Skip to main content

জনমেজয়-বৈশ্যম্পায়ন সংবাদ : পর্ব ৩: ভেজ বিরিয়ানি



 
জনমেজয় কহিলেন, “হে মহর্ষে, ‘ভারতীয় ক্রিকেট ফ্যান’ এবং ‘স্মার্টফোন ও সেল্ফি’ – এই দুই বিষয়ে আপনার সবিস্তার বর্ণনা শ্রবণ করিয়া আমাদের কর্ণযুগল ধন্য হইয়াছে | এক্ষণে আপনাকে আরেকটি অনুরোধ করিব | শুনিয়াছিে কলিযুগে ভারতবর্ষে ‘ভেজ বিরিয়ানি’ নামক নামক এক প্রকার অখাদ্যের প্রচলন হইবে | ইহা কী প্রকার বস্তু হইবে এবং মনুষ্যজীবনে ইহার প্রভাব কীরূপ হইবে তাহা শুনিতে বড় কৌতুহল জন্মিতেছে | আপনি অনুগ্রহ করিয়া সবিস্তারে বর্ণন করুন |”

বৈশম্পায়ন কহিলেন, “হে রাজন, কলিযুগে ভারতবর্ষে মন্দবুদ্ধি মনুষ্যগণ বহুবিধ অখাদ্য নির্দ্বিধায় ভক্ষণ করিবে, ‘ভেজ বিরিয়ানি’ উক্ত অখাদ্যসমূহের তালিকায় শীর্ষ স্থান অধিকার করিবে | ‘ভেজ বিরিয়ানি’ নামটিতে ‘বিরিয়ানি’ শব্দটি থাকিলেও উহা আদৌ বিরিয়ানি হইবে না | কলিযুগে স্কুল-কলেজে ইংরাজি ক্লাসে ‘veg biriyani ’শব্দযুগলকে ‘oxymoron’-য়ের সর্বশেষ্ঠ উদাহরণ হিসাবে বর্ণনা করা হইবে | ভেজ বিরিয়ানি এক আজব বস্তু ; সাদা ভাতের সারল্য, বিরিয়ানির রাজকীয়তা, খিচুড়ির তৃপ্তি, ফ্রায়েড রাইসের বিদেশিয়ানা, কিম্বা পোলাওয়ের নিজস্বতা – কিছুই উহাতে থাকিবে না |

হে রাজন, বাঙালীর সহিত মৎস্যের যেরূপ সম্বন্ধ, বিহারীর সহিত গুটখার যেরূপ সম্বন্ধ, মাড়োয়ারীর সহিত আচারের যেরূপ সম্পর্ক – বিরিয়ানির সহিত মাংসের সেইরূপ সম্বন্ধ – জন্মজন্মান্তরের | মাংসহীন বিরিয়ানি এক প্রহসন মাত্র | সিটি গোল্ডের গহনা পরিধান করিয়া স্বর্ণালংকারের অহঙ্কার এবং ভেজ বিরিয়ানি হজম করিয়া বিরিয়ানি-সুলভ তৃপ্তির ঢেঁকুর নির্গমন – উভয়েই সমগোত্রের গর্হিত কাজ |

হে নরশ্রেষ্ঠ, ভেজ বিরিয়ানি প্রস্তুত করিবার সময়ে নিরামিষাশী মনুষ্যগণ তাহাদের সর্বপ্রকার অস্ত্র, যথা – পনীর, আলু, মটর এবং মাশরুম নিক্ষেপ করিবে | এই গর্হিত কার্য করিয়াও তাহারা ক্ষান্ত হইবে না, উপরন্তু নির্দ্বিধায় কাজু, কিসমিস, কারিপাতা, সোয়াবিন ইত্যাদি উহাতে যোগ করিবে | সব মিলাইয়া এক যন্ত্রণার জগাখিচুড়ি প্রস্তুত হইবে যা নিরামিষাশী মনুষ্যের দল মহানন্দে ভক্ষণ করিবে এবং ‘বিরিয়ানি খাইতেছি’ মনে করিয়া পরমানন্দ লাভ করিবে | উহাদের বুদ্ধিহীনতার নিদর্শন দেখিয়া মনুষ্যেতর প্রাণীরা পর্যন্ত মনে মনে হাস্য করিবে |

হে মহারাজ, কলিযুগে মনুষ্যগণ বহুবিধ দুঃখ-দুর্দশা ভোগ করিবে | যন্ত্রণা সহ্য করিতে না পারিয়া বহু মানুষ আত্মঘাতী হইবে | আমিষাশী মনুষ্যগণের একটি জনপ্রিয় আত্মহত্যার পদ্ধতি হইবে এই ‘ভেজ বিরিয়ানি’ ভক্ষণ, কারণ উক্ত অখাদ্যটি 'পটাসিয়াম সায়ানাইড' অপেক্ষা অধিক হানিকারক হইবে |

হে রাজন, ভেজ বিরিয়ানি কোনোরূপ দৃষ্টিভঙ্গি হইতেই বিরিয়ানি নয়, উহা ‘বিরিয়ানি সমাজে’র অপমান মাত্র | উহা ভক্ষণ অপেক্ষা অনাহারে প্রাণ বিসর্জন করা অধিকতর শ্রেয় | ”

জনমেজয় কহিলেন, “হে মুনিপুঙ্গব ! আপনি অন্য প্রসঙ্গ আরম্ভ করুন |”

---------------------------------------------------------------------------------
পুনশ্চঃ - ‘ভারতীয় ক্রিকেট ফ্যান’ এবং ‘স্মার্টফোন ও সেল্ফি’ সংক্রান্ত পর্ব দুটি পড়িতে হলে নিচের লিঙ্কদ্বয়ে ক্লিক করিবেন –
__________________________________________________
© অর্ঘ্য দাস @ টুকটাক লেখালেখি , দুর্গানগর, 08-07-2017


Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ৩ - ঘন্টা, আলু এবং ব্রহ্ম

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ছাত্রদের দৈনন্দিন আবাসিক জীবনকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছে এই ছোট্ট ছড়াটা - “ নরেন্দ্রপুরে সময় ঘন্টাময় , খাদ্য আলুময় , চিন্তা ব্রহ্মময়  | ” অনেকদিন আগে শোনা এই ছড়ার রচয়িতার নাম আমার জানা নেই , কিন্তু ছড়াটা এতটাই প্রাসঙ্গিক যে এটা আমার মনের মধ্যে যেন গেঁথে গেছে  | ************************************************************ প্রথম ভাগ : ঘন্টা বাস্তবিকই আমাদের আবাসিক জীবন ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  |   ভোর পাঁচটায় rising bell শুনে ঘুম ভাঙতো , তারপর ঘন্টার তালে তালে সেই যে লেজ তুলে দৌড় শুরু হত , সেটা থামত রাত সাড়ে দশটা নাগাদ , ‘lights out’ এর ঘন্টাধ্বনি শুনে  |   চার বেলা ডাইনিং হলে খেতে যাওয়ার ঘন্টা , প্রার্থনা কক্ষে যাবার ঘন্টা , স্কুলে যাবার ঘন্টা , হোস্টেলে পড়া শুরু করার ঘন্টা , খেলতে যাবার ঘন্টা , রাত্রে শুতে যাবার ঘন্টা – আমাদের প্রতিটা কাজ ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  | প্রতিদিন এই সময়ে-অসময়ে ঘন্টা বাজানোর জন্য প্রত্যেক ভবনে (হস্টেলে) প্রতি মাসে দু’জন ছাত্রকে নিয়োগ করা হতো , এদের বলা হতো ‘...