Skip to main content

ভ্রমণ - 'ক্যামেরায় দৃশ্যবন্দী' বনাম 'সুন্দর মুহূর্তকে উপভোগ'



The Secret Life of Walter Mitty সিনেমায় Sean Penn একজন চিত্রসাংবাদিক | হিমালয়ের বুকে snow leopardএর খোঁজে সারাদিন ক্যামেরায় চোখ রেখে চলা তিনি যে মুহূর্তে সেই বিরল প্রাণীটিকে দেখতে পান, তখন তিনি ক্যামেরার লেন্স থেকে বেরিয়ে এসে দু'চোখ ভরে সেটিকে দেখতে থাকেন | সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করার কোনো ইচ্ছা তাঁর নেই, তিনি সেই মুহূর্তকে উপভোগ করতে ইচ্ছুক, ক্যামেরা সেখানে একটা চিত্তবিক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই না |

তাঁর ভাষায় : “If I like the moment, I mean, me…… personally, I don’t like to have the distraction of camera. I just want to stay in it. Right there….right here.”

আজকের দিনে বেশিরভাগ মানুষ ঠিক এর বিপরীত কাজ করতে অভ্যস্ত | কোনো জায়গায় বেড়াতে গিয়ে সেই জায়গাকে ভালো করে দেখার আগেই তারা ব্যস্ত হয়ে যায় তার ছবি তুলতে | এই ছবি তোলার চক্করে জায়গাটাই সেভাবে উপভোগ করা হয়ে ওঠে না তাদের |

পুরোনো বেড়ানোর ফটো দেখতে বেশিরভাগ মানুষেই ভালবাসেন | সেই সব ফটো দেখার মাধ্যমে ওই সব জায়গায় আরেকবার মানসভ্রমণও হয়ে যায় | সেজন্যই বেড়াতে গিয়ে ফটো তোলাও খুব জরুরী | কিন্তু পাশাপশি সেই জায়গাটাকে উপভোগ করা আরো দরকারী, নাহলে ভ্রমণের প্রাথমিক উদ্দেশ্যই যে ব্যর্থ হয়ে যায় ! ফলে আমার মতে 'জায়গাকে উপভোগ করা' এবং 'দৃশ্যকে ক্যামেরাবন্দী করা' - এই দুয়ের মধ্যে একটা balance থাকা খুব জররী |

তবে যারা শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় ফটো পোস্ট করে বস্তাভর্তি 'like' কুড়ানোর তাগিদে কিম্বা নিজের তোলা ফটোকে বিপুল পরিমানে এডিট করে নিজের 'ফটোগ্রাফার সত্তা'কে নিজেই বাহবা দেবার জন্য হাজার খানেক ফটো তুলতে ব্যস্ত থাকে তাদের জন্য আমার আন্তরিক সমবেদনা রইল |

আমার নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলছি - আমি নিজেও পুরোনো বেড়ানোর ফটো দেখতে খুব ভালবাসি | অনেক মনখারাপের সময়ে এই অভ্যাসই আমার কাছে অক্সিজেনের মতো কাজ করে | আগে আমিও বেড়াতে গিয়ে প্রচুর ফটো তুলতাম, কিন্তু ইদানিং গত কয়েক বছরে এই অভ্যাসটা বদলেছে | এখন মনে হয় যেন জায়গাগুলোকে আরো বেশি করে অনুভব করতে পারি |

এখন পুরনো বেড়ানোর ফটো দেখতে গিয়ে অনেক সময়েই মনে হয়, "ইসস...ওই জায়গাটার কোনো ফটো নেই ! ওই জায়গাটাই তো সবচেয়ে ভালো ছিল !" ... একটু আফসোসের পাশাপাশি এই উপলব্ধিও হয় যে জায়গাটা এতই সুন্দর ছিল যে আমি তার রূপে গভীরভাবে মগ্ন ছিলাম, আমি সেখানকার প্রতিটা মুহূর্তকে এতটাই উপভোগ করেছিলাম যে ফটো তোলার কথা আমার মাথাতেই আসে নি |

জানি কোনদিনই সম্ভব হবে না তবুও কল্পনা করি যে একদিন সত্যিই এমন এক রূপকথার জায়গায় বেড়াতে যাব যেখানকার প্রতিটা ক্ষণই এত গভীর হবে যে সেখানকার একটা দৃশ্যও ক্যামেরাবন্দী করা হয়ে উঠবে না |

© অর্ঘ্য দাস @ টুকটাক লেখালেখি, দুর্গানগর, 02-02-2017


Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...
  ঝাড়গ্রাম : বসন্ত ১৪২৭ স্কুল পাশ করেছি সতেরো বছর হয়ে গেল | তারপর এই প্রথম আমার সুযোগ হলো স্কুলের বন্ধুদের সাথে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার | দু তিনটে জায়গা মাথায় ছিল – ঘাটশিলা , ঝাড়গ্রাম, অযোধ্যা পাহাড় | এই বসন্তের শুরুতে তিনটে জায়গাই মনোরম | শেষমেষ ঝাড়গ্রাম WBFDC এর গেস্ট হাউসের ছবি দেখে সেটাই ফাইনাল করা হলো | 6 ই মার্চ, 2021, শনিবার          ডিমসেদ্ধ : সকাল সাড়ে দশটা - ক্যালেন্ডারে মার্চের শুরু হলেও বেজায় গরম. আমি দরদর করে ঘামছি ডেবরা চৌমাথায় (পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) দাঁড়িয়ে, হাতে আমার একুশটা হাঁসের ডিম সেদ্ধ, সাথে পেঁয়াজ লঙ্কা কুচি এবং সাদা ও কালো নুন | এক সপ্তাহ আগে করা প্ল্যান অনুযায়ী আমরা নাকি আগামী দু’ ঘন্টায় গাড়িতে বসে পার হেড পাঁচটা করে হাঁসের ডিম খাবো | ওদিকে সৌমাভ ওর গাড়িতে গোল (সুমিত্র) আর পকাই (অর্ক) কে নিয়ে আসছে কলকাতা থেকে |          বব মার্লে : শেষমেষ আমায় প্রায় ঘন্টা খানেক রোদে দাঁড় করানোর পর তাঁরা এলেন এবং বসন্তের এই অকাল দাবদাহ থেকে আমায় মুক্তি দিলেন | ঠান্ডা গাড়িতে উঠে ওদের আনা এগ স্যান্ডউইচ আর কোলাঘাট KFC থেকে কেনা মুর...