 1995 batch.

    ReplyDelete
    Replies
    1. পাঠকের প্রশংসার চেয়ে বড় প্রাপ্তি লেখকের কাছে আর কিছুই হতে পারে না | অনেক ধন্যবাদ তোমাকে | ভালো থেকো দাদা |

      Delete
  4. Durdanto... Abar chotto belata chokher samne choke elo....

    ReplyDelete
    Replies
    1. অনেক ধন্যবাদ | ভালো থেকো ||

      Delete
  5. Lekhata pore ekabr youtube-e "Khandano bhava bandono" shune nilam

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাঃ হাঃ !! ভালো করেছিস | আমি তো ডাউনলোড করে মোবাইল আর কম্প্যুটার - দু'জায়গাতেই রেখে দিয়েছি | পিছুটানে মন আক্রান্ত হলেই টুক করে গানটা একবার শুনে নিই ||

      Delete
  6. bhishon bhalo likhechis arghya.... chamatkar!

    ReplyDelete
    Replies
    1. তোদের (পাঠকদের) পড়ে ভালোলাগলেই আমি খুশি || :) :) এই ব্লগের বাকি লেখাগুলোও সময় করে মাঝেমধ্যে দু'একটা পড়ে দেখিস |

      Delete
  7. mone juriye dili bhai ... ki bhalo likhis maairi !

    ReplyDelete
    Replies
    1. অনেক অনেক ধন্যবাদ | যখন ভালো লেগেছে তাহলে অনুরোধ করব বাকি লেখাগুলো পড়বার জন্য | যদিও ফেসবুকেও সব লেখাই সময়ে সময়ে দিয়েছি, তবু এখানে অনেক বেশি systemic way-তে লেখাগুলো সাজানো আছে |

      Delete
  8. ki6u jana gelo. valo information. Dhonyobad

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশি হলাম | অনেক ধন্যবাদ | একটা অনুরোধ - এই ব্লগের বাকি লেখাগুলোও সময় পেলে পড়ে দেখবেন |

      Delete

Post a Comment

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...
  ঝাড়গ্রাম : বসন্ত ১৪২৭ স্কুল পাশ করেছি সতেরো বছর হয়ে গেল | তারপর এই প্রথম আমার সুযোগ হলো স্কুলের বন্ধুদের সাথে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার | দু তিনটে জায়গা মাথায় ছিল – ঘাটশিলা , ঝাড়গ্রাম, অযোধ্যা পাহাড় | এই বসন্তের শুরুতে তিনটে জায়গাই মনোরম | শেষমেষ ঝাড়গ্রাম WBFDC এর গেস্ট হাউসের ছবি দেখে সেটাই ফাইনাল করা হলো | 6 ই মার্চ, 2021, শনিবার          ডিমসেদ্ধ : সকাল সাড়ে দশটা - ক্যালেন্ডারে মার্চের শুরু হলেও বেজায় গরম. আমি দরদর করে ঘামছি ডেবরা চৌমাথায় (পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) দাঁড়িয়ে, হাতে আমার একুশটা হাঁসের ডিম সেদ্ধ, সাথে পেঁয়াজ লঙ্কা কুচি এবং সাদা ও কালো নুন | এক সপ্তাহ আগে করা প্ল্যান অনুযায়ী আমরা নাকি আগামী দু’ ঘন্টায় গাড়িতে বসে পার হেড পাঁচটা করে হাঁসের ডিম খাবো | ওদিকে সৌমাভ ওর গাড়িতে গোল (সুমিত্র) আর পকাই (অর্ক) কে নিয়ে আসছে কলকাতা থেকে |          বব মার্লে : শেষমেষ আমায় প্রায় ঘন্টা খানেক রোদে দাঁড় করানোর পর তাঁরা এলেন এবং বসন্তের এই অকাল দাবদাহ থেকে আমায় মুক্তি দিলেন | ঠান্ডা গাড়িতে উঠে ওদের আনা এগ স্যান্ডউইচ আর কোলাঘাট KFC থেকে কেনা মুর...