ঝাড়গ্রাম : বসন্ত ১৪২৭
স্কুল পাশ করেছি
সতেরো বছর হয়ে গেল | তারপর এই প্রথম আমার সুযোগ হলো স্কুলের বন্ধুদের সাথে কোথাও
বেড়াতে যাওয়ার | দু তিনটে জায়গা মাথায় ছিল – ঘাটশিলা , ঝাড়গ্রাম, অযোধ্যা পাহাড় |
এই বসন্তের শুরুতে তিনটে জায়গাই মনোরম | শেষমেষ ঝাড়গ্রাম WBFDC এর গেস্ট হাউসের ছবি
দেখে সেটাই ফাইনাল করা হলো |
6 ই মার্চ,
2021, শনিবার
- ডিমসেদ্ধ :
সকাল সাড়ে
দশটা - ক্যালেন্ডারে মার্চের শুরু হলেও বেজায় গরম. আমি দরদর করে ঘামছি ডেবরা
চৌমাথায় (পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) দাঁড়িয়ে, হাতে আমার একুশটা হাঁসের ডিম সেদ্ধ,
সাথে পেঁয়াজ লঙ্কা কুচি এবং সাদা ও কালো নুন | এক সপ্তাহ আগে করা প্ল্যান অনুযায়ী আমরা
নাকি আগামী দু’ ঘন্টায় গাড়িতে বসে পার হেড পাঁচটা করে হাঁসের ডিম খাবো | ওদিকে
সৌমাভ ওর গাড়িতে গোল (সুমিত্র) আর পকাই (অর্ক) কে নিয়ে আসছে কলকাতা থেকে |
- বব মার্লে :
শেষমেষ আমায়
প্রায় ঘন্টা খানেক রোদে দাঁড় করানোর পর তাঁরা এলেন এবং বসন্তের এই অকাল দাবদাহ
থেকে আমায় মুক্তি দিলেন | ঠান্ডা গাড়িতে উঠে ওদের আনা এগ স্যান্ডউইচ আর কোলাঘাট KFC
থেকে কেনা মুর্গির ঠ্যাং চিবাতে চিবাতে একসময় খেয়াল করলাম শহর ছাড়িয়ে গাড়ি ছুটে
চলেছে শুনশান রাস্তা দিয়ে, দু’দিকে হাল্কা জঙ্গল, মাঝে মাঝেই দেখা যাচ্ছে এক দুটো করে
পলাশ গাছ | এমতাবস্থায় আমায় এক প্রকার বাধ্য হয়েই বব মার্লের শরণাপন্ন হতে হলো |
![]() |
- বাঁদরভোলা :
রাস্তায়
একটা খুব ভালো গল্প শুনলাম | সৌমাভ শোনালো ‘এক বাঘ আর এক শিকারী’র গল্প | গল্পটা
ট্র্যাজিকমেডির এক অনন্য নিদর্শন | গল্পে এক কঠিন যন্ত্রণার কথা আছে, কিন্তু গল্পের
মূল ভাব দমফাটা হাসির | সৌমাভ ইমোশনাল হয়ে এটাও বলে দিল, “এটা কিন্তু সত্যি ঘটনা |
এই ঝাড়গ্রামেই ঘটেছিল এটা | ”
এই সব নানা গল্পগুজবের
মধ্যে দুপুর দেড়টা নাগাদ আমাদের গাড়ি এসে পৌঁছালো ঝাড়গ্রাম WBFDC এর গেস্ট হাউসের
সামনে | জায়গাটার নাম বাঁদরভোলা | শাল জঙ্গলের পেট চিরে চলে গিয়েছে নির্জন রাস্তা
– তারই একপাশে লোকবর্জিত জায়গায় অবস্থিত এই গেস্ট হাউস | চারদিকেই শালের জঙ্গল | লোকেশনের
একটাই খামতি - রাস্তা থেকে দুরত্বটা কম, গাড়িঘোড়া চোখে আর কানে দুটোতেই আসে; ফলে 'বিশুদ্ধ প্রকৃতি' ব্যাপারটা পুরোপুরি নেই |
· সাবধানী পকাই এবং গ্র্যান্ডসাফাই :
ঠিক করা হলো
আমি, সৌমাভ একটা ঘরে থাকবো আর অন্য ঘরে বাকি দু’জন | আমাদের ঘরের নাম সুবর্ণরেখা-১
| ওদের দুলুং-২ | সেইমতন আমরা ঘরে ঢুকে বেশ খানিকক্ষণ সময় নিয়ে ফ্রেশ হলাম | তারপর
বাইরে বেরিয়ে দেখি গোল মুখ কালো করে ওদের ঘরের বাইরে বসে আছে | জিজ্ঞাসা করে
বুঝলাম ভিতরে পকাই রুম স্যানিটাইজ করছে গত চল্লিশ মিনিট ধরে - স্যাভলন স্প্রের একটা
গোটা শিশি উড়িয়ে | সেই স্কুল থেকেই দেখে আসছি – পকাইটা মারাত্মক সাবধানী | স্কুলে পড়াকালীন
ওর একটা নিক-নেম ছিল – “পকাই শুয়োর ম্যাও” | যতদুর জানি আমাদের এক বন্ধুর বাবা অর্ক কে ‘পকাই’
নামে অভিহিত করেছিলেন কোনো এক অজানা কারণে | তারপর ছেলেপুলের দল সেই নামের সাথে
দুটো জন্তুর নামযোগ করে দেয় !
খানিক পরে পকাই
রুম থেকে বেরোলে আমরা বললাম, “আমাদের রুমটাও একটু স্যানিটাইজ করে দে” | সাবধানী লোকটা
আমাদের রুমে ঢুকে মাত্র সাত-আটবার ফুসফুস আওয়াজ করে ঠিক দেড় মিনিটের মধ্যে বেরিয়ে
এলো !
চরম বেইজ্জতি
আমার আর সৌমাভর !
·
গন্তব্যহীন যাত্রা :
পশ্চিমবঙ্গ
সরকারের প্রায় সমস্ত গেস্ট হাউসের মতনই ঝাড়গ্রামের গেস্ট হাউসও মোটামুটি নির্জন
স্থানে অবস্থিত | বাজারহাট বেশ খানিকটা দূরে | তাই এখানকার নিয়ম হলো – অন্ততঃ পাঁচ
ছয় ঘন্টা আগে জানিয়ে দিতে হয় কী খাবেন | সেইমতন আমাদের জন্য লাঞ্চ টেবিলে অপেক্ষা
করছিল ভাত, মুগের ডাল, ভাজা, রুইমাছের পাতলা ঝাল আর মুর্গির ঝোল | রান্না বেশ ভালো
| খেয়েদেয়ে আমরা রুমে গিয়ে আধাঘন্টা বিশ্রাম নিয়েই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম |
আমাদের এবারের
যাত্রায় কোনো গন্তব্য নেই | ঠিক করা হলো সন্ধ্যা নামার ঠিক আগে পর্যন্ত গাড়ি চলবে
সামনের দিকে, তারপর গাড়ির মুখ ঘোরানো হবে | ধানক্ষেত, গ্রাম, শালের জঙ্গলকে পাশে
রেখে আমাদের গাড়ি ছুটতে লাগলো | মাঝে দু’বার গাড়ি থামিয়ে কিছু ফটোশ্যুটও হলো | সন্ধ্যা
নামার মুখে গাড়ি ঘোরানো হলো | মাঝে একটা বাজার থেকে দু’কেজি মুর্গির মাংস কিনে
নিলাম | গেস্ট হাউসে ফিরে বলা হলো অর্ধেক মাংস কষা বানিয়ে ঘরে দিয়ে যেতে আর বাকিটা
ডিনারে ঝোল বানিয়ে সার্ভ করতে |
ছবির বাঁ দিক
থেকে: পকাই, আমি, গোল, সৌমাভ
- নির্ভেজাল আড্ডা :
যে কোনো
ট্যুরের আসল মজা হলো সান্ধ্যকালীন মজলিস | এই সব আড্ডার মধ্যেই ভ্রমণের
অন্তর্নিহিত সত্তা লুকিয়ে থাকে |
সকালের সেই
হাঁসের ডিম পড়েই ছিল ব্যাগে, কেউ আসার সময় একটাও খায়নি | সাথে রয়েছে সকালের বেঁচে
যাওয়া স্যান্ডউইচ | একটু পরে কেজি খানেক কষা মাংসও চলে এলো | আমরা জল ও বায়ুপথে
বিচরণ করতে করতে সেসব স্থলজ জিনিসের সদ্ব্যবহার করতে শুরু করলাম |
আমাদের সেই
ছোটবেলার দিনগুলো ফিরে এলো যেন ! নরেন্দ্রপুর মিশনের দিনগুলোর নানা স্মৃতিচারণের পাশাপাশি
বর্তমান জীবনের নানা মজাদার অভিজ্ঞতা, গান-সিনেমা নিয়ে আলোচনা, ভূত-প্রেতের নানা
ঘটনা – সব মিশিয়ে এক গল্পসূত্র তৈরী হলো | শীতাতপ যন্ত্রটায় ঘরের উষ্ণতা আরো
খানিকটা কমিয়ে দেওয়া হলো | টিউবলাইট নিভিয়ে নাইটল্যাম্প জ্বালানো হলো | গোলের আনা
ব্লু-টুথ স্পিকারে হাল্কা ভল্যুমে গান চলছে | জগজিত সিং গাইছেন – “তুম ইতনা জো
মুস্কুরা রহে হো.............”
এই তো জীবন !
- দোলনা-চড়া :
রাত দশটা
নাগাদ ঘরেই ডিনার দিয়ে গেল | রুটি, তরকারী আর মাংসের ঝোল | এবারের রান্নাটা মোটামুটি
হয়েছে, দুপুরের মতন অতো ভালো নয় |
গেস্ট হাউসে
চত্বরেই বাচ্চাদের জন্যে একটা পার্কের মতন আছে | দোলনা, স্লিপ ইত্যাদি | আলো দেওয়া
আছে | আমরা ডিনারের পর ওখানে গেলাম | দুটো দোলনায় দু’জন করে বসে আধাঘন্টাখানেক দোল
খেলাম | আমরা সবাই তখন হাল্কা ইউফোরিয়া স্টেজে রয়েছি | চারদিকে শালের জঙ্গলে হাওয়া
বয়ে যাওয়ার সোঁ সোঁ শব্দ আর সেই সাথে অনবরত পাতা ঝরার আওয়াজের অদ্ভুত কোলাজ |
আবহাওয়াও অতি মনোরম |
বসন্ত !
7 ই মার্চ,
2021, শনিবার
· ভ্যাক্সিনে গোল(মাল) :
সাতসকালে আমাদের
রুমে পকাই এসে মুখ গম্ভীর করে বললো “এই গোল না একটা কেস খেয়ে গেছে” | আমরা কিছু
বোঝার আগেই গোল বারো চাকার পাঞ্জাব লরির মতো বাঁক নিয়ে আমাদের ঘরে ঢুকে বিষন্নবদনে
বললো, “আমি একটা বিশাল বড় কেস খেয়ে গেছি | ভোটের ডিউটির জন্য করোনার ভ্যাকসিন
নেওয়ার ডেট পড়েছে আমার আগামীকাল | তোরা কাল ট্যুর প্ল্যান অনুযায়ী ফিরিস, আমি ভোরে
উঠে কলকাতার বাস ধরে চলে যাবো |”
এর পরের আধঘন্টা
ধরে গোলকে কাউন্সেলিং করা হলো এই বলে যে ভ্যাক্সিন না নিলে কোনো চাপ আসবে না, চিঠি
খেতে হয় শুধু ভোটের ডিউটি না করলে | তাছাড়া এখনো অনেক দিন সময় আছে ভোট আসতে, তার আগে
কোনো জায়গা থেকে ভ্যাক্সিন নিয়ে নিলেই হবে | শেষমেষ কাজ হলো – গোলের দুশ্চিন্তা
দূর হলো |
- ঝাড়গ্রাম রামকৃষ্ণ মিশন :
ঝাড়গ্রাম বনবাংলোর
একটা অংশ পশ্চিমবঙ্গ সরকার ছেড়ে দিয়েছে রামকৃষ্ণ মিশনকে | তবে এটা অস্থায়ী
বন্দোবস্ত | রাস্তার অন্যদিকে খানিকটা দূরে রামকৃষ্ণ মিশনের নতুন ক্যাম্পাস তৈরী
হচ্ছে , সেই কাজ শেষ হবার আগে পর্যন্ত ঝাড়গ্রাম রামকৃষ্ণ মিশনের আপাতঃ ঠিকানা এই
WBFDC গেস্ট হাউস |
ব্রেকফাস্টের
আগে আমরা হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম মিশনের দিকে | সেখানে দেখা হলো নরেন্দ্রপুরে আমাদের
পরিচিত এক সন্নাসীর সাথে – স্বামী অলকেশানন্দ / বিশ্বনাথ মহারাজের সাথে | বিশ্বনাথদা বললেন দু’দিন আগে
নাকি গেস্ট হাউসের পিছনের জঙ্গল দিয়ে একদল হাতি চলে গিয়েছে |
- চিল্কিগড় রাজবাড়ি :
ব্রেকফাস্ট
করে আমরা বেরিয়ে পড়লাম বেলপাহাড়ির উদ্দেশ্যে | সৌমাভ খুব অর্গানাইজড লোক, ও গত
একমাস ধরে ঝাড়গ্রাম ও বেলপাহাড়ি নিয়ে বিস্তর রিসার্চ করেছে | সেই অনুযায়ী ঠিক
হয়েছে আমরা আজ যাব – ঘাঘরা ফলস, কেতকী লেক, খাঁদারানী লেক আর গড়রাসিনী হিলস | রাস্তায়
পড়ল চিল্কিগড় রাজবাড়ি | গাড়ি থামিয়ে আধঘন্টা
ঘুরে দেখে নিলাম | ভালোই লাগলো | এমনিতেই ঐতিহাসিক স্থান আমার খুব ভালোলাগে |
- ঘাঘরা ফলস :
ঘাঘরা ফলসে
বর্ষাকালে নিশ্চয়ই জল হয় অনেক, কিন্তু এই বসন্তকালে সেখানে ঝর্না জাতীয় কোনো জিনিস
নেই | পাথুরে টিলার মধ্যে দিয়ে কুলকুল করে নালার মতন সরু স্রোত বয়ে চলেছে |
জায়গাটা ভারী নির্জন আর চারদিকে জঙ্গল | গরম একটু কম থাকলে এখানে অনেকটা সময়
কাটানো যেত | শীতকালে পিকনিকের জন্য আদর্শ জায়গা | আমরা এখানে আধঘন্টা খানেক থেকে
আবার রওনা দিলাম |
- কাঁচালঙ্কা :
বেলপাহাড়ি
বাজারে আমরা লাঞ্চ করলাম কাঁচালঙ্কা নামের একটা রেস্তোঁরায় | আমরা আগেই খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম যে এখানে ভাত খাওয়ার
সবথেকে ভালো জায়গা এটাই | পরিষ্কার জায়গা, রান্নাবান্নাও মন্দ নয় | এরপর যে জায়গাগুলোয়
যাব সেখানে দূর-দূরান্তে কোনো খাওয়ার জায়গা নেই | পেট ভরে খেয়েদেয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম
কেতকি লেকের উদ্দেশ্যে |
- কেতকি লেক :
আমাদের দেখা
বেলপাহাড়ির সেরা জায়গা হলো কেতকি লেক | পাহাড়ের পটভূমিকায় বেশ বড় লেক | আমরা গিয়ে
দেখলাম স্থানীয় অনেক লোকজন সেখানে স্নান করছে | পাহাড়ের পাদদেশে বেশ ঘন জঙ্গল |
সেই জঙ্গলের একদম সীমানায় আমরা কাগজ বিছিয়ে বসলাম, লেকের দিকে মুখ করে | বাইরে কড়া রোদ হলেও
আমরা বসেছি গাছের ছায়ায় | বেশ জোরে হওয়া দিচ্ছে, আর সেই ক্রমাগত গাছের পাতাঝরার আওয়াজ
| একেবারে আবগারি পরিবেশ |
আমরা আগে
থেকেই মনস্থির করে রেখেছিলাম যে লেকের জলে নামবো | সেই মতন আমি, সৌমাভ আর গোল জলে
নেমে প্রায় ঘন্টাখানেক জলকেলি করলাম | সাবধানী পকাই কিন্তু আমাদের বহু অনুরোধ
সত্ত্বেও জলে নামেনি |
- গড়রাসিনী হিলস :
ট্যুরের এই
পার্টটায় আমাদের তিনজনের তেমন সায় ছিল না, শুধু সৌমাভ মাসখানেক পর সান্দাকফু
ট্রেকিং যাবে বলে এটা ভ্রমণসূচীতে রেখেছিল, ডেমো হিসাবে | ছোট পাহাড় , মিনিট কুড়ি
ট্রেক করলে মাঝামঝি জায়গায় একটা মন্দির আছে, চারদিকে খানিকটা সমতল জায়গা, সেখানে
পৌছানো যায় | এখান অব্দি পৌছেই আমার দম শেষ হয়ে যায় | বাকিরা বাকি অংশটা যাবে বলে
আমাকে ওখানে রেখে এগিয়ে যায় | একেবারে উপরে একটা শিব মন্দির আর ভিউ-পয়েন্ট আছে | পরে ওরা ফিরে এলে শুনি গোল কিছুটা এগিয়েই হাল ছেড়ে দিয়েছিল,
সৌমাভ আর পকাই শেষ অব্দি পৌছেছিল |
ফিরে আসার
সময় সৌমাভর মুখে তৃপ্তির হাসি | কিন্তু পকাইটা দেখলাম কিরকম থম মেরে গেছে - সম্ভবতঃ
খুব কষ্ট হয়ে গেছে পাহাত চড়ে | আসার পথে গাড়িতে বসেও কিরকম মুখ বাঁকিয়ে চুপ করে
বসে রইলো |
- সূর্যমুখী ক্ষেত :
ফেরার পথে,
তখনও সন্ধ্যা নামেনি, হঠাত গোল খেয়াল করলো রাস্তার ধরে একটা সূর্যমুখী ফুলের ক্ষেত
| আমরা গাড়ি থেকে নেমে খানিকক্ষণ ওখানে কাটিয়ে ফের গাড়িতে উঠলাম |
আমাদের আর খাঁদারানী
লেক যাওয়া হলো না কিন্তু তাতে আমাদের কোনো আক্ষেপ নেই | আমরা কোনো লিস্টে টিক
মারার জন্য ঘুরতে আসি নি, ধীরেসুস্থে যেটুকু হয় সেটুকু উপভোগ করে ঘুরতে ভালোবাসি
আমরা |
·
সন্ধ্যা ও রাত :
গেস্ট হাউসে
ফিরে আজ সন্ধ্যাতেও সেই কালকের মতন মজলিস বসলো | গতকালের আড্ডা আমাদের রুমে
হয়েছিল, তাই আজ আড্ডা হলো গোলদের রুমে | তারপর রাতের ডিনার সেরে আবার সেই পার্কে
গিয়ে খানিক দোল খেলাম | আজ আমার খুব ইচ্ছা হচ্ছিল সবাই মিলে বাইরের শালের জঙ্গলে
নৈশকালীন ভ্রমণের, কিন্তু মুস্কিল হলো গেস্ট হাউসের গেট রাত দশটায় বন্ধ হয়ে যায় |
অবশ্য সেটা যদি নাও হতো, সাবধানী পকাইয়ের আপত্তিতে আমাদের এই রাতে জঙ্গলে যাওয়া
হতো না কিছুতেই |
9 ই মার্চ,
2021, সোমবার
·
সকাল :
আজ আমাদের
বাড়ি ফেরার দিন | সকাল দশটা হলো চেক আউট টাইম | আমরা সকাল সকাল উঠে গেস্ট হাউস চত্বরটা
একটু ঘুরে বেড়ালাম | মাটিতে শালপাতা পড়ে পুরু আস্তরণ হয়ে গেছে, আমরা তার উপর দিয়ে
খচমচ শব্দে হেঁটে বেড়ালাম খানিকক্ষণ | সকালের দিকটায় এখানে খুব মনোরম পরিবেশ |
ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে আর সেই অনবরতঃ শালপাতা ঝরে চলেছে | এই সময়টায় সারাদিন ধরেই
খুব জোরে হাওয়া বয় আর সেই হাওয়ায় শুকনো পাতা ঝরতে থাকে |
·
পরের ট্যুরের জন্য রেইকি :
ব্রেকফাস্ট
করে আমরা চেক আউট করলাম | আজ বাড়ি ফেরার আগে আমাদের প্ল্যান হলো এই ঝাড়গ্রাম জেলায়
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বনদপ্তরের আর যে দুটো গেস্ট হাউস আছে সেগুলো একটু দেখে নেওয়া, পছন্দ
হলে আমাদের বন্ধুদের পরবর্তী ট্যুর সেখানেই হবে |
সেই অনুযায়ী
আমরা প্রথমে গেলাম লোধাশূলি প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্রে | বলা ভালো এই জায়গাটা আমাদের
একেবারেই ভালো লাগে নি | একদম শহরের মধ্যেই বলা যায় এই গেস্ট হাউস, যদিও গেস্ট
হাউস ও তার আশেপাশের খানিকটা জায়গা নির্জন | গেস্ট হাউসের পাশেই সরকারী কাঠগুদাম |
সবমিলিয়ে বেড়ানোর একেবারেই উপযুক্ত পরিবেশ নয় |
এরপর আমরা
গেলাম হাতিবাড়ি প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্রে | এটা গোপিবল্লভপুর থেকে খুব কাছে | এই
জায়গাটা আমাদের খুব ভালো লেগেছে | জনপদ থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন জায়গায়, শাল
জঙ্গলের মাঝে, সুবর্ণরেখা নদীর ধারে অবস্থিত এই গেস্ট হাউস | যারা নিরিবিলি জায়গায়
প্রকৃতির মাঝে বেড়ানো পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য এটা একেবারে উপযুক্ত পরিবেশ | তবে
এখান থেকে বেলপাহাড়ি বেশ অনেকটাই দূরে | আমরা ঠিক করলাম পরের শীতকালে বা বসন্তের
শুরুতে এখানে ঘুরতে আসবো |
·
গরম গরম
হাতিবাড়ি
ট্যুরিস্ট লজ থেকে ফেরার পথে আমরা গোপীবল্লভপুরে একটা ধাবায় লাঞ্চ সারলাম | ধাবার
নাম গরম গরম | রান্না ভালোই এখানকার |
·
বাড়ি ফেরা :
অবশেষে শাল-পিয়াল-পলাশের
জঙ্গলকে পিছনে ফেলে আমাদের গাড়ি ছুটতে লাগলো নগরকেন্দ্রিক সভ্যতার দিকে | মাঝেমাঝে
মনে হয় অনেক পয়সা থাকলে এসব চাকরিবাকরি ছেড়ে এরকম কোনো এক জঙ্গলের মাঝে বা পাহাড়ে একটা
ঘর বানিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দিতাম | কিন্তু পরক্ষনেই মনে হয়, এখন যেরকম আছি সেটাই
ভালো | সাদাকালো জীবনে একঘেঁয়ে লাগলে দিন কয়েকের জন্য সবুজের মাঝে চলে যাব | নয়তো একটানা
ভালো জিনিসও একসময় অসহ্য হয়ে ওঠে |
বিকেল চারটে
নাগাদ আমার ডেবরায় ছেড়ে দিয়ে ওরা বেরিয়ে গেল |
------------------------------
বালিচক, 12-05-2021
Asche bochor abar hobe / Bochor Bochor egiye jabe
ReplyDelete