Skip to main content

শিয়ালদা স্টেশনে আইনস্টাইন সাহেব



সেদিন সন্ধ্যাবেলার অফিস টাইমে শিয়ালদা স্টেশনে আইনস্টাইন সাহেবের সাথে দেখা হয়ে গেল | সেই ভাবুক উস্কোখুস্কো চেহারা, মাথায় একগোছা সাদা চুল এলোমেলো, মুখে সেই পরিচিত হাসি |

আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম বনগাঁ লোকাল ধরব বলে | শুক্রবার, বেজায় গরম | হঠাৎ কানের কাছে কে যেন ইংরাজিতে বলে উঠল, "বলেছিলাম না, সবই আপেক্ষিক ? এই গরমে ভিড়ের মধ্যে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করার সময়টা এতই দুঃসহ যে সামান্য এক মিনিটকে যেন এক ঘন্টা বলে মনে হয় | আবার এই যে উইকএন্ড পাবে শনি-রবি, সব মিলিয়ে আটচল্লিশ ঘন্টা, সেই পরম সুখকর সময়কে যেন মনে হবে কয়েক সেকেন্ড - মুহূর্তের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে !! "

চমকে গিয়ে তাকিয়ে দেখি ওই নিদারুণ গরমে কোট গায়ে তিনি দিব্যি মিটিমিটি হাসছেন | আমি জিজ্ঞাসা করলাম (ইংরাজীতেই), "আরে সাহেব ! এই অসময়ে, বেমানান এই জায়গায় আপনি কী করছেন ?"

সাহেব হেসে বললেন, "তোমাকে একটা সুখের সন্ধান দিতে এসেছি | এই গরমে বনগাঁ লোকালে ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে দুর্গানগর অব্দি যেতে হবে বলে যে মেজাজ খারাপ করে রেখেছ তার কোনো মানেই হয় না | ব্যাপারটা অন্যরকম করে ভাবো | গেটের কাছে দাঁড়িয়ে লোকের ধাক্কা খেতে খেতে আর গরমে হাঁসফাঁস করতে করতে মিনিট চল্লিশেক কষ্ট করতে তোমায় হবেই, তবে যে মুহূর্তে দুর্গানগরে ট্রেন থেকে নামবে সেই মুহূর্তে মনে হবে যেন A.C. ঘরে ঢুকলে | সেই অনুভূতিটা ঘন্টা খানেক থাকবে | এই দুর্মূল্যের বাজারে ফ্রিতে এক ঘন্টা ঠান্ডা ঘরে থাকার অনুভূতি লাভ কিন্তু চাট্টিখানি কথা না !"

আমি উত্তর দিতে যাব, অমনি শুনি ঘোষণা হচ্ছে, "ছটা ছত্রিশ মিনিটের বনগাঁ লোকাল সাত নম্বর প্লাটফর্ম থেকে ছাড়বে |" সঙ্গে সঙ্গে ভেসে গেলাম জনস্রোতে | সাহেবকে ‘গুডবাই’ বলার সুযোগটাও পেলাম না !
___________________________________________
© অর্ঘ্য দাস @ টুকটাক লেখালেখি, দুর্গানগর, 22-04-2017


Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...
  ঝাড়গ্রাম : বসন্ত ১৪২৭ স্কুল পাশ করেছি সতেরো বছর হয়ে গেল | তারপর এই প্রথম আমার সুযোগ হলো স্কুলের বন্ধুদের সাথে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার | দু তিনটে জায়গা মাথায় ছিল – ঘাটশিলা , ঝাড়গ্রাম, অযোধ্যা পাহাড় | এই বসন্তের শুরুতে তিনটে জায়গাই মনোরম | শেষমেষ ঝাড়গ্রাম WBFDC এর গেস্ট হাউসের ছবি দেখে সেটাই ফাইনাল করা হলো | 6 ই মার্চ, 2021, শনিবার          ডিমসেদ্ধ : সকাল সাড়ে দশটা - ক্যালেন্ডারে মার্চের শুরু হলেও বেজায় গরম. আমি দরদর করে ঘামছি ডেবরা চৌমাথায় (পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) দাঁড়িয়ে, হাতে আমার একুশটা হাঁসের ডিম সেদ্ধ, সাথে পেঁয়াজ লঙ্কা কুচি এবং সাদা ও কালো নুন | এক সপ্তাহ আগে করা প্ল্যান অনুযায়ী আমরা নাকি আগামী দু’ ঘন্টায় গাড়িতে বসে পার হেড পাঁচটা করে হাঁসের ডিম খাবো | ওদিকে সৌমাভ ওর গাড়িতে গোল (সুমিত্র) আর পকাই (অর্ক) কে নিয়ে আসছে কলকাতা থেকে |          বব মার্লে : শেষমেষ আমায় প্রায় ঘন্টা খানেক রোদে দাঁড় করানোর পর তাঁরা এলেন এবং বসন্তের এই অকাল দাবদাহ থেকে আমায় মুক্তি দিলেন | ঠান্ডা গাড়িতে উঠে ওদের আনা এগ স্যান্ডউইচ আর কোলাঘাট KFC থেকে কেনা মুর...