Skip to main content

Demonetization 2016 : পর্ব ১ - দুই সহস্রের নূতন নোট এবং ভারতবাসী


নূতন দুই সহস্র টাকার নোটখানি জনমানসে গভীর প্রভাব ফেলিয়াছে |

একদল মানুষ বলিতেছে উহা শ্রীমদ্ভগবতগীতায় বর্ণিত আত্মার ন্যায় - অগ্নি ইহাকে দহন করিতে পারে না, বায়ু ইহাকে শুষ্ক করিতে পারে না, জল ইহাকে আর্দ্র করিতে পারে না | ইহা শুনিয়া আরেকদল বিজ্ঞানমনস্ক অত্যুৎসাহী মানুষ ইহা হাতেকলমে পরীক্ষা করিবার জন্য প্রাণ নিবেদিত করিয়াছে | আগুনে পোড়াইয়া, জলে সিক্ত করিয়া, টেবিল ফ্যানের ভিতর ছাড়িয়া দিয়া, দুইদিক হইতে টানিয়া, দুমড়াইয়া-মুচড়াইয়া, পুনরায় ইস্ত্রি করিয়া প্রভৃতি নানা উপায়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা চলিতেছে |

কেহ বলিতেছে নূতন নোটে নাকি ইলেকট্রনিক চিপ আছে, যাহা জিপিএস ট্র্যাকারের কাজ করিবে | কেহ বলিতেছে এই চিপে গান ভরিয়া মোবাইলে ব্যবহার করা যাইবে | কেহ বলিতেছে এই চিপস খাইয়া দেখিবে | একদল প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখিয়া আবদার করিয়াছে যে এই নোটের পরবর্তী সংস্করণে শুধু চিপ রাখিলেই চলিবে না, উহার সহিত ব্লুটুথ, হেডফোন ইত্যাদিও রাখিতে হইবে | আরেকদল দাবী করিয়াছে যে নোটে শুধু চিপস থাকিলেই চলিবে না, সঙ্গে কোল্ড ড্রিংক এবং বাদামও রাখিতে হইবে |

কেহ বলিতেছে এই নোট হইতে কালি উঠিতেছে | আগামী হোলিতে এই নোটের রং কীরূপে ব্যবহার করা যায় তাহা লইয়া রং-ব্যবসায়ীরা ভাবিতে শুরু করিয়াছেন |

সেলফি-উন্মাদ বালিকার দল হস্তে নূতন নোট লইয়া হংসচঞ্চু হইয়া ফটো তুলিয়া ফেসবুকে পোস্ট করিতেছে এবং বুভুক্ষু ছেলের দল উহাতে ঝড়ের বেগে লাইক দিতেছে | ইত্যবসরে 'সোনাম গুপ্তা' নামক এক তরুনীর নাম লইয়া সোশ্যাল মিডিয়ায় হইচই উঠিয়াছে | এই হুজুগে কত নোট লোকে কালি দিয়া লিখিয়া নোংরা করিতেছে তাহার হিসাব নাই !

ঘরে যেসব শিশুরা মোবাইল না পাইলে খাইতে চাহিত না তাহাদের এখন নূতন নোটের লোভ দেখাইয়া খাওয়ানো হইতেছে | একদল মহিলা বলিয়াছে এই বিশেষ গোলাপী রঙটি তাহাদের অত্যধিক প্রিয়, ফলে তাহারা নূতন ২০০০ টাকার নোট সিন্দুকে রাখিয়া দিবে, জীবদ্দশায় খরচ করিবে না | ইহা শুনিয়া উহাদের ব্যয়-সাশ্রয়ী পতিদেবতাগণ কিঞ্চিত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিয়াছেন | কিন্তু গতকাল দ্বিপ্রহরে কলকাতার একদল তরুণী দাবি তুলিয়াছেন যে নোটের বর্তমান গোলাপী রং বদলাইয়া 'Bright Ruby Berry' রাখিতে হইবে |

ইত্যবসরে খুচরো লইয়া দিকে দিকে ক্যাচাল বাঁধিতেছে | কেহ কেহ দু'টাকার লজেন্স ক্রয় করিয়া দোকানদারকে ২০০০ টাকার নোট দিতেছে | দোকানদার খুচরো দিতে অসমর্থ জানাইলে দুই পক্ষে বচসা বাধিতেছে এবং পথচারিগন তাহার মজা লইতেছে | এই ক্যাচালের দৃশ্য বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলগুলি লাইভ দেখাইয়া টিআরপি বাড়াইতেছে ||

© অর্ঘ্য দাস, টুকটাক লেখালেখি, দুর্গানগর, ১৭ -১১-২০১৬


Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...
  ঝাড়গ্রাম : বসন্ত ১৪২৭ স্কুল পাশ করেছি সতেরো বছর হয়ে গেল | তারপর এই প্রথম আমার সুযোগ হলো স্কুলের বন্ধুদের সাথে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার | দু তিনটে জায়গা মাথায় ছিল – ঘাটশিলা , ঝাড়গ্রাম, অযোধ্যা পাহাড় | এই বসন্তের শুরুতে তিনটে জায়গাই মনোরম | শেষমেষ ঝাড়গ্রাম WBFDC এর গেস্ট হাউসের ছবি দেখে সেটাই ফাইনাল করা হলো | 6 ই মার্চ, 2021, শনিবার          ডিমসেদ্ধ : সকাল সাড়ে দশটা - ক্যালেন্ডারে মার্চের শুরু হলেও বেজায় গরম. আমি দরদর করে ঘামছি ডেবরা চৌমাথায় (পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) দাঁড়িয়ে, হাতে আমার একুশটা হাঁসের ডিম সেদ্ধ, সাথে পেঁয়াজ লঙ্কা কুচি এবং সাদা ও কালো নুন | এক সপ্তাহ আগে করা প্ল্যান অনুযায়ী আমরা নাকি আগামী দু’ ঘন্টায় গাড়িতে বসে পার হেড পাঁচটা করে হাঁসের ডিম খাবো | ওদিকে সৌমাভ ওর গাড়িতে গোল (সুমিত্র) আর পকাই (অর্ক) কে নিয়ে আসছে কলকাতা থেকে |          বব মার্লে : শেষমেষ আমায় প্রায় ঘন্টা খানেক রোদে দাঁড় করানোর পর তাঁরা এলেন এবং বসন্তের এই অকাল দাবদাহ থেকে আমায় মুক্তি দিলেন | ঠান্ডা গাড়িতে উঠে ওদের আনা এগ স্যান্ডউইচ আর কোলাঘাট KFC থেকে কেনা মুর...