Skip to main content

বাঙালীর আর্থিক দুর্দশার কারণ





কিছু ব্যতিক্রমকে হিসাবের মধ্যে রেখেই বলা যায়, গড়ে বাঙালিদের তুলনায় অবাঙ্গালী ভারতীয়রা বেশি ধনী হয় | উত্তর, মধ্য কিম্বা দক্ষিণ ভারতে গেলে ব্যাপারটা বোঝা যায় | ওখানে প্রতি বাড়িতে একাধিক গাড়ী, বিয়েতে তাল তাল সোনা চালাচালি ইত্যাদি | ওদিকে যদি কিছুদিন বসবাস করে আসেন তাহলে আরো ভালো করে বুঝবেন ব্যাপারটা | প্রত্যেকেরই বিশাল ব্যাঙ্কব্যালেন্স, ব্যাঙ্কের লকারে প্রচুর সোনা, কারোর চার-পাঁচ জায়গায় জমি-বাড়ি ইত্যাদি |

এত কিছুর মূল কারণ কী বলুন তো !!

কিছুই না, নিরামিষ আহার !!

গড়ে শতকরা 90 জন বাঙালী হল আমিষাশী | আমাদের এখানে মাটন কেজি 500 টাকা, চিকেন 180 টাকা কেজি | এক কেজি মাংস কিনলে পাঁচ বা ছয় জনের একবার খাওয়া হবে | [ ভালো মাছের (ইলিশ, চিতল, চিংড়ি, কই etc.) দাম আরো বেশি, সেই গল্পে আর গেলাম না ] যাইহোক, অন্যদিকে পনীর কেজি 200-300 টাকা, এক কেজি পনীরে 15-20 জনের খাওয়া হয়ে যাবে | পনীর তো ওদের প্রধান হাতিয়ার, তাছাড়া আলু, মাশরুম আর ভূট্টা | ওগুলো দিয়েই ওরা permutation আর combination করে | আমিষাশী বাঙালীর এক রোববারের বাজারের খরচে যে কোনো নিরামিষাশীর চার রোববারের বাজার হয়ে যাবে |

তাছাড়া আমিষাশী লোক তো বাকি দিনে মাছ-ডিমের পাশাপাশি নিরামিষও খাচ্ছে | যেমন সপ্তাহে একদিন যারা নিরামিষ খান তারা ওই দিনে পনীর বা ধোকার ডালনা বা কাঁচকলার কোফতা বা অন্য কোনো হাবিজাবি নিরামিষ খেয়ে থাকেন; অন্যদিনেও ডাল, নিরামিষ সব্জি, পোস্ত ইত্যাদি থাকে | ফলে নিরামিষাশীর সমস্ত খরচ আমিষাশীর হয়, তার সঙ্গে আমিষের জন্য অতিরিক্ত আরো প্রচুর খরচ হয় |

শাকাহারীদের খাদ্য-বিলাসিতা বলতে 'ভেজ-বিরিয়ানি' | যা ওরা মাঝেমাঝেই বাড়িতে বানায় | এক প্লেট ওই অখাদ্য বানাতে গড়ে দশ-কুড়ি টাকা লাগে | আর আমাদের চিকেন /মাটন বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছা হলে আরসালান-সিরাজ-আমিনিয়া-দাদা বৌদির হোটেল বা অন্যান্য দোকানে গিয়ে প্লেট-প্রতি 150-200 টাকা খসাতে হয় | বাড়িতে ঠিকঠাক করে ও জিনিস রান্না করতেও যথেষ্ট খরচ , আমি একবার করে দেখেছি |

এরপর আসা যাক বিয়ে-শাদির অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গে | আমাদের এখানে বিয়েবাড়িতে 400 জন নিমন্ত্রিত হলেও কমপক্ষে 85 কেজি মাটন লাগবে, পাইকারী দরে কিনলেও তাতে অন্ততঃ 35,000 টাকা খরচ আছে | ওই টাকার পনীরে বোধহয় গোটা কলকাতার লোক খাওয়ানো যাবে | আমাদের আমিষাশী বাঙালী সমাজে যে কোনো অনুষ্ঠানে লোক খাওয়াতেই তো ফতুর হয়ে যেতে হয় |

এভাবে নিরামিষ খেয়েই বছরে আড়াই-তিন লাখ টাকার সাশ্রয় করে ফেলে নিরামিষাশীরা, আমাদের তুলনায় | দশ বছরে সাশ্রয় ত্রিশ লাখ, তেত্রিশ বছরে এক কোটি টাকা !!!!!

এবার বলুন, তাহলে ওদের জমি-গাড়ী-বাড়ি-সোনা হবে না তো কাদের হবে !!

বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ : বেচারা বাঙালী নিরামিষাশীরা, তোমরা এই পোস্ট উপেক্ষা কর | এই লেখা মূলতঃ অবাঙ্গালী নিরামিষাশীদের নিয়েই লেখা | তবে নিজেদের সাথে মিল খুঁজে পেলে এই লেখককে নিজগুণে ক্ষমা করে দিও |
__________________________________________
© অর্ঘ্য দাস @ টুকটাক লেখালেখি, দুর্গানগর, 14-06-2017


Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ৩ - ঘন্টা, আলু এবং ব্রহ্ম

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ছাত্রদের দৈনন্দিন আবাসিক জীবনকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছে এই ছোট্ট ছড়াটা - “ নরেন্দ্রপুরে সময় ঘন্টাময় , খাদ্য আলুময় , চিন্তা ব্রহ্মময়  | ” অনেকদিন আগে শোনা এই ছড়ার রচয়িতার নাম আমার জানা নেই , কিন্তু ছড়াটা এতটাই প্রাসঙ্গিক যে এটা আমার মনের মধ্যে যেন গেঁথে গেছে  | ************************************************************ প্রথম ভাগ : ঘন্টা বাস্তবিকই আমাদের আবাসিক জীবন ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  |   ভোর পাঁচটায় rising bell শুনে ঘুম ভাঙতো , তারপর ঘন্টার তালে তালে সেই যে লেজ তুলে দৌড় শুরু হত , সেটা থামত রাত সাড়ে দশটা নাগাদ , ‘lights out’ এর ঘন্টাধ্বনি শুনে  |   চার বেলা ডাইনিং হলে খেতে যাওয়ার ঘন্টা , প্রার্থনা কক্ষে যাবার ঘন্টা , স্কুলে যাবার ঘন্টা , হোস্টেলে পড়া শুরু করার ঘন্টা , খেলতে যাবার ঘন্টা , রাত্রে শুতে যাবার ঘন্টা – আমাদের প্রতিটা কাজ ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  | প্রতিদিন এই সময়ে-অসময়ে ঘন্টা বাজানোর জন্য প্রত্যেক ভবনে (হস্টেলে) প্রতি মাসে দু’জন ছাত্রকে নিয়োগ করা হতো , এদের বলা হতো ‘...