Skip to main content

ধার্মিকের নাস্তিক সত্তা




মুখবন্ধ:

"We are all atheists,
about most of the gods......
Societies have ever believed in.
Some of us just go one god further.
- Richard Dawkins"

আলোচনা :

বিশ্বের প্রায় প্রতিটি মানুষের মধ্যে কমবেশি নাস্তিক সত্তা বিরাজমান |

|| হিন্দুদের কথা ||
(১) শতকরা নব্বই ভাগ হিন্দুই পৃথিবীর বাকি সব ধর্মের (যেমন: ইসলাম, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি) ভগবানে অবিশ্বাসী |
(২) নিজের ধর্মেরই সকল হিন্দু দেব-দেবীর উপর বিশ্বাস রাখেন এরকম সাচ্চা হিন্দু খুবই কম আছে | প্রত্যেকেরই দু’-পাঁচটি করে পার্সোনাল দেব-দেবী আছে, তাঁদেরই সে মান্য করে, বাকিরা হয় অগুরুত্বপূর্ণ বা অকার্যকরী !!
(৩) আঞ্চলিক ভিত্তিতে হিন্দুরা দেবদেবীকে মেনে থাকেন | যেমন - দক্ষিণী হিন্দুরা উত্তর ভারতীয় হিন্দু দেব-দেবীকে তেমন পাত্তা দেন না, সাধারণ বাঙ্গালী হিন্দু গণপতি বাপ্পা মোরিয়া নিয়ে কোনো উন্মাদনা প্রকাশ করেন না, উত্তরপ্রদেশী হিন্দুরা শীতলামার পুজো করেন না |
(৪) এছাড়াও কালের নিয়মে মানুষের ধর্মবিশ্বাসে পরিবর্তন আসে | প্রাচীন 33 রকম হিন্দু দেবদেবীর বেশিরভাগই কালের নিয়মে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছেন | এদের বেশিরভাগকেই আপনি নিজে মানেন না | যেমন ঋগবৈদিক যুগে হিন্দুদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেবতা ছিলেন ইন্দ্র | ঋগবেদের 1000 টি স্তোত্রের 289 টি স্তোত্র দেবরাজ ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে রচিত | কিন্তু আজকাল ইন্দ্রদেবকে তেমন কেউ মানে না | কজন হিন্দুর বাড়িতে ইন্দ্রের ছবি বা মূর্তিতে পুজো হয় ? কজন হিন্দু বিপদে পড়লে যেসব দেব-দেবীকে স্মরণ করেন তাদের মধ্যে ইন্দ্রদেবের নাম আছে ?

[বিঃ দ্রঃ - প্রাচীনযুগে 'কোটি' শব্দটি 'প্রকার' বুঝাতে ব্যবহৃত হতো, ফলে যে “৩৩ কোটি দেব-দেবী”র কথা আমরা বলে থাকি সেটা প্রকৃতপক্ষে ৩৩ রকম দেবদেবী | এই লিঙ্ক দেখুন -https://en.wikipedia.org/wiki/Thirty-three_gods ) | এই ৩৩ ‘কোটি’ দেবদেবীর ধারণা বৈদিক (এবং উত্তর-বৈদিক) যুগের | ঋগ্বেদ ও ভগবত পুরাণে এর উল্লেখ রয়েছে ]

(৫) হিন্দুধর্মের নানা শাখা যেমন - বৈষ্ণব, শাক্ত, শৈব ইত্যাদি - এরা হল একেশ্বরবাদী | মানে এর অনুগামীরা নিজেদের ঈশ্বর ছাড়া আর কাউকে মানেন না | বৈষ্ণব কেবল কৃষ্ণকে মানেন, শাক্ত কেবলমাত্র শক্তির উপাসনা করবেন, শৈব শুধুমাত্র শিবের উপাসনা করবেন ইত্যাদি ইত্যাদি |

||   ইসলাম ও খ্রিষ্ট ধর্মের কথা   ||
ইসলাম ও খ্রিস্টান - পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ (জনসংখ্যার নিরীখে) দুটি ধর্ম, এরা একেশ্বরবাদী | এরা কেবলমাত্র একটি ঈশ্বরে বিশ্বাসী | অর্থাৎ বাকি সকল ঈশ্বর / দেব-দেবীতে অবিশ্বাসী | মুসলমান ও খ্রিস্টান মিলিয়ে সারা বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ - প্রায় 53 % | তাহলে দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর অন্ততঃ 53% মানুষ একটি বাদে বাকি সকল (হিসাবে প্রায় 99.99%) ঈশ্বরে / দেব-দেবীতে অবিশ্বাসী !

উপসংহার:

সুতরাং দেখা যাচ্ছে 'যত মত তত পথ' - এই মতাদর্শে বিশ্বাসী গুটিকয়েক মানুষ ছাড়া প্রত্যেক আস্তিকই আদতে কমবেশি নাস্তিক !! কারণ তাঁরা এই পৃথিবীর অসংখ্য ধর্মের অসংখ্য দেবদেবীর সিংহভাগকেই অবিশ্বাস করেন |

- Arghya Das, Durganagar, 24-09-2016


Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...
  ঝাড়গ্রাম : বসন্ত ১৪২৭ স্কুল পাশ করেছি সতেরো বছর হয়ে গেল | তারপর এই প্রথম আমার সুযোগ হলো স্কুলের বন্ধুদের সাথে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার | দু তিনটে জায়গা মাথায় ছিল – ঘাটশিলা , ঝাড়গ্রাম, অযোধ্যা পাহাড় | এই বসন্তের শুরুতে তিনটে জায়গাই মনোরম | শেষমেষ ঝাড়গ্রাম WBFDC এর গেস্ট হাউসের ছবি দেখে সেটাই ফাইনাল করা হলো | 6 ই মার্চ, 2021, শনিবার          ডিমসেদ্ধ : সকাল সাড়ে দশটা - ক্যালেন্ডারে মার্চের শুরু হলেও বেজায় গরম. আমি দরদর করে ঘামছি ডেবরা চৌমাথায় (পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) দাঁড়িয়ে, হাতে আমার একুশটা হাঁসের ডিম সেদ্ধ, সাথে পেঁয়াজ লঙ্কা কুচি এবং সাদা ও কালো নুন | এক সপ্তাহ আগে করা প্ল্যান অনুযায়ী আমরা নাকি আগামী দু’ ঘন্টায় গাড়িতে বসে পার হেড পাঁচটা করে হাঁসের ডিম খাবো | ওদিকে সৌমাভ ওর গাড়িতে গোল (সুমিত্র) আর পকাই (অর্ক) কে নিয়ে আসছে কলকাতা থেকে |          বব মার্লে : শেষমেষ আমায় প্রায় ঘন্টা খানেক রোদে দাঁড় করানোর পর তাঁরা এলেন এবং বসন্তের এই অকাল দাবদাহ থেকে আমায় মুক্তি দিলেন | ঠান্ডা গাড়িতে উঠে ওদের আনা এগ স্যান্ডউইচ আর কোলাঘাট KFC থেকে কেনা মুর...