Skip to main content

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা : পর্ব ১৩ : ইংরাজি-বিভ্রাট



প্রথম ভাগ : প্রায় আছে

নরেন্দ্রপুর মিশনে তখন আমি ক্লাস টেনে পড়ি | একবার মান্থলি পরীক্ষার সিলেবাস দেখতে আমরা কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টে গিয়ে দেখি বাইরে নোটিস বোর্ডে লেখা লেখা আছে যে সিলেবাস হল - "All but 3 acids" | আমাদের মধ্যে কারোরই 'all but' এর অর্থ জানা ছিল না | এদিকে সেই মুহূর্তে ডিপার্টমেন্টে কোনো কেমিস্ট্রি স্যারও নেই যে তাঁকে জিজ্ঞাসা করব | খুবই দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে ক্লাসে ফিরে এলাম |

ভাগ্যক্রমে পরের পিরিয়ডটাই ছিল ইংরাজি | শিক্ষক শ্রী রবীন্দ্রনাথ চ্যাটার্জি (RNC) | আমরা তাঁকে পিছনে ‘রবিন চাঁড়াল’ বলে ডাকতাম | স্যার এলে আমরা তাঁকে ব্যাপারটা খুলে বলে জিজ্ঞেস করলাম, "স্যার, সিলেবাসে তো এরকম লেখা আছে | আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না | আপনি বলে দিন ওই অ্যাসিড তিনটে আছে কি নেই "

রবিনদা একটু থেমে বললেন, "বুঝলি তোরা, ব্যাপারটা হচ্ছে এই অ্যাসিডগুলো সিলেবাসে প্রায় আছে |"

আমরা হতভম্ব ! সিলেবাসে কোনো জিনিস "প্রায় থাকা"র অর্থ কী হতে পারে ? আমরা স্যারের মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলাম |

***********************************************
দ্বিতীয় ভাগ : "Paritosh da HAS ?"

আমি তখন ক্লাস এইট | থাকি সারদানন্দ ভবনে | আমাদের ব্লকের শেষ রুমে থাকতেন ইতিহাসে শিক্ষক পরিতোষদা | একদিন বিকালে আমরা খেলার মাঠ থেকে সবে ফিরেছি, এমন সময়ে পাশের ভবন থেকে তপন মহারাজ (সিনিয়রের তপনদা) এলেন | এসেই আমাদের জিজ্ঞাসা করলেন, "Paritosh da has ?" |

আমরা যার-পর-নাই অবাক, এরকম বাক্যের কোনো অর্থ অনুধাবন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না | খানিকপর তপনদা বাংলাতেই বললেন, "পরিতোষদা আছেন ?"

'has' শব্দের বাংলা 'থাকা' জানতাম কিন্তু সেই শব্দের এরকম প্রয়োগ আগে কখনো আমরা কেউ শুনিনি | এরপর থেকে কিন্তু আমরা যত্রতত্র এভাবে 'has' কে ব্যবহার করতাম !!

© অর্ঘ্য দাস @ টুকটাক লেখালেখি, দুর্গানগর, December 2016



Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...
  ঝাড়গ্রাম : বসন্ত ১৪২৭ স্কুল পাশ করেছি সতেরো বছর হয়ে গেল | তারপর এই প্রথম আমার সুযোগ হলো স্কুলের বন্ধুদের সাথে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার | দু তিনটে জায়গা মাথায় ছিল – ঘাটশিলা , ঝাড়গ্রাম, অযোধ্যা পাহাড় | এই বসন্তের শুরুতে তিনটে জায়গাই মনোরম | শেষমেষ ঝাড়গ্রাম WBFDC এর গেস্ট হাউসের ছবি দেখে সেটাই ফাইনাল করা হলো | 6 ই মার্চ, 2021, শনিবার          ডিমসেদ্ধ : সকাল সাড়ে দশটা - ক্যালেন্ডারে মার্চের শুরু হলেও বেজায় গরম. আমি দরদর করে ঘামছি ডেবরা চৌমাথায় (পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) দাঁড়িয়ে, হাতে আমার একুশটা হাঁসের ডিম সেদ্ধ, সাথে পেঁয়াজ লঙ্কা কুচি এবং সাদা ও কালো নুন | এক সপ্তাহ আগে করা প্ল্যান অনুযায়ী আমরা নাকি আগামী দু’ ঘন্টায় গাড়িতে বসে পার হেড পাঁচটা করে হাঁসের ডিম খাবো | ওদিকে সৌমাভ ওর গাড়িতে গোল (সুমিত্র) আর পকাই (অর্ক) কে নিয়ে আসছে কলকাতা থেকে |          বব মার্লে : শেষমেষ আমায় প্রায় ঘন্টা খানেক রোদে দাঁড় করানোর পর তাঁরা এলেন এবং বসন্তের এই অকাল দাবদাহ থেকে আমায় মুক্তি দিলেন | ঠান্ডা গাড়িতে উঠে ওদের আনা এগ স্যান্ডউইচ আর কোলাঘাট KFC থেকে কেনা মুর...