নিজস্ব মতামত দিলেই আজকাল মানুষজনকে লেবেলিং করা হচ্ছে | কদিন আগে গোমাংস বন্ধের
বিরুদ্ধে একটা লেখা লিখেছিলাম, তখন কিছু লোক ‘হিন্দু-বিরোধী’ বলে গাল দিয়েছিল | আরেকদিন ফেসবুকে দেখি একটি
মুসলিম অধ্যুষিত পেজে ইরফান আর ইউসূফ পাঠানের একসাথে একটা ছবি দিয়ে নিচে লেখা হয়েছে
“ভারত মাতার প্রকৃত বীর সন্তান” ! আমি শুধু বললাম যে (১) ক্রিকেট একটি খেলা, একে
দেশপ্রেমের সাথে গুলিয়ে ফেললে চলবে না (২) ক্রিকেটীয় দিক থেকেও বিচার করলেও তো এরা
‘গ্রেট’ নন, ফলে এরাই শুধুমাত্র ‘ভারত মাতার বীর সন্তান’
কেন ? এদের থেকে উঁচুদরের ভারতীয় ক্রিকেটাররা
নন কেন ? তাঁরা তো ভারতকে আরো অনেক বেশি ম্যাচে জিতিয়েছেন
!!.... ব্যাস, সঙ্গে সঙ্গে একজন অনেক জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা দিয়ে
দিল, বলল আমি নাকি ‘সাম্প্রদায়িক’,
‘মুসলিম-বিরোধী’ ইত্যাদি ইত্যাদি .....
কদিন আগে রোহিথ ভেমুলা
কান্ডে একজায়গায় বলার চেষ্টা করেছিলাম আফজল গুরুর মতো দেশের শত্রুর সমর্থনে কথা
বলাটাও কোনো ভালো কাজ না, যদিও সেই সঙ্গে একটা তাজা
প্রাণ অকালে ঝরে যাওয়ার জন্য দুঃখপ্রকাশও করেছিলাম, কিন্তু
একদল আমাকে 'ভক্ত/RSS-এর ধ্বজাধারী'
আরো কত কি বলল... এরপর যখন JNUএর কানহাইয়া
কুমার ও তার ছাত্র দল যখন আফজল গুরুর সমর্থনে মিছিল করছে বা সমস্ত ভারতীয় সেনাকে ‘ধর্ষক’ বলে লেবেলিং করছে কিম্বা বলছে ‘হামকো চাহিয়ে আজাদী’ তখনও আমি তার প্রতিবাদ করায়
ফেসবুকে কিছু লোক আমায় ‘ভক্ত’ বলে
অভিহিত করল .... কিন্তু আজ যখন আমি নিজের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বুড়ো-ভাম বহিরাগত
উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের তান্ডবের প্রতিবাদ করবো তখন আমি হয়ে যাব ‘বামফ্রন্টের দালাল’.....
আজকাল এমন অবস্থা
দাঁড়িয়েছে কোনো মতামতকেই ‘নিরপেক্ষ’ বলে মনে করতে লোকের আপত্তি | কোনো না কোনো দলের / সম্প্রদায়ের / গোষ্ঠির / ধর্মের ‘ট্যাগ’ সেই মতামতের গায়ে সাঁটিয়ে দিতেই হবে | বাম আমলে এই রাজ্যে
প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় ইংরাজি ভাষা চর্চা বন্ধের বিরুদ্ধে কিছু বললেই সেটা হবে ‘তৃণমূলের তাঁবেদারি ও সিপিয়েমের বিরুদ্ধাচারণ’ আর
সারদা-নারদ কান্ডের দাগীদের বিরুদ্ধে কিছু বললেই সেটা হয়ে যাবে ‘সিপিয়েমের তাঁবেদারি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধাচারণ’ | শিক্ষার ‘অনিলায়ন’ নিয়ে কিছু বললেই লাল গাধাগুলো তেড়ে আসবে
আবার ‘মমতায়ন’ নিয়ে বললে রে রে করে
উঠবে অশিক্ষিত ‘মানুষ’এর দল !!
অন্যদিকে হয়েছে কেলো ...
একদল চায় যে আপনার মনে কোনো কারণে যদি দেশপ্রেমের উদয় হয় তাহলেও আপনি বলতে পারবেন
না “ভারত মাতার জয়” কারণ ওটা বলার
অর্থ অন্ধ হিন্দুত্ববাদীদের সমর্থন করা, ফলে নিজের
সেক্যুলারত্ব বজার রাখতে গেলে ওই তিনটি শব্দ আপনি মোটেও উচ্চারণ করতে পারবেন না | অন্যদিকে আরেক দল চায়
প্রতি কথার শেষেই আপনি ওই তিনটি শব্দের লব্জ যোগ করুন,
কারণ ওগুলো না বলা মানেই দেশের সাথে গদ্দারী করা !! কি যুক্তি মাইরি
দুই যুযুধান দলের !!
© অর্ঘ্য দাস @ টুকটাক লেখালেখি, দুর্গানগর, ১৭-০৫-২০১৬
Comments
Post a Comment