Skip to main content

মহালয়া ও দুর্গাপুজো 2017



                           || মহালয়া ও আমি  ||

আজ মহালয়া শোনা হয়নি (দেখা বহু বছর আগেই ছেড়ে দিয়েছি), আসলে রাত চারটে অবধি সিনেমা দেখেছি | তারপর বাড়িতে মহালয়ার গান লাউড স্পিকারে সেট করে দিয়ে (অবশ্যই আমার ঘরের বাইরে) তোফা ঘুম দিয়েছি |

সকালে উঠলাম দশটায়, উঠেই ভাবছি মহালয়া না শোনার জন্য বাঙালিত্ব হারালাম কিনা !!! আদৌ এই বাঙালী সমাজ আমায় মেনে নেবে তো ??

ঘর থেকে বেরোবামাত্র জানতে পারলাম আজ আমার ছোটমাসীরা আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসছে | রান্না ঘরে গিয়ে ঘুম চোখে মেনু পরিদর্শনে গেলাম, যা বুঝলাম সেটা হল - ইলিশ মাছ ভাজা, পমফ্রেট মাছের ঝা, চিংড়ির মালাইকারী আর মুরগীর মাংস |
যাক !! বাঙালিত্ব হারানোর আশংকা নেই | ভুরিভোজন (অবশ্যই আমিষ) করলে বাঙালীর সাত জন্মের পাপ ধুয়ে যায় |

মাছ-মাংসে প্রেম করে যেই জন,
সেই জন বাঙালী অবিনশ্বর !!


© অর্ঘ্য দাস @ টুকটাক লেখালেখি , দুর্গানগর, 19-09-2017
==================================================================

                         || দুর্গাপুজো এবং আমি ||

দুর্গাপুজো মানে আমার কাছে চিরকালই 'পেটপুজো' | এবং সেটা আমিষ | খাদ্যে যাঁরা ধর্মীয় বাধানিষেধ আরোপ করতে চায় তাদের প্রতি আমার আন্তরিক ধিক্কার চিরকালই |

মধ্যপ্রদেশে কর্মসূত্রে বেশ কিছুদিন ছিলাম | সেখানে নবরাত্রি মানেই বিশুদ্ধ নিরামিষভোজন | সেখানে অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসা করত যে আমরা বাঙালিরা কী করে দুর্গাপুজোর মতো পবিত্র অনুষ্ঠানে মাছ-মাংস খাই !!! উত্তরে আমি শুধু হাসতাম | খুব গোঁড়া কাউকে পেলে এটাও বলতাম যে আমি গো-মাংস ভক্ষণ করেছি | ব্যস, তারা আর কথা বাড়াত না |

পুজোতে আমি উপোসও করি না | আমাদের স্কুলের এক প্রবাদপ্রতিম শিক্ষক আমাদের একটা কথা বলতেন যেটা আমার সারাজীবন মনে থাকবে | উনি বলতেন, “এমন কি কখনোও হতে পারে যে তুই সারাদিন উপোস করার পর এক থালা খাবার সাজিয়ে তোর মায়ের সামনে রাখছিস, আর তোর মা অভুক্ত ছেলের সামনে বসে ওই খাবার খাচ্ছেন ?”
ফলে সত্যিই যদি দেবী দুর্গা মা হন আমাদের, তাহলে তিনি আমাদের অভুক্ত রেখে কক্ষনো নিজে খেতে পারবেন না |

আর আজকাল হয়েছি চরম ল্যাদখোর | প্রতিদিন ভিড় ট্রেন, বাসে উঠে যে দশা হয়, সেখানে কয়েকদিনের ছুটি মানে ঘরে বসে নির্ভেজাল আলস্য উপভোগ করা | তাছাড়া এই গ্রীষ্মকালের (!!!) পুজোয় ভিড় ঠেলে ঠাকুর দেখার পরিশ্রম করা আমার এই বিশাল গতরে সম্ভবও না |

তবে যখন মধ্যপ্রদেশে ছিলাম তখন পুজোর কয়েকদিন বাঙালিয়ানা খুব চেগে উঠতো | ওখানে চারটে পুজো কাটিয়েছি, পুজোর দিনগুলোতে কলকাতার মন্ডপ, ভিড়, কোলাহলকে খুব মিস করতাম | অথচ আজ বৃহত্তর কলকাতাতে বসে ওসব কিছুই অনুভব করি না |
হাতের নাগালে থাকলে কোনো মূল্যবান জিনিসই উপযুক্ত কদর পায় না, তাই তো ?????

© অর্ঘ্য দাস @ টুকটাক লেখালেখি, দুর্গানগর, 27-09-2017
=================================================================


Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ৩ - ঘন্টা, আলু এবং ব্রহ্ম

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ছাত্রদের দৈনন্দিন আবাসিক জীবনকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছে এই ছোট্ট ছড়াটা - “ নরেন্দ্রপুরে সময় ঘন্টাময় , খাদ্য আলুময় , চিন্তা ব্রহ্মময়  | ” অনেকদিন আগে শোনা এই ছড়ার রচয়িতার নাম আমার জানা নেই , কিন্তু ছড়াটা এতটাই প্রাসঙ্গিক যে এটা আমার মনের মধ্যে যেন গেঁথে গেছে  | ************************************************************ প্রথম ভাগ : ঘন্টা বাস্তবিকই আমাদের আবাসিক জীবন ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  |   ভোর পাঁচটায় rising bell শুনে ঘুম ভাঙতো , তারপর ঘন্টার তালে তালে সেই যে লেজ তুলে দৌড় শুরু হত , সেটা থামত রাত সাড়ে দশটা নাগাদ , ‘lights out’ এর ঘন্টাধ্বনি শুনে  |   চার বেলা ডাইনিং হলে খেতে যাওয়ার ঘন্টা , প্রার্থনা কক্ষে যাবার ঘন্টা , স্কুলে যাবার ঘন্টা , হোস্টেলে পড়া শুরু করার ঘন্টা , খেলতে যাবার ঘন্টা , রাত্রে শুতে যাবার ঘন্টা – আমাদের প্রতিটা কাজ ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  | প্রতিদিন এই সময়ে-অসময়ে ঘন্টা বাজানোর জন্য প্রত্যেক ভবনে (হস্টেলে) প্রতি মাসে দু’জন ছাত্রকে নিয়োগ করা হতো , এদের বলা হতো ‘...