Skip to main content

Demonetization 2016 : পর্ব ২ - ডিজিটাল ইন্ডিয়া



শুনিতেছি ভারতবর্ষ এইবার ডিজিটাল হইবে | গরীব মানুষ ক্যাশলেস হইবেন, ফলে একদিন খাইবেন, পরের দিন খাইবেন না | যেদিন খাইলেন সেদিন 1, যেদিন খাইলেন না সেদিন 0, একেবারে ডিজিটাল বিজ্ঞানের গোড়ার কথা - বাইনারি সিস্টেম |

ট্রামে-বাসে সকল যাত্রী 500 এবং 2000 টাকার নোট দিবেন, কন্ডাক্টরগণ খুচরা দিতে পারিবেন না, ফলে তাহাদের পদাবনতি ঘটিয়া তাহারা সেমি-কন্ডাক্টরে পরিনত হইবেন |

মধ্যবিত্ত মানুষ অনলাইন হইবেন, অর্থাৎ ATM-ব্যাঙ্ক-পোস্ট অফিসের লাইনে 'অন' হইবেন, কিন্তু তাহার নম্বর আসিবার পূর্বেই টাকা ফুরাইয়া যাইবে, দুঃখে তিনি লাইনচ্যুত (অফ-লাইন) হইবেন এবং মেজাজ হারাইবেন | অতঃপর তিনি ফ্লিপকার্টে অনলাইনে গামছা, বিগ বাজারে ডেবিট কার্ড সোয়াইপ করিয়া সাবান-তেল-শ্যাম্পু, পাড়ার দোকানদারকে মোবাইলে paytm করিয়া গা ঘষিবার দেশী ছোবা ক্রয় করিবেন এবং মাথা ঠান্ডা করিবার জন্য স্নানে যাইবেন |

ডিজিটাল ভারতে সব্জিওয়ালা সীম বলিতে SIM, বিন (beans) বলিতে রিসাইকেল বিন বুঝিবে | ছুতার জানালা বলিতে windows 10 বুঝিবে | রুগী সরকারী হাসপাতালে গিয়া জিজ্ঞাসা করিবে সে ভাইরাস নাকি ট্রোজান হর্সে আক্রান্ত | বেসরকারী ক্লিনিকে 'সিলিকন' প্রতিস্থাপনের হিড়িক পড়িবে | অপরদিকে চর্মশিল্পে মন্দা দেখা দিবে কারণ ক্যাশলেস ভারতে কেহ মানিব্যাগ ক্রয় করিবে না | ফলতঃ মানিব্যাগ কারখানাগুলিতে তালা ঝুলিবে এবং বহু শ্রমিক কর্মহারা হইবে | ডিজিটাল ভারতবাসীর পকেটে এবং ঘরে কাঁচা টাকার ভাঁটা পড়িবে, ফলে পকেটমার এবং ছিঁঁচকে চোরের পেটে লাথ পড়িবে, অপরদিকে সাইবার ক্রাইম বাড়িবে, তাহা সামাল দিতে পুলিশের 'ডিজি' পর্যন্ত 'টাল' খাইবেন ! চূড়ান্ত ডিজিটাল অবস্থা দেখা দিবে !!

নূতন ভারতে নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে গৃহকর্তা হস্তে POS মেশিন লইয়া ফ্রন্ট ডেস্কে বসিয়া থাকিবেন, আমন্ত্রিতের দল কার্ড সোয়াইপ করিয়া ‘ডিজিটাল ধন’ উপহার দিবেন | ঈশ্বর স্বয়ং ডিজিটাল হইয়া পড়িবেন, ফলতঃ মন্দিরে-মসজিদে-চার্চে ডোনেশন বাক্সের অবলুপ্তি ঘটিবে এবং সেইস্থানে উক্ত মেশিন শোভা পাইবে | সুলভ শৌচালয়, গণিকালয়, ফুটপাতের পান-বিড়ির দোকান প্রভৃতি স্থানেও ক্যাশলেস লেনদেন চালু হইবে | ফুটপাত এবং ট্রেনের হকাররা পর্যন্ত নগদ টাকাপয়সায় লেনদেন অপেক্ষা 'মোবাইল ওয়ালেট'য়ে অধিক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করিবেন !

আমজনতা ডিজিটাল স্বপ্ন দেখিবেন, সন্ত্রাসমুক্ত ভারতবর্ষে জালি এবং কালো টাকার অবসানের | প্রতিবেশীর ঘরে ইনকাম ট্যাক্সের রেড পড়িলে মানুষ যার-পর-নাই আনন্দিত হইবেন | এই আনন্দে তিনি নিজের অসুবিধার কথা ভুলিয়া যাইবেন | নিজের নাক কাটিয়া অপরের যাত্রাভঙ্গের ন্যায় সুখ পৃথিবীতে আর কিছুই নাই |

আমার ন্যায় অনলাইন-লেখকেরা demonetization লইয়া সোশ্যাল মিডিয়ায় ডিজিটাল বিপ্লব শুরু করিবে | অপরদিকে ডিজিটাল টেক-স্যাভি পাঠকগণ এই লেখা পড়িয়া আমায় গালমন্দ করিবেন |

© অর্ঘ্য দাস @ টুকটাক লেখালেখি, দুর্গানগর, 01-12-2016


Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ৩ - ঘন্টা, আলু এবং ব্রহ্ম

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ছাত্রদের দৈনন্দিন আবাসিক জীবনকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছে এই ছোট্ট ছড়াটা - “ নরেন্দ্রপুরে সময় ঘন্টাময় , খাদ্য আলুময় , চিন্তা ব্রহ্মময়  | ” অনেকদিন আগে শোনা এই ছড়ার রচয়িতার নাম আমার জানা নেই , কিন্তু ছড়াটা এতটাই প্রাসঙ্গিক যে এটা আমার মনের মধ্যে যেন গেঁথে গেছে  | ************************************************************ প্রথম ভাগ : ঘন্টা বাস্তবিকই আমাদের আবাসিক জীবন ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  |   ভোর পাঁচটায় rising bell শুনে ঘুম ভাঙতো , তারপর ঘন্টার তালে তালে সেই যে লেজ তুলে দৌড় শুরু হত , সেটা থামত রাত সাড়ে দশটা নাগাদ , ‘lights out’ এর ঘন্টাধ্বনি শুনে  |   চার বেলা ডাইনিং হলে খেতে যাওয়ার ঘন্টা , প্রার্থনা কক্ষে যাবার ঘন্টা , স্কুলে যাবার ঘন্টা , হোস্টেলে পড়া শুরু করার ঘন্টা , খেলতে যাবার ঘন্টা , রাত্রে শুতে যাবার ঘন্টা – আমাদের প্রতিটা কাজ ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  | প্রতিদিন এই সময়ে-অসময়ে ঘন্টা বাজানোর জন্য প্রত্যেক ভবনে (হস্টেলে) প্রতি মাসে দু’জন ছাত্রকে নিয়োগ করা হতো , এদের বলা হতো ‘...