Skip to main content

বাবা ও নেতা



বাবা আর নেতা - আজকাল এদেরই বাজার চারিদিকে | কারণ ধর্ম ও রাজনীতি - এই দুটোই এখন এই দেশের সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা | কোনো investment লাগবে না, কোনো educational qualification চাই না, শুধু লোককে টুপি পরানোর কায়দা জানলেই হবে | তবে ওটাও খুব একটা কঠিন কাজ নয়, জনগণ বেকুব হবার জন্য সদা-প্রস্তুত, আপনাকে শুধু স্টেজে দাঁড়িয়ে মিথ্যা কথাগুলো confidently বলতে হবে |

আসলে অধিকাংশ মানুষের স্বাধীনভাবে চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতাই নেই | অন্যে যা বোঝায় তারা সেটাই বোঝে এবং মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে | এজন্যই এদের বুদ্ধু বানানো এত সোজা | এই প্রসঙ্গে Oscar Wilde একবার বলেছিলেন -

"Most people are other people. Their thoughts are someone else's opinions, their lives a mimicry, their passions a quotation."

[অর্থাৎ অধিকাংশ মানুষই প্রকৃতপক্ষে অন্য মানুষের ছায়ায় রচিত - নকল, নিজস্বতাহীন | তাদের চিন্তাভাবনা অন্যের মতামতের প্রতিলিপি মাত্র, তাদের জীবন অন্যের জীবনের অন্ধ অনুকরণ এবং তাদের আবেগ আসলে অন্যের বক্তব্যের প্রতিফলন মাত্র | ]

এই সদ্য জেলে যাওয়া জালি ধর্মগুরুর কথাই ধরুন | ভক্তরা একটু মাথা খাটালেই বুঝতে পারবে যে প্রকৃত সন্ত কোনদিন অর্থ কিম্বা যশের মোহে আবদ্ধ হতে পারেন না | যে লোকের অত বাড়ি-গাড়ী, যিনি কিনা যশের মোহে একাধিক সিনেমায় নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন - তিনি আর যাই হোন, সাধু-সন্ত তো হতে পারেন না | কিন্তু এই "মাথা খাটানোর কাজ"টাই ভক্তরা করেন না | উঁচু লেবেলের ভক্তরা নীচু লেবেলের ভক্তদের brainwash করেন আর এভাবেই chain system-য়ে মানুষের চিন্তাভাবনার স্বতন্ত্রতা হারাতে থাকে |

অন্যদিকে আমাদের দেশের ভাটবাজ নেতার কথা ধরুন | তিনি ও তাঁর দল জানেন যে জনগনকে একবার "জাতীয়তাবাদ" আর "হিন্দুত্ববাদ" নামের নেশাদুটোয় অভ্যস্ত করে দিতে পারলে আর কোনো চিন্তা নেই | তখন যে কোনো নীতি যেমনই হোক না কেন অন্ধ Bhakt-এর দল সমর্থন করবেই |

যেমন ধরুন নোটবন্দীর (demonetization) কথা | তখন একদিকে মানুষের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো সিয়াচেনে মাইনাস পয়তাল্লিশ ডিগ্রিতে দাঁড়িয়ে থাকা সেনাদের কষ্টের কথা, আরেকদিকে স্বপ্ন দেখানো হল কালোটাকা-জালিটাকা-সন্ত্রাস চিরতরে নির্মূল করে দেবার মিথ্যা স্বপ্ন | জনগণও সেই টোপ গিলেও নিল | তারা নিজে মাথা খাটানোর কোনো প্রয়োজন মনে করলো না, বরং তারা অন্যের বুঝানো এই ভুল ধারণাকেই নিজের মনে ঢুকিয়ে নিল | আজ যখন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দেওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে যে নোটবন্দী করে দেশের ক্ষতিই হয়েছে, তখনও এই bhakt-য়ের দল সেটা বুঝতে চাইবে না - কারণ তাদের স্বাধীনভাবে চিন্তাভাবনার শক্তিই তো চলে গেছে |

সুতরাং দেশের চাকুরিপ্রার্থী তরুনদের প্রতি আমার বার্তা - আপনারা মেডিকাল-ইঞ্জিনিয়ারিং-আইএএস এসব ছাড়ুন এবং ধর্ম ও রাজনীতি - এই দুটো ব্যবসার যে কোনো একটায় নেমে পড়ুন | অভিভাবকদের কাছে অনুরোধ - আপনারা নিজেদের সন্তানের ভালো চাইলে তাদের তালিম দিন যাতে তারা ভবিষ্যতে 'বাবা' বা 'নেতা' হয়ে উঠতে পারে |

জয় হিন্দ !!!


© অর্ঘ্য দাস @ টুকটাক লেখালেখি , দুর্গানগর, 04-09-2017
Top of Form


Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ৩ - ঘন্টা, আলু এবং ব্রহ্ম

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ছাত্রদের দৈনন্দিন আবাসিক জীবনকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছে এই ছোট্ট ছড়াটা - “ নরেন্দ্রপুরে সময় ঘন্টাময় , খাদ্য আলুময় , চিন্তা ব্রহ্মময়  | ” অনেকদিন আগে শোনা এই ছড়ার রচয়িতার নাম আমার জানা নেই , কিন্তু ছড়াটা এতটাই প্রাসঙ্গিক যে এটা আমার মনের মধ্যে যেন গেঁথে গেছে  | ************************************************************ প্রথম ভাগ : ঘন্টা বাস্তবিকই আমাদের আবাসিক জীবন ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  |   ভোর পাঁচটায় rising bell শুনে ঘুম ভাঙতো , তারপর ঘন্টার তালে তালে সেই যে লেজ তুলে দৌড় শুরু হত , সেটা থামত রাত সাড়ে দশটা নাগাদ , ‘lights out’ এর ঘন্টাধ্বনি শুনে  |   চার বেলা ডাইনিং হলে খেতে যাওয়ার ঘন্টা , প্রার্থনা কক্ষে যাবার ঘন্টা , স্কুলে যাবার ঘন্টা , হোস্টেলে পড়া শুরু করার ঘন্টা , খেলতে যাবার ঘন্টা , রাত্রে শুতে যাবার ঘন্টা – আমাদের প্রতিটা কাজ ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  | প্রতিদিন এই সময়ে-অসময়ে ঘন্টা বাজানোর জন্য প্রত্যেক ভবনে (হস্টেলে) প্রতি মাসে দু’জন ছাত্রকে নিয়োগ করা হতো , এদের বলা হতো ‘...