Skip to main content

Demonetization 2016 : পর্ব ৩ - অলীক স্বপ্ন, সর্বনেশে বাস্তব


সরকার গরুদান করিয়া জুতা মারিয়াছেন | প্রথমে সীমান্তে সার্জিকাল স্ট্রাইক করিয়া জনগনকে আবেগে ভাসাইয়াছেন | সেই সময় জনগণ খুশিতে গদগদ হইয়াছিল | অতঃপর সরকার বাহাদুর অর্থনীতিতে সার্জিকাল স্ট্রাইক করিয়াছেন | এই ক্ষেত্রে ঔষধেই কার্য সমাধা হইবার সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু ডাক্তার বিনা নোটিশে রুগীকে অপারেশন টেবিলে সার্জারির জন্য পাঠাইয়াছেন | এখন রুগীর প্রাণ বাঁচানোই দুষ্কর হইয়া উঠিয়াছে |

জনগণ প্রথমে বিপুল সমর্থন করিয়াছিলেন | ভারতীয় সেনা সীমান্তে প্রত্যহ চব্বিশ ঘন্টা দাঁড়াইয়া প্রহরা দেন, সুতরাং ব্যাঙ্ক-এটিএম-পোস্টাপিসে চার-পাঁচ ঘন্টা তাহারা স্বচ্ছন্দ্যে দাঁড়াইতে পারিবেন বলিয়া ভাবিয়াছিলেন | সঙ্গে ছিল নবভারত নির্মাণের স্বপ্ন | উপরন্তু বিভিন্ন ধনী লোকের বসতবাড়িতে ইডি-র হানাদারিতে তাঁহারা যাহার-পর-নাই আনন্দ পাইয়াছিলেন |

কিন্তু জগতে কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নহে | ধীরে ধীরে দেশপ্রেমের রোমান্স ঝাপসা হইয়া কঠিন বাস্তব স্পষ্টতর হইয়া উঠিতেছে | নিত্যদিনের নগদ-ঘটিত সমস্যায় মানুষ জেরবার | নতুন মাস পড়িতেই জনমানসে হাহাকার উঠিয়াছে | সংসার চালনা দায় হইয়া উঠিতেছে | একদা দেশপ্রেমীগণ বলিতেছিল যে দেশের স্বার্থে কোনো বড় পদক্ষেপ লইতে গেলে আমজনতাকে কিছু ক্ষুদ্র সমস্যা ভোগ করিতেই হয়, ইহাকে তাঁহারা 'কোল্যাটারেল ড্যামেজ' বলিয়া অভিহিত করিয়াছিল | কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ড্যামেজ আর 'কোল্যাটারেল' নাই, উহা 'প্রাইমারি'তে পরিনত হইয়াছে |

বর্তমান ভারতের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে 'ডিজিটাল ভারতবর্ষ' এক অলীক স্বপ্ন | যে দেশের জনসংখ্যার প্রায় সত্তর শতাংশ গ্রামীন, সেই দেশে online banking বা Plastic money কিম্বা Mobile wallet নয়, নগদ টাকাই লেনদেনের প্রধান মাধ্যম | সুতরাং নগদ টাকার সরবরাহে ঘাটতি হইলে দেশের অর্থনীতি ধসিয়া যাইবার বিপুল সম্ভাবনা |

ক্লাসের চার-পাঁচটি বদমায়েস ছাত্রকে জব্দ করিবার জন্য হেডমাস্টার মশাই গোটা ক্লাসকে রৌদ্রে নিল-ডাউন করিয়া রাখিলেন | প্রখর গরমে খান পঁচিশেক ছাত্র অসুস্থ হইয়া পড়িল | মজার বিষয় যাহারা অসুস্থ হইয়া পড়িয়াছে তাহারা কেহই ক্লাসে গোল বাঁধায় নাই, অপরদিকে যাহারা দুষ্টুমি করিয়াছিল সেই বিচ্ছু ডানপিটে ছোঁড়াগুলি নিল-ডাউন হইয়াও ফিকফিক করিয়া হাসিতেছে |

© অর্ঘ্য দাস @ টুকটাক লেখালেখি, দুর্গানগর, 02-12-2016


Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ৩ - ঘন্টা, আলু এবং ব্রহ্ম

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ছাত্রদের দৈনন্দিন আবাসিক জীবনকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছে এই ছোট্ট ছড়াটা - “ নরেন্দ্রপুরে সময় ঘন্টাময় , খাদ্য আলুময় , চিন্তা ব্রহ্মময়  | ” অনেকদিন আগে শোনা এই ছড়ার রচয়িতার নাম আমার জানা নেই , কিন্তু ছড়াটা এতটাই প্রাসঙ্গিক যে এটা আমার মনের মধ্যে যেন গেঁথে গেছে  | ************************************************************ প্রথম ভাগ : ঘন্টা বাস্তবিকই আমাদের আবাসিক জীবন ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  |   ভোর পাঁচটায় rising bell শুনে ঘুম ভাঙতো , তারপর ঘন্টার তালে তালে সেই যে লেজ তুলে দৌড় শুরু হত , সেটা থামত রাত সাড়ে দশটা নাগাদ , ‘lights out’ এর ঘন্টাধ্বনি শুনে  |   চার বেলা ডাইনিং হলে খেতে যাওয়ার ঘন্টা , প্রার্থনা কক্ষে যাবার ঘন্টা , স্কুলে যাবার ঘন্টা , হোস্টেলে পড়া শুরু করার ঘন্টা , খেলতে যাবার ঘন্টা , রাত্রে শুতে যাবার ঘন্টা – আমাদের প্রতিটা কাজ ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  | প্রতিদিন এই সময়ে-অসময়ে ঘন্টা বাজানোর জন্য প্রত্যেক ভবনে (হস্টেলে) প্রতি মাসে দু’জন ছাত্রকে নিয়োগ করা হতো , এদের বলা হতো ‘...