Skip to main content

এই পথ যদি না শেষ হয়.............


গন্তব্য নাকি পথ - কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ? জীবনের ক্ষেত্রে কি উত্তর হবে জানি না ! তবে বেড়াতে গিয়ে অনেক সময়েই এমনটা হয়েছে যে গন্তব্যস্থলটা তেমন ভালো লাগেনি, কিন্ত যাওয়া-আসার সফরটুকু মন ভরিয়ে দিয়েছে | তখন সত্যি মনে হয়েছে "এই পথ যদি না শেষ হয়.............."
২০১১ সালের ডিসেম্বরে হায়দ্রাবাদ-আরাকু-ভাইজাগ বেড়াতে গিয়েছিলাম | সেই সফরেই ভাইজাগ থেকে আরাকু ভ্যালি গিয়েছিলাম বাসে করে | যাওয়ার পথে মেঘ আর কুয়াশায় মাখামাখি হয়ে থাকা রাস্তার দু'পাশের পাহাড়ি উপত্যকা ও জঙ্গলের রূপ মনকে এক অন্য জগতে নিয়ে গিয়েছিল | আরাকু ভ্যালি আমার মোটেও ভালো লাগেনি, কিন্তু এই রাস্তাটুকু ছিল এক বিশাল বড় প্রাপ্তি |
আরেকবারের ঘটনা | গিয়েছিলাম ওড়িশার সিমলিপাল জাতীয় উদ্যানে, জামশেদপুর থেকে সকাল চারটের সময় রওনা দিয়েছিলাম | ২০১৪ সালের জানুয়ারী মাস | সেবারও কুয়াশামাখা পরিবেশ কি যে ভালো লেগেছিল তা ভাষায় বোঝাতে পারব না | মাঝেমাঝে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দিতে হচ্ছিল, দৃশ্যমানতা প্রায় শূন্য হয়ে যাওয়াতে | কিন্তু কিসে কি !! গাড়ি দাঁড়ালেই তো আমাদের মজা বেশি | গাড়ি থেকে নেমে কুয়াশাকে যেন গায়ে মেখেে নিচ্ছিলাম আমরা | ... সিমলিপাল জঙ্গলকে মোটেও ভালো লাগেনি, বরং রীতিমতো 'অখাদ্য' লেগেছে বলা যায় (বাঘ-সিংহ-চিতার 'খাদ্য' হতে পারলেও অতটা 'অখাদ্য' লাগত না বোধহয়, অন্ততঃ সেই সুযোগে কিছু বন্য জন্তু তো দেখা যেত !!), কিন্তু ওই সকালের সফরটা এখনো স্মৃতিতে অক্ষত রয়েছে |
বহুবার এমন হয়েছে, পাহাড়ে বেড়াতে গেছি, রাস্তার মাঝে কিছু কিছু জায়গা এত মন টেনেছে যে মনে হয়েছে যে, 'আর এগিয়ে কাজ নেই, এখানে গ্রামবাসীদের কুটিরে থেকে যাই' | আশা রাখি ভবিষ্যতে কোনদিন সত্যিই হয়তো হঠাৎ করে নেমে পড়ব এরকম কোনো জায়গায়, ট্যুর প্ল্যানের তোয়াক্কা না করেই !!
কয়েকটা ছবি সঙ্গে দিলাম | আমার ক্যামেরাটি DSLR নয়, এবং ছবিগুলি edited নয় | ফলে প্রকৃতির যে রূপ দেখতে পাবেন, সেটি আসল, খালি চোখেও আপনিও ঠিক তেমনই দেখতে পেতেন যদি সেদিন আপনি আমার সঙ্গে থাকতেন !! বেড়ানোর ছবি এডিট করার পক্ষপাতি আমি একেবারেই নই | আরে বাবা, প্রকৃতি তো নিজেই এত সুন্দর আর বৈচিত্রময় !! ফলে নিজের চোখে জায়গাটাকে যেরকম দেখেছি, সেরকম করেই তো সকলের সামনে পরিবেশন করা উচিত, বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে প্রকৃতিতে কোনোরকম নকল সৌন্দর্য আরোপ করার দরকারটাই বা কিসের ?
(আর হ্যাঁ, মানছি আমাদের চোখের লেন্স ক্যামেরার লেন্সের তুলনায় বহুগুন নিখুঁত ও শক্তিশালী, ফলে নিজের চোখে জায়গাটাকে যেটুকু ভালো দেখছি পৃথিবীর কোনো ক্যামেরাই ততটা ভালো করে তাকে নজরবন্দী করতে পারে না, কিন্তু চোখ ও ক্যামেরার এই ফারাকটুকু ফটো এডিটিং সফটওয়্যার দূর তো করতে পারেই না, উপরন্তু একটা কৃত্রিমতা যোগ করে প্রকৃতির নিজস্বতাকে কেড়ে নেয় !)

নীচের প্রথম সাতটা ফটো আরাকু ভ্যালি যাওয়ার পথে আর শেষের ছবিটা সিমলিপাল যাবার পথে তোলা -










অর্ঘ্য দাস @ টুকটাক লেখালেখি, দুর্গানগর, ১৬-০৫-২০১৬

Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ৩ - ঘন্টা, আলু এবং ব্রহ্ম

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ছাত্রদের দৈনন্দিন আবাসিক জীবনকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছে এই ছোট্ট ছড়াটা - “ নরেন্দ্রপুরে সময় ঘন্টাময় , খাদ্য আলুময় , চিন্তা ব্রহ্মময়  | ” অনেকদিন আগে শোনা এই ছড়ার রচয়িতার নাম আমার জানা নেই , কিন্তু ছড়াটা এতটাই প্রাসঙ্গিক যে এটা আমার মনের মধ্যে যেন গেঁথে গেছে  | ************************************************************ প্রথম ভাগ : ঘন্টা বাস্তবিকই আমাদের আবাসিক জীবন ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  |   ভোর পাঁচটায় rising bell শুনে ঘুম ভাঙতো , তারপর ঘন্টার তালে তালে সেই যে লেজ তুলে দৌড় শুরু হত , সেটা থামত রাত সাড়ে দশটা নাগাদ , ‘lights out’ এর ঘন্টাধ্বনি শুনে  |   চার বেলা ডাইনিং হলে খেতে যাওয়ার ঘন্টা , প্রার্থনা কক্ষে যাবার ঘন্টা , স্কুলে যাবার ঘন্টা , হোস্টেলে পড়া শুরু করার ঘন্টা , খেলতে যাবার ঘন্টা , রাত্রে শুতে যাবার ঘন্টা – আমাদের প্রতিটা কাজ ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  | প্রতিদিন এই সময়ে-অসময়ে ঘন্টা বাজানোর জন্য প্রত্যেক ভবনে (হস্টেলে) প্রতি মাসে দু’জন ছাত্রকে নিয়োগ করা হতো , এদের বলা হতো ‘...