Skip to main content

বাঙালীর বারমাস্যা


-----------------------------------------------------------------------------------------
                                ||   পর্ব ১  ||
মে মাস : উফফ.. কি গরম ! কবে যে একটু বৃষ্টি হবে !
জুলাই মাস : ইসস.. কি প্যাচপ্যাচে ওয়েদার ! সারাদিন বৃষ্টি আর বৃষ্টি | আর চাইনা বৃষ্টি | একটু ঝেড়ে রোদ উঠুক তো |
সেপ্টেম্বর মাস : ধ্যাত্তিরিকে .... কীরকম ভ্যাপসা গরম ! ভাদ্র মাস জাস্ট অসহ্য | কবে যে শীত পড়বে !
জানুয়ারী মাস : উহুহুহুহ্হু ... ঠান্ডায় তো জমে যাচ্ছি | জলে হাত দেওয়া যাচ্ছে না | আর পারা যাচ্ছে না ! কবে যে শীতকালটা যাবে !!
মার্চ মাস : এই রে ! মার্চ মাসেই এত গরম পড়ে গেল ! ধীরে ধীরে এই দেশ থেকে শীতকালের মেয়াদ যেন কমে যাচ্ছে | এই বছর গ্রীষ্মে প্রাণ বেরিয়ে যাবে !

© অর্ঘ্য দাস @ টুকটাক লেখালেখি, দুর্গানগর, 20-05-2017
====================================================================
উপরের পোস্টে যা বলতে চেয়েছি সেটা হল -
ঋতুচক্রের কোনো দশাতেই আমরা (মূলতঃ মধ্যবিত্ত বাঙালী জাতি) সন্তুষ্ট নই | গরমের সময় আমরা বৃষ্টির জন্য হাহাকার করি, কিন্তু বর্ষা এলে কাদা আর স্যাতসেঁতে আবহাওয়ায় বিরক্ত হয়ে যাই | তখন দাবি ওঠে "না-গরম-না-বৃষ্টি" গোছের মনোরম আবহাওয়ার | সেই দাবি মেনে শরতের আগমন | ওই সময়ে রাতে বেশ মনোরম পরিবেশ থাকলেও দিনে খানিকটা গরম থাকে | তখন আবার "পচা-ভাদ্র" নিয়ে অভিযোগ শুরু হয়ে যায় আর চলে শীতের অপেক্ষা | তারপর শীত আসে | প্রথম কয়েকদিন একটু উপভোগ করে মানুষ, কিন্তু শীত একটু জাঁকিয়ে পড়তেই আবার অভিযোগ এবং "হে গ্রীষ্ম, তুমি ফিরে এস" গোছের প্রার্থনা শুরু হয়ে যায় | এই রকম বিষাক্ত-চক্র চলতে থাকে বছরের পর বছর ধরে |
এখন কথা হচ্ছে তাহলে আমরা কী ধরনের আবহাওয়া চাই | এই নিয়েই আমার পরের লেখা :
====================================================================
                                        
                                  || পর্ব ২ ||

এই "বারো মাসে ছয় ঋতু" সিস্টেম আমার মোটে ভালো লাগে না | টানা দু'মাস এক রকম আবহাওয়া মোটে ভালো জিনিস না | তার থেকে সারাদিনেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আসুক নানা আবহাওয়া |
যেমন, সকাল 6 টা থেকে 11 টা পর্যন্ত আবহাওয়া হোক শরৎ কালের মতো | ঝকঝকে রোদ, আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ, রোদের নিচে দাঁড়ালে একটু গরম লাগবে কিন্তু ছায়ায় গেলে বেশ আরাম হবে | বইবে মৃদুমন্দ হাওয়া | আগের রাতে যদি বৃষ্টিও হয়, তাহলেও এই রোদে তা শুকিয়ে যাবে | ফলে মানুষের কাজে বেরোতে কোনো অসুবিধা হবে না |
সকাল 11 টার পর থেকে বিকাল 4 টে পর্যন্ত থাকুক শীতকালের আবহাওয়া | দুপুরের স্নান পর্বের কষ্টটুকু বাদ দিলে মানুষের বাকি প্রাত্যহিক কাজ সবথেকে বেশি থাকে এই সময়েই, ফলে শীতের আমেজে বিন্দাস কাজ করা যাবে |
বিকাল 4 টের পর থেকে সন্ধ্যা 7 টা অবধি হোক গ্রীষ্মের আবহাওয়া | এই সময়ে মানুষজন অফিস-কাছারী, স্কুল-কলেজ থেকে বাড়ি ফিরবে, গরম ও ভিড়ে তাদের কষ্ট হবে ঠিকই, কিন্তু এই স্লট ছাড়া অন্য স্লটে গ্রীষ্মকে ফেললে অনেক বেশি অসুবিধা |
সন্ধ্যা 7 টার পর থেকে রাত 12 টা পর্যন্ত আসুক বসন্ত | স্কুল-কলেজ ভাঙ্গার পর প্রেমিক-প্রেমিকাদের ভিড় বাড়ুক পার্কে, নদীবক্ষে | চায়ের দোকানের আসর উঠুক জমে | সারাদিনের কাজের শেষে বাড়ি ফিরে মানুষের মনে আসুক স্বস্তি, শান্তি, আনন্দ |
রাত 12 তার পর থেকে ঝেড়ে হোক বৃষ্টি, রাত 3 টে পর্যন্ত | চারিদিক ঠান্ডা হয়ে যাক | এতে একদিকে এয়ার কন্ডিশনের প্রয়োজন ফুরিয়ে আসবে, পরিবেশ-রক্ষা ও বিদ্যুৎ-সাশ্রয় দুই- হবে, অন্যদিকে মানুষজন শান্তিতে ঘুমাতেও পারবে |
বৃষ্টি কিন্তু রাত 3 টে নাগাদ থেমে যেতে হবে | নাহলে পরের দিন সকালে কাদায় মাখা রাস্তায় বেরোতে হবে | 3 টের পর থেকে 6 টা পর্যন্ত হোক হেমন্তের আবহাওয়া | ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটবে না |
পরেরদিন সকালেই আবার রোদ উঠবে, শুকিয়ে যাবে রাস্তা | নির্বিঘ্নে মানুষে কাজে বেরোবে |

এভাবেই চলুক !!!!

- © অর্ঘ্য দাস @ টুকটাক লেখালেখি, দুর্গানগর, 28-05-2017


Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...
  ঝাড়গ্রাম : বসন্ত ১৪২৭ স্কুল পাশ করেছি সতেরো বছর হয়ে গেল | তারপর এই প্রথম আমার সুযোগ হলো স্কুলের বন্ধুদের সাথে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার | দু তিনটে জায়গা মাথায় ছিল – ঘাটশিলা , ঝাড়গ্রাম, অযোধ্যা পাহাড় | এই বসন্তের শুরুতে তিনটে জায়গাই মনোরম | শেষমেষ ঝাড়গ্রাম WBFDC এর গেস্ট হাউসের ছবি দেখে সেটাই ফাইনাল করা হলো | 6 ই মার্চ, 2021, শনিবার          ডিমসেদ্ধ : সকাল সাড়ে দশটা - ক্যালেন্ডারে মার্চের শুরু হলেও বেজায় গরম. আমি দরদর করে ঘামছি ডেবরা চৌমাথায় (পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) দাঁড়িয়ে, হাতে আমার একুশটা হাঁসের ডিম সেদ্ধ, সাথে পেঁয়াজ লঙ্কা কুচি এবং সাদা ও কালো নুন | এক সপ্তাহ আগে করা প্ল্যান অনুযায়ী আমরা নাকি আগামী দু’ ঘন্টায় গাড়িতে বসে পার হেড পাঁচটা করে হাঁসের ডিম খাবো | ওদিকে সৌমাভ ওর গাড়িতে গোল (সুমিত্র) আর পকাই (অর্ক) কে নিয়ে আসছে কলকাতা থেকে |          বব মার্লে : শেষমেষ আমায় প্রায় ঘন্টা খানেক রোদে দাঁড় করানোর পর তাঁরা এলেন এবং বসন্তের এই অকাল দাবদাহ থেকে আমায় মুক্তি দিলেন | ঠান্ডা গাড়িতে উঠে ওদের আনা এগ স্যান্ডউইচ আর কোলাঘাট KFC থেকে কেনা মুর...