Skip to main content

মাত্র




লোককে বুদ্ধু বানিয়ে কোনো জিনিস গছাতে 'মাত্র' শব্দটি অতি গুরুত্বপূর্ণ | যেমন -

1) ট্রেনে হকার জিনিস দেখিয়ে, তার গুণাগুণ বর্ণনা করে শেষে সবসময়েই যোগ করেন, "দাদাভাই / দিদিভাই, এই জিনিসটির দাম কুড়ি টাকা | কিন্তু কোম্পানি আজকের এই বিশেষ দিনে প্রচারস্বার্থে এই ট্রেন কম্পার্টমেন্টে এই জিনিসের দাম ধার্য করেছে 'মাত্র' দশ টাকা |

2) গ্রামে-মফঃস্বলে নানা ভ্যানে হরেকরকমের জিনিস নিয়ে দোকানদার ঘুরে বেড়ান | ভ্যানের সাথে মাইক লাগানো থাকে, যেখানে কোনো এক কাল্পনিক দম্পতির কথোপকথন বাজতে থাকে | স্বামী অতি নাটকীয় ভঙ্গিতে বলেন, "জানো, আমাদের দুর্গানগরের অমুক প্রচার গাড়িতে সোনার হরিণ 'মাত্র' দশ টাকায় পাওয়া যায় |" সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রী অতি মোলায়েম এবং ততোধিক মিহি গলায়, একরাশ বিস্ময় ঝরিয়ে, প্রায় গানের সুরে বলে ওঠেন, "ওমা !! সোনার হরিণ !!! তাও 'মাত্র' দশ টাকায় | চল, আমরা এখুনি গিয়ে প্রচার গাড়ি থেকে জিনিসটা সংগ্রহ করে আনি |"

3) এ তো গেল চুনোপুঁটিদের কথা | 'কর্পোরেট জায়ান্ট'রা আরেক কাঠি উপরে | কোনো এক গাড়ী বিক্রেতা সংস্থার বিজ্ঞাপনে দেখা যায় যে কোনো এক ভদ্রলোক সকালে বাজার করতে বেরিয়ে দেখছেন গাড়ির দাম মারাত্মক, ভীষণ, চরম, দুর্বিসহ কমে গেছে | অগত্যা এক রকম বাধ্য হয়েই তিনি সেই কম-দামী গাড়ী কিনে বাড়ি ফিরছেন | বাড়ির গিন্নিও চমকে যাচ্ছেন, কিন্তু যেই শুনছেন যে 'মাত্র' এই দামে গাড়ী পাওয়া যাচ্ছে তখন তিনিও উচ্ছ্বসিত হচ্ছেন |

অনেক আলতু-ফালতু বকেছি | এবার কাজের কথায় আসি | যে জন্য এই 'মাত্র' শব্দের উপর লিখতে শুরু করলাম সেই ঘটনা বলি |

অফিস-ফেরত আমি আজ দুর্গানগরে ট্রেন থেকে নেমে এগারো নম্বর বাসে বাড়ি ফিরছি, এমন সময়ে এখানকার 'দুর্গানগর স্পোর্টিং ক্লাবের' এক প্রচার কানে এলো | তারা কোনো এক মেম্বারের স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি লটারির আয়োজন করেছে, এই মাইক বাজিয়ে প্রচার তারই অঙ্গ | যাইহোক, প্রচারের বক্তব্য এরকম -

".আমাদের ক্লাব অমুকের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এক বিশাল লটারি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা করেছে | প্রতি টিকিটের মূল্য 'মাত্র' উনিশ পয়সা |"

এত অব্দি শুনে আমি ভাবছি এত কম দাম যখন, খান দশেক টিকিট দু'টাকায় কিনে বাড়ি যাই | একটায় কিছু না কিছু তো লাগবেই ! এমন সময়ে পরের লাইনের আবির্ভাব -
" এবং অনুদান উনপঞ্চাশ টাকা একাশি পয়সা | সব মিলিয়ে 'মাত্র' পঞ্চাশ টাকা |"

____________________________________________
© অর্ঘ্য দাস @ টুকটাক লেখালেখি , দুর্গানগর, 27-07-2017


Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...
  ঝাড়গ্রাম : বসন্ত ১৪২৭ স্কুল পাশ করেছি সতেরো বছর হয়ে গেল | তারপর এই প্রথম আমার সুযোগ হলো স্কুলের বন্ধুদের সাথে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার | দু তিনটে জায়গা মাথায় ছিল – ঘাটশিলা , ঝাড়গ্রাম, অযোধ্যা পাহাড় | এই বসন্তের শুরুতে তিনটে জায়গাই মনোরম | শেষমেষ ঝাড়গ্রাম WBFDC এর গেস্ট হাউসের ছবি দেখে সেটাই ফাইনাল করা হলো | 6 ই মার্চ, 2021, শনিবার          ডিমসেদ্ধ : সকাল সাড়ে দশটা - ক্যালেন্ডারে মার্চের শুরু হলেও বেজায় গরম. আমি দরদর করে ঘামছি ডেবরা চৌমাথায় (পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) দাঁড়িয়ে, হাতে আমার একুশটা হাঁসের ডিম সেদ্ধ, সাথে পেঁয়াজ লঙ্কা কুচি এবং সাদা ও কালো নুন | এক সপ্তাহ আগে করা প্ল্যান অনুযায়ী আমরা নাকি আগামী দু’ ঘন্টায় গাড়িতে বসে পার হেড পাঁচটা করে হাঁসের ডিম খাবো | ওদিকে সৌমাভ ওর গাড়িতে গোল (সুমিত্র) আর পকাই (অর্ক) কে নিয়ে আসছে কলকাতা থেকে |          বব মার্লে : শেষমেষ আমায় প্রায় ঘন্টা খানেক রোদে দাঁড় করানোর পর তাঁরা এলেন এবং বসন্তের এই অকাল দাবদাহ থেকে আমায় মুক্তি দিলেন | ঠান্ডা গাড়িতে উঠে ওদের আনা এগ স্যান্ডউইচ আর কোলাঘাট KFC থেকে কেনা মুর...