Skip to main content

"পানাসক্ত পান্নালালবাবু"

By pun-আসক্ত লেখক
...........................................................................................
জাপানে গিয়ে পান-না-লাল বাবু পানের খোঁজ করছেন হন্যে হয়ে | না-লাল পানই তাঁর চাই -- একদম ফুটফুটে সবুজ রঙের, নরম বাংলা পাতা | পানাসক্ত তিনি, কিন্তু শক্ত পান মোটেও পছন্দ না তাঁর | ছাপ-পান-নো দিন এখানে এসেছেন, আপাত ভাবে ভালোই আছেন, দিব্বি কাজ করছেন-খাচ্ছেন-ঘুমাচ্ছেন, কিন্তু ওই একটি জিনিসের অভাবে জীবনটা যেন পান-সে হয়ে যাচ্ছে | ভালো করে খুঁজলে এ দেশে বোধহয় পশ্চিমবাংলার প্রায় সব জিনিসই পাওয়া যায় - পানতুয়া, কাকাতুয়া, পানকৌড়ি, পানাপুকুর, চুরিপানা, পানি ফল, হাপানির ওষুধ, পান-উ ডিভিডি, জাপানি তেল এমনকি আম-পান্নার সরবত পর্যন্ত , কিন্তু ওই এক পানের বড় অভাব এখানে | এদেশে কিছুতেই পান খুঁজে পান না পান-না-লাল বাবু, ফলে যেন তড়পান !!

নিজের বাড়িতে থাকলে রোজ সকালবেলায় উঠে পানতির মধ্যে শুকনো লঙ্কা পোড়া, কাঁচা পেয়াঁজ, আলু-মাখা দিয়ে এক গাদা পানতা ভাত মেরে দেন পান্নালাল বাবু | মুখ ধুয়ে উঠে জর্দা-পান মুখে দেন তিনি | এই একটি ব্যাপারে আদ্যো-পান-তো বাঙালী তিনি | কিন্তু এদেশে এসব কিছুই হয় না | এখানে সকালে উঠে নিজে স্যান্ডউইচ বানিয়ে সেটা নাকে-মুখে গুঁজে অফিসে বেরোতে হয় তাঁকে | বেসরকারী কম-পানি-তে কর্মরত পান্নালাল বাবু কালাপানি পার হয়ে এই দ্বী-পান-তরে এসেছেন, অন সাইটে, দু'বছরের জন্য | বউ আর পোলা-পান দেশেই রেখে এসেছেন |

কাজের শেষে সন্ধ্যার মুখে ভাড়া নেওয়া অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে আসেন পান্নালাল বাবু | হাত মুখ ধুয়ে ইজি-চেয়ারে বসেন | এদেশ তো আর পানামা নয়, তাই পা দুটো উঠিয়েই বসেন তিনি ! পানপাত্রে একপেগ হুইস্কি ঢেলে টিভিটা চালান | এই সন্ধ্যের দিকে একটু অনুপান না করলে বড্ড একলা বোধ হয় তাঁর | ভারতের কয়েকটা মিউজিক চ্যানেল আসে এখানের টিভিতে, সেগুলোতে দু-তিনটে পানজাবী লারেলাপ্পা গান শোনেন | খানিক পরে উঠে গিয়ে রাতের রান্না চাপান | সঙ্গে এক কাপ চা পান করেন | আবার গিয়ে বসেন ইজিচেয়ারে | বাড়িতে এক-দুটো ফোন করেন | খানিক ল্যাপটপ নাড়াচাড়া করেন | রাত হয় | খেয়ে নেন | ঘুমাতে যান |

পরের দিনও এই ভাবেই কাটে | তার পরের দিনও | পানহীন সাদাকালো জীবন |

মাঝেমাঝে এই একঘেঁয়ে শহুরে জীবন আর ভালো লাগে না পান্নালাল বাবুর | ইচ্ছে করে নিশুতি রাতে বেরিয়ে পড়তে | ইচ্ছা করে অনেক অনেক দুরের কোনো এক নিঝুম গ্রামে পানাপুকুরের শ্যাওলা-ভরা সোপান বেয়ে শেষ ধাপে গিয়ে বসে পড়তে, জলে পা ডুবিয়ে | কিম্বা কোনো এক নাম না জানা নদীতে পানসি নিয়ে ভেসে পড়তে !

- © অর্ঘ্য দাস @টুকটাক লেখালেখি, দুর্গানগর, ২৯ -১০-২০১৬


Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ৩ - ঘন্টা, আলু এবং ব্রহ্ম

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ছাত্রদের দৈনন্দিন আবাসিক জীবনকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছে এই ছোট্ট ছড়াটা - “ নরেন্দ্রপুরে সময় ঘন্টাময় , খাদ্য আলুময় , চিন্তা ব্রহ্মময়  | ” অনেকদিন আগে শোনা এই ছড়ার রচয়িতার নাম আমার জানা নেই , কিন্তু ছড়াটা এতটাই প্রাসঙ্গিক যে এটা আমার মনের মধ্যে যেন গেঁথে গেছে  | ************************************************************ প্রথম ভাগ : ঘন্টা বাস্তবিকই আমাদের আবাসিক জীবন ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  |   ভোর পাঁচটায় rising bell শুনে ঘুম ভাঙতো , তারপর ঘন্টার তালে তালে সেই যে লেজ তুলে দৌড় শুরু হত , সেটা থামত রাত সাড়ে দশটা নাগাদ , ‘lights out’ এর ঘন্টাধ্বনি শুনে  |   চার বেলা ডাইনিং হলে খেতে যাওয়ার ঘন্টা , প্রার্থনা কক্ষে যাবার ঘন্টা , স্কুলে যাবার ঘন্টা , হোস্টেলে পড়া শুরু করার ঘন্টা , খেলতে যাবার ঘন্টা , রাত্রে শুতে যাবার ঘন্টা – আমাদের প্রতিটা কাজ ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  | প্রতিদিন এই সময়ে-অসময়ে ঘন্টা বাজানোর জন্য প্রত্যেক ভবনে (হস্টেলে) প্রতি মাসে দু’জন ছাত্রকে নিয়োগ করা হতো , এদের বলা হতো ‘...