Skip to main content

পুরোনো পুজো


আজকের গতিময়ে জীবনে সব কিছুই সহজলভ্য | দু'একটা উদাহরণ দেওয়া যাক -
amazonয়ে (বা shopclues কিম্বা e-Bayতে) আপনি অর্ডার করলেই বাড়ির দোরগোড়ায় এসে যাবে 'ঘুঁটে' | হ্যাঁ, একেবারে খাটি গোরুর খাঁটি গোবরে তৈরী ঘুঁটে - বারো পিস, আড়াইশো টাকায় ! (লিংক- পোস্টের নীচে)
কিম্বা শহরের দুষণে ব্যতিব্যস্ত হয়ে গেছেন, তাজা বাতাসে দু'দন্ড শ্বাস নেবেন ভাবছেন ? চাপ নেই, অনলাইনে অর্ডার করে দিন - এসে যাবে টিনের ক্যানে ভরা কানাডার লেকের বিশুদ্ধ বাতাস, কোল্ডড্রিংকের ক্যানের মতো জিনিস, টুক করে একটু হাওয়া খেয়ে নিন (লিংক- পোস্টের নীচে) | চিনে নাকি হরদম বিক্রি হচ্ছে এই জিনিস | এ জিনিস অবশ্য আমাদের দেশে এখনো আসেনি, তবে আসতেও বোধহয় বেশি দেরী নেই | বিশ্বায়ন এক জবরদস্ত চিজ !
নাকি আজকের গতিময় জীবনে কোনো কিছুই সহজলভ্য নয় ? বা আদৌ লভ্য নয় ? আধুনিকতার গ্রাসে হারিয়ে যাচ্ছে সব সহজ সরল জিনিস ? তাই কদিন আগেও যে জিনিস বিনামূল্যে (বা অতি সামান্য মূল্যে) অনায়াসে পাওয়া যেত সেটাই আজ কষ্ট করে অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হবে ?
কঠিন প্রশ্ন !
পঞ্চাশ বছর পর এই পুজোর সিজনেই হয়ত এদেশে অনলাইনে বিক্রি হবে কাশফুলের তোড়া, বুড়ো-হাবড়া মানুষগুলোর নস্টালজিয়াকে সুড়সুড়ি দিতে !
কিম্বা হয়তো সেই ক্যাপবন্দুক আর এক রিল ক্যাপ antique shopয়ে নিলামে চড়বে এক-দু'লাখ টাকায় !!
অথবা হয়তো পুজো পরিক্রমায় বিশেষ প্যাকেজ তৈরী করবে মন্ডপ কর্তৃপক্ষ যেখানে আপনি পেয়ে যাবেন 'পুজোর নির্মল আনন্দ', চড়া entry feeর বিনিময়ে | এই সব প্যান্ডেলে বসানো থাকবে নানা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি যাতে কিনা মন্ডপের গোটা চত্বরে সব মোবাইল ও ক্যামেরা স্যুইচ অফ হয়ে যাবে | ফলে সেলফি আর সোশ্যাল মিডিয়ায় আপডেট দেবার কোনো হাঙ্গামা বা দায় থাকবে না | ফলে আপনি প্রতিটা মুহূর্ত নিজের মনপ্রাণ দিয়ে অনুভব করতে পারবেন, আপনি ফিরে পাবেন বাঙালির সেই আদি ও অকৃত্রিম দুর্গাপুজোর আনন্দকে !!

© অর্ঘ্য দাস @ টুকটাক লেখালেখি, দুর্গানগর, ২৬-০৮-২০১৬
______________________________________________

ঘুঁটে কেনার লিংক

হাওয়া কেনার লিংক (হাওয়া-কোম্পানির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট)







Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ৩ - ঘন্টা, আলু এবং ব্রহ্ম

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ছাত্রদের দৈনন্দিন আবাসিক জীবনকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছে এই ছোট্ট ছড়াটা - “ নরেন্দ্রপুরে সময় ঘন্টাময় , খাদ্য আলুময় , চিন্তা ব্রহ্মময়  | ” অনেকদিন আগে শোনা এই ছড়ার রচয়িতার নাম আমার জানা নেই , কিন্তু ছড়াটা এতটাই প্রাসঙ্গিক যে এটা আমার মনের মধ্যে যেন গেঁথে গেছে  | ************************************************************ প্রথম ভাগ : ঘন্টা বাস্তবিকই আমাদের আবাসিক জীবন ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  |   ভোর পাঁচটায় rising bell শুনে ঘুম ভাঙতো , তারপর ঘন্টার তালে তালে সেই যে লেজ তুলে দৌড় শুরু হত , সেটা থামত রাত সাড়ে দশটা নাগাদ , ‘lights out’ এর ঘন্টাধ্বনি শুনে  |   চার বেলা ডাইনিং হলে খেতে যাওয়ার ঘন্টা , প্রার্থনা কক্ষে যাবার ঘন্টা , স্কুলে যাবার ঘন্টা , হোস্টেলে পড়া শুরু করার ঘন্টা , খেলতে যাবার ঘন্টা , রাত্রে শুতে যাবার ঘন্টা – আমাদের প্রতিটা কাজ ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  | প্রতিদিন এই সময়ে-অসময়ে ঘন্টা বাজানোর জন্য প্রত্যেক ভবনে (হস্টেলে) প্রতি মাসে দু’জন ছাত্রকে নিয়োগ করা হতো , এদের বলা হতো ‘...