Skip to main content

শতবর্ষপ্রাচীন মিঠাইয়ের দোকান


...................................................................................................................
কিছুকাল মধ্যপ্রদেশের গোয়ালীয়রে কর্মসূত্রে বসবাস করিয়াছিলাম | উক্ত শহরে মিঠাই বড়ই অপ্রতুল, গোটা শহর খুঁজিলে দশখানি দোকান সাকুল্যে পাওয়া যাইবে কিনা সন্দেহ | তন্মধ্যে অধিকাংশের অবস্থা অতিশয় করুণ, মিঠাইখোর বাঙালীজাতির ‘মুখস্থ’ করিবার পক্ষে আদৌ অনুকূল নয় | এইরূপ একটি দোকানের কথা আজ বলিব |

উক্ত দোকানটি শুনিয়াছিলাম ‘শতবর্ষপ্রাচীন’ | বড় আশা করিয়া একদিন সেইস্থানে হাজির হইলাম | ফ্রিতে বিরিয়ানি খাইতে গিয়া প্লেটে ‘ভেজ বিরিয়ানি’ পাইলে যেরূপ মানসিক অবস্থা হয়, দোকান দেখিয়া আমার তদরূপ অবস্থা হইল | বয়স কাহার একশত বৎসর পার ইয়াছে – দোকানের নাকি মিঠাইয়ের - সেই বিষয়ে আমার ঘোরতর সন্দেহ জন্মাইল | মিঠাইগুলি খুব সম্ভবতঃ প্রাক-স্বাধীনতা যুগে নির্মিত | একটি ট্রেতে দেখিলাম খান ত্রিশেক মিঠাই পড়িয়া আছে, ট্রে-এর এক কোণে দুইখান মিঠাইয়ের জায়গা খালি | উক্ত মিঠাই দুইখান খুব সম্ভবতঃ কোনো ইংরেজ সাহেব ক্রয় করিয়াছিলেন, গোয়ালীয়র শহর তখন ইংরাজদের অধীন, সাহেব বোধকরি পারিবারিক অশান্তি সহ্য করিতে না পারিয়া আত্মহননের পথ খুঁজিতেছিলেন এবং সেই কারণেই মিঠাই দুইটি ক্রয় করিয়াছিলেন | অতঃপর তাঁহার কী দশা হইয়াছিল তাহা জানিবার কোনো উপায় আজ আর নাই, সেই তথ্য ইতিহাসের বক্ষে লীন হইয়া গিয়াছে |

মিঠাইয়ের ‘ট্রে’গুলির আশেপাশে কোনো মক্ষিকা কিম্বা পিপীলিকা দেখিতে পাইলাম না | পৃথিবীর ইতিহাসে ইহা এক বিস্ময়কর ঘটনা | কী প্রকারের ছানা হইতে উক্ত মিঠাই প্রস্তুত হয় আকাশ-পাতাল ভাবিয়াও তাহার কিনারা করিতে সক্ষম হইলাম না | সম্ভবতঃ যেই সমস্ত গো-মাতাদিগের আধার কার্ড নাই সেইসব বেওয়ারিশ দুর্ভাগাদের দুগ্ধজাত ছানা এই দোকানে ব্যবহৃত হয় |

আচমকা নজর করিলাম উক্ত দোকানের একপার্শ্বে এক ডেন্টিস্ট-এর চেম্বার এবং অপর পার্শ্বে এক জীবনবিমা কোম্পানির অফিস | এতক্ষণে সম্পূর্ণ ব্যাপার আমার বোধগম্য হইল | দাঁতের ডাক্তার দেখাইয়া নিরাময় হইল কি না তাহা পরখ করিবার জন্যই এই মিষ্টির দোকান | এবং এই পরখ করিতে যাইবার পূর্বে পরিবারের ভবিষ্যত সুনিশ্চিত করিতেই বিমা কোম্পানির অফিস |

পরেরদিনই দেশের প্রধানমন্ত্রীকে এক লম্বা চিঠি লিখিলাম | যুদ্ধে কামান দিয়া কী উপায়ে গোলাবারুদের পরিবর্তে এই সব বিষাক্ত মিঠাই নিক্ষেপ করিয়া অবলীলায় জয়লাভ করা যাইতে পারে সেই সম্বন্ধে দশ পাতার সচিত্র বিবরণ | চিঠির উত্তর আজও মেলে নাই, আশাকরি দু’পাঁচ সপ্তাহের মধ্যেই কোনো এক বড়সড় পুরস্কার জুটিবে | চিন্তা নাই, আপনাদেরও ‘মিষ্টিমুখ’ করাইব | মিঠাই কোন দোকান হইতে আসিবে সে সম্পর্কে প্রশ্ন নিষ্প্রয়োজন !
___________________________________________
© অর্ঘ্য দাস @ টুকটাক লেখালেখি, দুর্গানগর, 17-05-2017


Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ৩ - ঘন্টা, আলু এবং ব্রহ্ম

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ছাত্রদের দৈনন্দিন আবাসিক জীবনকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছে এই ছোট্ট ছড়াটা - “ নরেন্দ্রপুরে সময় ঘন্টাময় , খাদ্য আলুময় , চিন্তা ব্রহ্মময়  | ” অনেকদিন আগে শোনা এই ছড়ার রচয়িতার নাম আমার জানা নেই , কিন্তু ছড়াটা এতটাই প্রাসঙ্গিক যে এটা আমার মনের মধ্যে যেন গেঁথে গেছে  | ************************************************************ প্রথম ভাগ : ঘন্টা বাস্তবিকই আমাদের আবাসিক জীবন ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  |   ভোর পাঁচটায় rising bell শুনে ঘুম ভাঙতো , তারপর ঘন্টার তালে তালে সেই যে লেজ তুলে দৌড় শুরু হত , সেটা থামত রাত সাড়ে দশটা নাগাদ , ‘lights out’ এর ঘন্টাধ্বনি শুনে  |   চার বেলা ডাইনিং হলে খেতে যাওয়ার ঘন্টা , প্রার্থনা কক্ষে যাবার ঘন্টা , স্কুলে যাবার ঘন্টা , হোস্টেলে পড়া শুরু করার ঘন্টা , খেলতে যাবার ঘন্টা , রাত্রে শুতে যাবার ঘন্টা – আমাদের প্রতিটা কাজ ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  | প্রতিদিন এই সময়ে-অসময়ে ঘন্টা বাজানোর জন্য প্রত্যেক ভবনে (হস্টেলে) প্রতি মাসে দু’জন ছাত্রকে নিয়োগ করা হতো , এদের বলা হতো ‘...