ঋণস্বীকার
:
ইন্টারনেট সার্ফ করতে করতে কোনো
ভালো ফটো বা কোটেশন পেলে আমি সবসময়েই সেটা নিজের কম্পুটারে সেভ করে রাখি | কদিন আগে সেই ফটোর ফোল্ডার
ঘাঁটতে গিয়ে দুটো ফটো আমার মনোযোগ আকর্ষণ করে | ফটোগুলো কবে কোত্থেকে জোগাড় করেছি আজ আর মনে নেই | এই লেখার মূল বক্তব্যটি ওই
দুটি ফটোর আলোচ্য বস্তু | সুতরাং, এই লেখাটিকে আমার ‘মৌলিক রচনা’ বলা যায় না, বরং এটা বলা যায় যে এই লেখাটা হল ওই দুটো ফটোর ভাব
সম্প্রসারণ ! লেখার আইডিয়াটা ধার করা, সেই কাঠামোর উপর ভাষার জামা পরিয়ে আমি আপনাদের সামনে পরিবেশন করছি !! ফটোদুটো আপনারা যথাস্থানে দেখতে পাবেন |
ভূমিকা:
আজকাল নানা
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে / দুর্ঘটনায় যখন কোনো জায়গা বিধ্বস্ত, তখন বিভিন্ন সোশ্যাল
মিডিয়া জুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষজনের জন্য ঈশ্বরের (ভগবান / আল্লাহ/ গড) কাছে
প্রার্থনার জন্য আবেদন জানিয়ে নানা রকম পোস্ট দেখা যায় |
এই রকম
যেকোনো বিপর্যয়ে দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষের এগিয়ে আসা উচিত এবং সাহায্যের হাত
বাড়িয়ে দেওয়া উচিত | এই সকল
বিপর্যয়ে আমাদের সকলেরই মন দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর
জন্য আমরা হৃদয় থেকে সমবেদনা অনুভব করি এবং সেজন্যই বিভিন্ন পোস্টে এই অভাগী
মানুষগুলোর জন্য ইশ্বরের কাছে প্রার্থনার আবেদন করা হয় |
নিজেদের
যে কোনো বিপদেও আমরা ঈশ্বরের কাছেই বিপন্মুক্তির জন্য প্রার্থনা জানাই |
আজকের
প্রশ্ন :
কিন্তু
এক্ষেত্রে লাখ টাকার প্রশ্ন হল, এই ক্ষেত্রে ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা আদৌ
যুক্তিসম্মত বা ফলদায়ক বা কার্যকর কিনা !!
কল্পনা (Assumption) :
ঈশ্বর
(ভগবান / আল্লাহ/ গড etc.) নামক বস্তুটি আছে কি নেই সে বিতর্কে কিন্তু আমি যাচ্ছি
না |
তর্কের
খাতিরে আজ ধরেই নেওয়া হল তিনি আছেন !
সুররাং, আজকের
আলোচনা একটি প্রশ্নেই সীমাবদ্ধ – “উক্ত ক্ষেত্রে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা কার্যকর নাকি অর্থহীন ?”
বিপর্যয়
ও ঈশ্বরের ভূমিকা :
এখন উক্ত
বিপর্যয় ও তাতে ঈশ্বরের ভূমিকা সম্বন্ধে চাররকম মতবাদ থাকতে পারে –
(১)
ঈশ্বর আগে থেকে এই বিপর্যয়ের সম্বন্ধে কিছুই জানতেন না
(২)
ঈশ্বর আগে থেকেই এই বিপর্যয় সম্বন্ধে অবগত ছিলেন, কিন্তু সদিচ্ছা থাকলেও এক্ষেত্রে
বিপর্যয় রোধে তিনি অক্ষম ছিলেন
(৩) ঈশ্বর
আগে থেকেই অবগত ছিলেন এবং তিনি চাইলেই এই বিপর্যয় তিনি রুখতে পারতেন, কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবেই এই বিপর্যয় রোধের
কোনো চেষ্টা তিনি করেননি
(৪)
ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই এই বিপর্যয় সংঘঠিত হয়েছে, অর্থাৎ তিনিই এই কান্ড ঘটিয়েছেন
![]() |
প্রথম ছবি |
ইশ্বর সম্বন্ধে দু’চার কথা -
এবারে
কিছু পুরোনো কথা ঝালিয়ে নেওয়া যাক |
বিশ্বাসীদের মতে -
ক) ঈশ্বর
সর্বজ্ঞানী, ফলে কোনো কিছুই তাঁর কাছে অজ্ঞেয়/অজ্ঞাত নয়
খ) ইশ্বর
সর্বশক্তিমান, ফলে তাঁর অসাধ্য কিছুই নেই
গ)
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত কর্মকান্ড তাঁর ইচ্ছাতেই সংঘঠিত হয়
পূর্বে উল্লিখিত চারটি
অপশনের প্রথম দুটো বাদ গেল :
তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো –
প্রথমতঃ,
ঈশ্বরের অজ্ঞাত কিছুই নেই, ফলে এই বিপর্যয়ের আগাম খবর নির্ঘাত তাঁর কাছে ছিল ! ফলে
উপরের চারটি অপশনের প্রথমটা কাটা গেল |
দ্বিতীয়ঃ,
কোনো কাজই তাঁর অসাধ্য নয়, ফলে একটা প্রাকৃতিক বিপর্যয় (বা আমাদের যে কোনো বিপদ) তিনি
রোধ করতে পারবেন না এটা হতে পারেনা ! ফলে দুই নম্বর অপশনটাও বাদ গেল |
পড়ে
রইল শেষ দু’টি অপশন :
ফলে
আমাদের কাছে পড়ে রইল অপশন ৩ এবং অপশন ৪ – অর্থাৎ হয় ইশ্বর ইচ্ছাকৃতভাবেই এই
বিপর্যয় রোধ করা থেকে বিরত ছিলেন নয়তো তিনিই এই বিপর্যয় ঘটিয়েছেন, মানে তিনিই এই
কর্মকান্ডের মূল হোতা !
অর্থাৎ
তিনি চেয়েছেন যে এই বিপর্যয় হোক ! তাঁর master-plan-এ রয়েছে এই বিনাশকার্য !!
তাহলে যখন
ঈশ্বর নিজেই চাইছেন যে বিপর্যয় হোক, তখন তাঁর কাছেই বিপর্যয় থেকে মুক্তির প্রার্থনা
করার কী সম্পূর্ণ অর্থহীন নয় ?? যিনি
চাইছেন যে মানুষগুলো দুঃখকষ্ট ভোগ করুক, তাঁর কাছে ওই মানুষগুলোর জন্য প্রার্থনা
জানিয়ে আর কী হবে ??
আমাদের
বৃথা আশা এবং নির্বুদ্ধিতা
সবই
ঈশ্বরে ইচ্ছাতেই হচ্ছে জেনেও আমরা বিপন্মুক্তির জন্য সেই ঈশ্বরের কাছেই প্রার্থনা
করি | মানে যিনি
আমাদের এই বিপদে ফেললেন তাঁর কাছেই আমরা পরিত্রানের প্রার্থনা জানাই !
আমরা আশা
করি যে আমাদের প্রার্থনাতে ঈশ্বর বিগলিত হয়ে নিজের ইচ্ছা (masterplan) বদল করবেন
এবং বিপর্যস্ত লোকগুলোকে (বা আমাদের) রক্ষা করবেন | ঈশ্বরকে ‘emotionally blackmail’ করার ইচ্ছা ? কি আশ্চর্য !!
আরেকটা
কথা - তিনি নাকি সর্বজ্ঞানী ও ভবিষ্যতদ্রষ্টা, তাহলে তিনি যদি জেনেই থাকেন যে
বিপর্যয়-পরবর্তী সময়ে ভক্তকুলের প্রার্থনা শুনে তিনি plan-A থেকে plan-Bতে শিফট
করবেন, তাহলে প্রথমে খামোখা plan-Aতে যাবেনই বা কেন ? যিনি প্রাজ্ঞশ্রেষ্ঠ, তিনি
এইরকম অবিবেচকের মত কাজ কিছুতেই
করবেন না !!
যখন
“যা হবার তা হবেই”, তখন প্রার্থনা করা কিসের জন্য ?
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের
সমস্ত কর্মকান্ডই নাকি ঈশ্বরের ইচ্ছাতে সংঘঠিত হয় | তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে, তাঁর ‘masterplan’-এর বিরুদ্ধে
কিছুই হবার নয় | কি, ঠিক তো ?
এখন যে মানুষগুলোর
জন্য প্রার্থনা করার আবেদন করা হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে যে কোনো একজনের কথা ধরুন –
(১) ঈশ্বর
যদি তাঁর জন্য ‘মৃত্যু’ বরাদ্দ করে রাখেন, তাহলে আমার-আপনার শত চেষ্টাতে বা প্রার্থনাতেও সে বাঁচবে না | ফলে এক্ষেত্রে
প্রার্থনা করা অর্থহীন |
(২) আর
ঈশ্বর যদি তাঁর জন্য ‘জীবন’ বরাদ্দ করে রাখেন, তাহলে সে বাঁচবেই – “রাখে হরি তো
মারে কে ?” ফলে এক্ষেত্রে প্রার্থনা করার কোনো দরকারই নেই, এমনিতেই ওটা হয়ে যাবে !
![]() |
দ্বিতীয় ছবি |
উপসংহার :
উক্ত আলোচনা থেকে একটাই সিদ্ধান্তে উপনীত
হওয়া যায়, যে ‘ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা’ করে কোনো লাভ নেই | বিধির যা
বিধান তা ঘটবেই, আমি প্রার্থনা করলেও ঘটবে, প্রার্থনা না করলেও ঘটবে !
শুধু তাই নয়, প্রার্থনা করে ঈশ্বরের
masterplan বদলানোর আশা করা মানে ঈশ্বরের কর্মপদ্ধতিকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দেওয়া
| যা অনিবার্য, যা তিনি আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছেন ভবিষ্যৎ দর্শন তথা ন্যায়-অন্যায়, মানুষের কর্মফলের চুলচেরা বিশেষণ করে, তা
শুধুমাত্র প্রার্থনার মাধ্যমে বদলে দেবার আশা করা শুধু মূর্খামিই নয়, ধৃষ্টতাও বটে
!
পুনশ্চঃ
–
(১) দয়া
করে কেউ বলবেন না “যে প্রার্থনার মাধ্যমে একটা ‘পসিটিভ এনার্জি’ তৈরী হয় যেটা
অসহায় মানুষগুলোর কাজে লাগে” | এরকম
কোনো কথা বিজ্ঞান বলে না | তাছাড়াও
এই মতবাদ অনুসারে প্রার্থনা একটি psychological ব্যাপার, এতে ইশ্বরের কোনো স্থান
নেই | আবার কেউ বলতে
পারেন, যে ‘act of prayer’ জিনিসটা ভগবানের উদ্দেশ্যে তা নয়, ওটা প্রকৃতির
উদ্দেশ্যে | এই কু-যুক্তির
বিরুদ্ধে আমার কিছুই বলার নেই !!
(২) যে
কোনো ধরনের বিরুদ্ধ মত যদি কেউ যুক্তি সহকারে এখানে পেশ করতে চান তিনি সুস্বাগত | কিন্তু কোনোপ্রকার ব্যক্তিগত আক্রমন বা উস্কানিমূলক
কথাবার্তা এখানে মোটেও কাম্য নয় !!
-
অর্ঘ্য দাস @ টুকটাক লেখালেখি,
দুর্গানগর, ২০-০৬-২০১৬
Prayer tao je manush nijer icchei kore na re pagla! "Sob i tar icche." Tini jake chaiben take dea pujo prarthona koraben. Jake chaiben na take dea koraben na. Tini sorbo soktiman eta mene nile onek dai dayitto eriea chola sombhob. Sob tini i janen. Ami ki jani?
ReplyDeleteসব তাঁরই ইচ্ছাধীন, আমার মনও তাঁর ইচ্ছাধীন, সুতরাং আমি যা ভাবছি, যা বলছি, যা লিখছি - সবই তো তাঁর ইচ্ছাধীন, তাই না ? সুতরাং বকলমে তিনিই আমাকে দিয়ে লেখাচ্ছেন যে "প্রার্থনা অর্থহীন", তাই তো ???
Delete