Skip to main content

প্রথম তাজমহল দর্শন



এই তো গত পরশু world photography day পালন হল | অনেকেই ফেসবুকে তাঁদের তোলা পছন্দের ছবি দিয়েছিলেন | আমার ইচ্ছা থাকলেও দেওয়া হয়নি, আজ দিচ্ছি |

আমি একেবারেই পাতি ফটোগ্রাফার তবে এডিটিং-য়ে বিশ্বাস করি না, আর ক্যামেরা আমার একদম পাতি না হলেও আহামরি একদমই না | 10X zoom আর 10 Mega pixel ক্যামেরা আজকের দিনে বিশেষ পাত্তা পাবার না | তবু এই ভালবাসার ক্যামেরাতে অনেক ছবিই তুলেছি যা আমার নিজের খুব পছন্দ | এরকমই একটি ছবি এটা |

ইতিহাস বইতে প্রথম যখন তাজমহল সম্বন্ধে পড়ি তখন বেশ একটা রোমাঞ্চ হয়েছি| বাবার পাওয়া LTC নিয়ে ছোটবেলায় ভারতের অনেক জায়গায় বেড়াতে গেলেও আগ্রামুখো হইনি কখনো | শেষে কর্মসূত্রে গোয়ালিয়র থাকবার সময়ে বাবা-মাকে নিয়ে প্রথম যাই সেখানে |

মনে আছে, তাজমহল দেখতে যাওয়ার পথে মনে মনে বেশ একটা উত্তেজনাময় অনুভূতি ছিল | খানিকটা প্রথম অভিসারের মতো | এই সেই তাজমহল, যা নাকি অন্যতম 'পৃথিবীর বিস্ময়' | টিকিট কেটে কয়েকস্তর সিকিউরিটি পেরিয়ে যখন ভিতরে ঢুকলাম তখন তাজমহলের টিকিও দেখা যাচ্ছে না | ওখানেই এক গাইডকে বগলদাবা করে এগিয়ে গেলাম ভিতরের গেটের দিকে |

অক্টোবর মাসের শেষের দিক, ঘড়িতে সকাল আটটা | চারিদিকে বেশ একটা ঠান্ডার আমেজ | বেশ সুন্দর কচি নরম রোদ উঠেছে | চারিদিকে পাখি ডাকছে | দুরুদুরু বুকে আমরা এগুচ্ছি সেই লাল দরজার দিকে | দরজার নিচের জায়গাটায় বেশ অন্ধকার - দূর থেকে দেখতে পাচ্ছি | দরজাটা আবার তেরছা ভাবে মুখ করে আছে আমাদের দিকে, ফলে দরজার ওপারে কী আছে সেটা দেখতে পাচ্ছি না | চরম cinematic suspense !

খানিক পরেই চোখ যেন ঝলসে গেল | কয়েক মুহূর্ত নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম | "শ্বেত পাথরের স্বপ্ন" কথাটা বিন্দুমাত্র ভুল না | নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস হচ্ছে না | প্রথম প্রেম, প্রথম বেতনের মতই অবিস্মরণীয় সেই প্রথম তাজমহলের দৃশ্য | সেই প্রথম দৃশ্যের ছবি এখানে দিলাম - কোনো এডিটিং, কোনো colour enhance ছাড়াই |




© অর্ঘ্য দাস @ টুকটাক লেখালেখি , দুর্গানগর, 21-08-2017

Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ৩ - ঘন্টা, আলু এবং ব্রহ্ম

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ছাত্রদের দৈনন্দিন আবাসিক জীবনকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছে এই ছোট্ট ছড়াটা - “ নরেন্দ্রপুরে সময় ঘন্টাময় , খাদ্য আলুময় , চিন্তা ব্রহ্মময়  | ” অনেকদিন আগে শোনা এই ছড়ার রচয়িতার নাম আমার জানা নেই , কিন্তু ছড়াটা এতটাই প্রাসঙ্গিক যে এটা আমার মনের মধ্যে যেন গেঁথে গেছে  | ************************************************************ প্রথম ভাগ : ঘন্টা বাস্তবিকই আমাদের আবাসিক জীবন ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  |   ভোর পাঁচটায় rising bell শুনে ঘুম ভাঙতো , তারপর ঘন্টার তালে তালে সেই যে লেজ তুলে দৌড় শুরু হত , সেটা থামত রাত সাড়ে দশটা নাগাদ , ‘lights out’ এর ঘন্টাধ্বনি শুনে  |   চার বেলা ডাইনিং হলে খেতে যাওয়ার ঘন্টা , প্রার্থনা কক্ষে যাবার ঘন্টা , স্কুলে যাবার ঘন্টা , হোস্টেলে পড়া শুরু করার ঘন্টা , খেলতে যাবার ঘন্টা , রাত্রে শুতে যাবার ঘন্টা – আমাদের প্রতিটা কাজ ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  | প্রতিদিন এই সময়ে-অসময়ে ঘন্টা বাজানোর জন্য প্রত্যেক ভবনে (হস্টেলে) প্রতি মাসে দু’জন ছাত্রকে নিয়োগ করা হতো , এদের বলা হতো ‘...