মুরগী কি
লুপ্তপ্রায় প্রজাতির (endangered species) আওতায়
পড়ে ?
কলকাতা তথা
বৃহত্তর কোলকাতার নানা ফাস্টফুডের দোকানে ‘চিকেন পকোড়া’ নামক বস্তুটা চেখে দেখলে কিন্তু
সত্যিই এই সন্দেহটা মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে |
বস্তুতঃ ‘চিকেন
পকোড়া’ (চিকেন চপের কথা কিন্তু বলছি না) জিনিসটা খানিকটা ‘ভার্চুয়াল রিয়েলিটি’র
মতো | মানে, আপনি ভাবছেন যে জিনিসটা আছে, কিন্তু আসলে নেই |
মুরগী-ফুরগি
কিচ্ছু না, স্রেফ বাঁধাকপি | ডবল এক্সেল বাঁধাকপির খাঁচার ভেতর মাইক্রোস্কোপিক
মাংসের কণামাত্র, কিম্বা মাংস ছাড়ানো একটা হাড় | কখনো কখনো ওই কণাটাও খুঁজে পাওয়া
যায়না, শুধু পাওয়া যায় চিকেন মশলার গন্ধ ! মুখের মধ্যে বস্তুটি পুরে আপনি চিকেনের সন্ধানে
দাঁত চালাতে থাকেন, পাশ থেকে সেই মেহের আলী যেন বলে ওঠে, “সব ঝুঠ হ্যায়” !
আমাদের পাড়ার
বেশ কয়েকটা দোকানে এই বিচ্ছিরি বস্তুটা পাওয়া যায় | সবকটা দোকান থেকেই ঘুরিয়ে
ফিরিয়ে নানা সময়ে ওই জিনিটা চেখে দেখেছি | প্রতিবারে একই অভিজ্ঞতা | এক একটার পকোড়ার
দাম আজকের দিনে কমবেশি পনেরো টাকা, অথচ খুব বেশি হলে তাতে থাকে দু’টাকার বাঁধাকপি,
এক টাকার মাংস, পঞ্চাশ পয়সার তেল-মশলা, আর দোকানদারের একটাকার আনুসঙ্গিক খরচ !
আমরা যাদবপুর
ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন ‘মিলনদার ক্যান্টিন’-এর খাবারের গুণমান মান ছিল বেশ ভালো (অবশ্য
দামটাও বাকি ক্যান্টিনগুলোর তুলনায় একটু বেশি ছিল) | এই মিলনদার ক্যান্টিনে ‘চিকেন
পকোড়া’ নামক একটা বস্তু বিক্রি হতো | ‘বাঁধাকপির পকোড়া’র বদলে জিনিসটার নাম কেন যে
‘চিকেন পকোড়া’ রাখা হয়েছিল সেটা ওই জিনিসটা বেশ কয়েকবার খেয়েও আমার মাথায় ঢোকেনি |
শেষমেষ বাঁধাকপির সাথে চিকেনের সম্পর্কটা জানতে পারি ‘কাকা’র কাছ থেকে |
এইখানে
কাকার সাথে আপনাদের সামান্য পরিচয় করিয়ে দিই | ‘কাকা’ আমাদের সিনিয়র, আমি যখন B.Sc.
ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হই, তখন কাকা Ph.D. করছে | কাকার B.Sc. M.Sc. সবই যাদবপুর
থেকেই করা | কাকার কাকাত্ব প্রাপ্তির ইতিহাস আমার জানা নেই, সবার দেখাদেখি আমিও প্রথম
দিন থেকেই তাকে ‘কাকা’ বলেই ডাকতাম | মাঝেমাঝে কোনো আনকোরা নতুন ছাত্র ভুল
করে কাকাকে ‘কাকা দা’ বলে ডাকলে কাকা
নিজেই সেটা শুধরে দিত | কাকা ছিল ভারী আমুদে লোক , সম্ভবতঃ পুরো সাইন্স
ফ্যাকাল্টির ছাত্রছাত্রীদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় সিনিয়র |
এই কাকাই
একদিন আমকে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছিল ‘চিকেন পকোড়া’ নামকরণের তাৎপর্য | মিলনদার
ক্যান্টিনের পাশে একটা ঘাসের লন ছিল, সেটা দেখিয়ে কাকা বলেছিল -
“ওই দেখ, ওই খানে মিলনদা বাঁধাকপির চাষ করেছে | অন্যদিকে মিলনদা কয়েকটা মুরগিও পুষেছে | ওই মুরগিগুলো রোজ সকালে-বিকালে বাঁধাকপির পাতা খেতে আসে | এই হলো বাঁধাকপির ‘চিকেন-কানেকশন’ !! এই পাতাগুলোকেই ছিঁড়ে নিয়ে মিলনদা পকোড়া বানায় আর সেখানে পুরের মধ্যে চিকেন-মশলা যোগ করে দেয় | ব্যস, সেটা হয়ে যায় ‘চিকেন পকোড়া’ |
“ওই দেখ, ওই খানে মিলনদা বাঁধাকপির চাষ করেছে | অন্যদিকে মিলনদা কয়েকটা মুরগিও পুষেছে | ওই মুরগিগুলো রোজ সকালে-বিকালে বাঁধাকপির পাতা খেতে আসে | এই হলো বাঁধাকপির ‘চিকেন-কানেকশন’ !! এই পাতাগুলোকেই ছিঁড়ে নিয়ে মিলনদা পকোড়া বানায় আর সেখানে পুরের মধ্যে চিকেন-মশলা যোগ করে দেয় | ব্যস, সেটা হয়ে যায় ‘চিকেন পকোড়া’ |
এছাড়াও এই মুরগিগুলো পোষার পিছনে মিলনদার আরো একটা উদ্দেশ্য আছে, সেটা হলো – কেউ যদি ক্রেতা-সুরক্ষা দপ্তরে
মামলা ঠুকে দেয় এই বলে যে মিলনদা
অন্যায়ভাবে বাঁধাকপির পকোড়াকে চিকেন পকোড়া বলে চালিয়ে বেশি দাম নিচ্ছে তাহলে নাকি
ওই মুরগিগুলো মিলনদার হয়ে সাক্ষ্য দেবে এই বলে যে, “দোহাই ধর্মাবতার ! মিলনদা যে পকোড়াগুলো
বেচে সেগুলো সত্যিই চিকেন পকোড়া, শুধু তাই নয়, মাংসটা আমাদের গা থেকেই কেটে নেওয়া
হয় !!” "
অর্ঘ্য দাস @
টুকটাক লেখালেখি, দুর্গানগর, ১৯-০৬-২০১৬
Comments
Post a Comment