Skip to main content

পেপার কাটিং কবিতা


এটা কবিতা নয়, বরং বলা এটা একটা এক্সপেরিমেন্ট | আধুনিক কবিতা নিয়ে নানা কৌতুক শোনা যায়, এটা সেই বিষয়েই একটা পরীক্ষানিরীক্ষার প্রয়াস | আগে কবিতাটা পড়ে নিন, তারপর কবিতা সম্বন্ধে আলোচনা হবে |

কবিতা :
প্রশ্ন হয়েছিল, চলে যাওয়ার 
আকাঙ্ক্ষা কোথায় ?
ভালো হোক চলে যাওয়া |
কাজ, টাকা, প্রেমিকের হাতে,
দেহ আর নয় | আঠাশ বছরের বিশ্বাস |
মোবাইলে বার বার বিরক্ত, সন্দেহ,
উচ্ছিষ্ট দামী জীবনযাপন |
 
নিখোঁজ মানুষ, হইচই,
সিমেন্ট গোলা, টিনের বাক্স,
অগোছালো ঘর, সম্পর্কে চিড় |
(সমাপ্ত)

আলোচনা :
আমি যেটা এখানে লিখবার চেষ্টা করেছি সেটাকে ‘পেপার কাটিং কবিতা’ বলে | কোনো সংবাদপত্র বা বইয়ের যেকোনো একটা পাতা বেছে নিয়ে সেখান থেকে এলোমেলো ভাবে (random order) কিছু শব্দ তুলে নিয়ে সেটাকে পরপর সাজিয়ে কবিতার আকার দেওয়া | খুব স্বাভাবিকভাবেই এরকম কবিতার কোনো অর্থ নেই | কিন্তু আজকাল মানুষ কঠিন কবিতা দেখলেই ভাবে যে সেটা বুঝি বেশ উঁচুদরের জিনিস, ফলে মানুষ ‘পেপার কাটিং কবিতার’ও একটা মনগড়া ব্যাখ্যা খুঁজে বার করে এবং মনে করে যে কবি নিশ্চয়ই এমনটা ভেবেই কবিতাটির রচনা করেছেন |

আজকের আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম পাতার প্রথম খবর থেকে একদম এলোপাতাড়ি ভাবে কয়েকটা শব্দ খুঁজে পরপর বসিয়ে দিয়েছি | একটা শব্দ (বা পাশাপাশি বসা শব্দদ্বয়) খুঁজে নিয়ে যখন কবিতার মধ্যে বসাচ্ছি তখন পরের শব্দ (কিম্বা সেই লাইন বা কবিতার বাকি অংশ) নিয়ে কোনো ধারনাই নেই আমার মনে | একটা শব্দ লিখে আবার পেপারে মনোনিবেশ করছি পরের শব্দ কি হবে সেটা নিয়ে, চোখকে ইতস্ততঃ ভাবে খবরের উপর বুলাতেই প্রথম যে শব্দে চোখ আটকালো সেটা যদি ‘কবিতা-উপযোগী’ হয় তাহলে সেটাকেই তুলে এনে কবিতায় বসিয়েছি | অর্থাৎ শব্দচয়নে সামান্য খেয়াল রেখেছি, খুব বেমানান হয়ে যাবে এমন শব্দ ব্যবহার না করার চেষ্টা করেছি | ........ সুতরাং এই কবিতার কোনো অর্থ নেই, এটা একেবারেই gibberish, এর কোনো ভাবার্থ বা ‘থিম’ নেই, অন্ততঃ আমার জানা নেই |

এই paper cutting poem-কে ঠিক সাহিত্য বলা চলে না | বরং এটা একরকম ব্যাঙ্গাত্মক (parody) লিখনরীতি | এখনকার বেশিরভাগ আধুনিক বাংলা কবিতাই খুব জটিল, লেখক কী বলতে চাইছেন সেটা বোঝা দায় হয়ে পড়ে, মনে হয় যেন কয়েকটা সামঞ্জস্যহীন শব্দকে পাশাপাশি বসিয়ে দেওয়া হয়েছে | এই ধরনের কবিতাকে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করার জন্যই এই paper cutting poem-এর সৃষ্টি | ফলে তথাকথিত বাংলা কবিতার বইয়ে এই জিনিস পাবেন না | কোনো লিটল-ম্যাগাজিনে হয়তো পেলেও পেতে পারেন | আমি নিজে কোথাও ছাপার হরফে এই জিনিস পাইনি, তবে বন্ধুবান্ধবের মুখে শুনেছি |

ওই যে এক আধুনিক চিত্রশিল্পীর গল্প শোনা যায় যিনি নিজের ঘোড়ার লেজে রং লাগিয়ে ক্যানভাসের সামনে ছেড়ে দিয়েছিলেন | অগণিত লেজের আঁচড় লেগে ক্যানভাস ভরে গেলে শিল্পী সেটাকে পরের দিন কোনো চিত্র প্রদর্শনীতে টাঙিয়ে দেন | যথারীতি ওই ছবির সামনেই দর্শকের ভিড় সবচেয়ে বেশি হয় এবং চিত্রটি মারাত্মক প্রশংসিত হয় | আসলে আমরা যা বুঝতে পারি না, যা আমাদের কাছে কঠিন লাগে, সেগুলোকেই আমরা খুব সমীহের চোখে দেখি | আধুনিক কবিতার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য | আমরা এই কথাটাই ভুলে যাই যে - যেটা সবাই বুঝতে পারে সেটাই উঁচুদরের শিল্পের নিদর্শন; কোনো জিনিসকে কঠিন নয়, সহজ করে সকলের সামনে তুলে ধরাই কোনো শিল্পীর কৃতিত্বের মাপকাঠি ||
© অর্ঘ্য দাস @ টুকটাক লেখালেখি, দুর্গানগর, 4-2-2017

Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...
  ঝাড়গ্রাম : বসন্ত ১৪২৭ স্কুল পাশ করেছি সতেরো বছর হয়ে গেল | তারপর এই প্রথম আমার সুযোগ হলো স্কুলের বন্ধুদের সাথে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার | দু তিনটে জায়গা মাথায় ছিল – ঘাটশিলা , ঝাড়গ্রাম, অযোধ্যা পাহাড় | এই বসন্তের শুরুতে তিনটে জায়গাই মনোরম | শেষমেষ ঝাড়গ্রাম WBFDC এর গেস্ট হাউসের ছবি দেখে সেটাই ফাইনাল করা হলো | 6 ই মার্চ, 2021, শনিবার          ডিমসেদ্ধ : সকাল সাড়ে দশটা - ক্যালেন্ডারে মার্চের শুরু হলেও বেজায় গরম. আমি দরদর করে ঘামছি ডেবরা চৌমাথায় (পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) দাঁড়িয়ে, হাতে আমার একুশটা হাঁসের ডিম সেদ্ধ, সাথে পেঁয়াজ লঙ্কা কুচি এবং সাদা ও কালো নুন | এক সপ্তাহ আগে করা প্ল্যান অনুযায়ী আমরা নাকি আগামী দু’ ঘন্টায় গাড়িতে বসে পার হেড পাঁচটা করে হাঁসের ডিম খাবো | ওদিকে সৌমাভ ওর গাড়িতে গোল (সুমিত্র) আর পকাই (অর্ক) কে নিয়ে আসছে কলকাতা থেকে |          বব মার্লে : শেষমেষ আমায় প্রায় ঘন্টা খানেক রোদে দাঁড় করানোর পর তাঁরা এলেন এবং বসন্তের এই অকাল দাবদাহ থেকে আমায় মুক্তি দিলেন | ঠান্ডা গাড়িতে উঠে ওদের আনা এগ স্যান্ডউইচ আর কোলাঘাট KFC থেকে কেনা মুর...