Skip to main content

বিরিয়ানি


বিরিয়ানি নিছক একটি ডিশ নয়, এটি একটি শিল্প | কোনো শিল্পই প্রাণহীন হতে পারে না | বিরিয়ানির প্রাণ ওই মাংসখন্ডে | শীতের সকালের কচি রোদের মতো তাকে হতে হবে নরম | মুখে দিয়ে যত কম চিবোতে হবে তত জমবে ভালো | এই মাংসের রকমভেদে বিরিয়ানির গুনগত প্রভেদ যে হবে তা বলাই বাহুল্য | খাসির মাংস হলে সেই বিরিয়ানি হবে অপার্থিব, স্বর্গীয় | মুরগীর মাংস হলে তা এক ঝটকায় স্বর্গ থেকে মর্ত্যে নেমে আসবে | তবে সেটাও খুব একটা খারাপ নয় | কিন্তু মাংস ছাড়া বিরিয়ানি ? ও জিনিস নিষ্প্রাণ | বিরিয়ানি সমাজের অপমান | খাদ্য-রসিকের কাছে মৃত্যুদন্ডের সমান |

শরতের আকাশে কখনো মেঘ থাকে কখনো রোদ | বিরিয়ানির রঙও হবে সেরকম - কোথাও সাদা, কোথাও হলুদ | দুই রঙের হবে পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান | হলুদ আর সাদা রং মিশে গিয়ে সব ভাতেরই রং এক হয়ে গেলে মজাটাই মাটি হয়ে যাবে | অন্যদিকে ফুলের মতো ঝরঝরে হতে হবে ভাত | না শক্ত, না নরম |

প্রাণের পাশাপাশি মনও থাকা জরুরি | ওই এক খন্ড আলু হলো বিরিয়ানির হৃদয় | আলু যত নরম, বিরিয়ানি তত আবেগী | বিরিয়ানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আলুর কিছুটা অংশ বাঁচিয়ে রাখতেই হবে | হৃদয়হীন জিনিস আদৌ উপভোগ্য হয় না !

অনেক জিনিসই আমাদের জীবনে আছে যেগুলোর উপযোগিতা আমরা সেভাবে অনুভব করি না, কিন্তু সেগুলো না থাকলে আমাদের চলেও না | বিরিয়ানির ভেতর একখানি সিদ্ধ ডিম সেরকমই জিনিস | বলা যেতে পারে ওটা আমাদের একটা অভ্যাস - অপ্রয়োজনীয় কিন্তু অপরিহার্য !!

নিছক বিরিয়ানি নয়, এক প্লেট ভালবাসা !!!

- © অর্ঘ্য দাস @ টুকটাক লেখালেখি - Tuktak Lekhalekhi, দুর্গানগর, ১২-১১-২০১৬


Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...
  ঝাড়গ্রাম : বসন্ত ১৪২৭ স্কুল পাশ করেছি সতেরো বছর হয়ে গেল | তারপর এই প্রথম আমার সুযোগ হলো স্কুলের বন্ধুদের সাথে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার | দু তিনটে জায়গা মাথায় ছিল – ঘাটশিলা , ঝাড়গ্রাম, অযোধ্যা পাহাড় | এই বসন্তের শুরুতে তিনটে জায়গাই মনোরম | শেষমেষ ঝাড়গ্রাম WBFDC এর গেস্ট হাউসের ছবি দেখে সেটাই ফাইনাল করা হলো | 6 ই মার্চ, 2021, শনিবার          ডিমসেদ্ধ : সকাল সাড়ে দশটা - ক্যালেন্ডারে মার্চের শুরু হলেও বেজায় গরম. আমি দরদর করে ঘামছি ডেবরা চৌমাথায় (পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) দাঁড়িয়ে, হাতে আমার একুশটা হাঁসের ডিম সেদ্ধ, সাথে পেঁয়াজ লঙ্কা কুচি এবং সাদা ও কালো নুন | এক সপ্তাহ আগে করা প্ল্যান অনুযায়ী আমরা নাকি আগামী দু’ ঘন্টায় গাড়িতে বসে পার হেড পাঁচটা করে হাঁসের ডিম খাবো | ওদিকে সৌমাভ ওর গাড়িতে গোল (সুমিত্র) আর পকাই (অর্ক) কে নিয়ে আসছে কলকাতা থেকে |          বব মার্লে : শেষমেষ আমায় প্রায় ঘন্টা খানেক রোদে দাঁড় করানোর পর তাঁরা এলেন এবং বসন্তের এই অকাল দাবদাহ থেকে আমায় মুক্তি দিলেন | ঠান্ডা গাড়িতে উঠে ওদের আনা এগ স্যান্ডউইচ আর কোলাঘাট KFC থেকে কেনা মুর...