আধুনিক প্রজন্মের
অধিকাংশ বাঙালিই ঘুরতে ভালবাসে | আমার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-পরিজন, পাড়াপড়শী সকলেই সুযোগ পেলেই হাপিস হয়ে যায় প্রকৃতির কোলে -
পাহাড়-জঙ্গল-মরুভূমি-নদী-সমুদ্রে | একঘেঁয়ে ক্লান্তিকর জীবনযাত্রা থেকে
সাময়িক মুক্তিলাভ করাই এই ভ্রমনের মুখ্য উদ্দেশ্য |
সাড়ে তিন বছর
মধ্যপ্রদেশের গোয়ালীয়রে থাকাকালীন একটা অদ্ভুত জিনিস খেয়াল করেছি যে অবাঙালি
ভারতীয়দের (মূলতঃ উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও
মধ্যভারতের বাসিন্দাদের) মধ্যে এই সপরিবারে nature-trip-এর প্রবণতাটা একেবারেই নেই | মানে ওরা যে ঘরকুনো সেটা বলছি না, বছরে ওরাও সপরিবারে এক-দুবার বেড়াতে বেরোয়, তবে সেটা তীর্থভ্রমনে | প্রকৃতির সঙ্গলাভ নয়, পুণ্য অর্জনই এই ভ্রমনের উদ্দেশ্য |
গোয়ালীয়রে এমন অনেক
ছাত্র / সহকর্মীকে দেখেছি যারা সপরিবারে এ যাবৎ প্রায় ১৫ -১৬ বার বৈষ্ণোদেবী দর্শন
করে এসেছে অথচ একবারও শ্রীনগর ঘুরতে যায়নি | ভুস্বর্গের এতটা কাছে গিয়েও তাদেরএকবারও ইচ্ছা হয়নি সেখানে
ঘুরতে যাওয়ার ! আরেকবার এক বিহারী নবদম্পতির কথা শুনেছিলাম যারা হনিমুন হিসাবে
চারধাম দর্শনের প্ল্যান করেছিল !
এদের কাছে সপরিবারে
বেড়াতে যাওয়া মানে মহারাষ্ট্রের সিরডিতে সাঁইবাবা কিম্বা উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির
অথবা অযোধ্যার হনুমানগড়ি দর্শন | কিম্বা বৃন্দাবন-মথুরা-হরিদ্বার-ঋষিকেশ-মাদুরাই-তিরুপতি | সেই সাথে ফি বছর
বছর কুম্ভমেলায় গিয়ে tea bag-এর মতো ডুব দিয়ে
আসাটা একেবারে আবশ্যক | কিন্তু এসব ফেলে প্রকৃতি ? নৈব নৈব চ !! পরজন্মের অ্যাকাউন্টে পুণ্যের ফিক্সড ডিপোজিট করার বদলে
পাহাড়-জঙ্গল-মরুভূমি-নদী-সমুদ্রে বেড়াতে গিয়ে অর্থ ও সময় অপচয় করা এদের কাছে
নিতান্তই অর্থহীন !!
© অর্ঘ্য দাস @ টুকটাক লেখালেখি, দুর্গানগর, ২৩-০৮-২০১৬
Comments
Post a Comment