Skip to main content

ধর্মগ্রন্থের নির্দেশেই সন্ত্রাসবাদ ?


PK সিনেমার একটি সংলাপ আমার বড় ভালোলাগে, সেটা হল এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা যে ঈশ্বর, তাকে রক্ষার দায় বা ক্ষমতা কোনদিনই এই ক্ষুদ্র পৃথিবীর (সারা ব্রহ্মাণ্ডের তুলনায় যেটা প্রায় নগন্য বললেই চলে) ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণীর থাকতে পারে না | যিনি পরমশক্তিমান, তিনি নিজেকে নিজেই রক্ষা করতে পারেন |

কিন্তু আজকে মানুষ নিজ-নিজ ধর্ম তথা ঈশ্বরকে রক্ষার দায় নিজের কাঁধে চাপিয়ে অন্যধর্মাবলম্বী বা নিজের ধর্মের অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেমেছে | এই সহজ কথাটা মানুষের মাথায় ঢুকছে না যে - "অন্য কেউ আমার ধর্ম কিম্বা আমার ঈশ্বরকে মানুক বা না মানুক, ভালো কথা বলুক বা না বলুক, তাতে আমার ইশ্বরের কিছু যায় আসে না | কারণ আমার ঈশ্বর তো সর্বশক্তিমান !! ফলে সামান্য কতগুলো মানুষ কি ভাবলো বা বলল সেটাতে আমার ভগবানের চুলও বাঁকা হবে না | সামান্য মশার কামড়ে হাতির কি কিছু যায় আসে নাকি !!"

আজকে আমাদের পাশের রাষ্ট্র বাংলাদেশে যখন একের পর এক মক্তমনা ব্লগার হত্যা হচ্ছে কিম্বা তালিবান-ISIS- বোকো হারেমরা সারা বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাস চালাচ্ছে, তখন এই কথাটা আমরা মাঝেমাঝেই শুনে থাকি যে একে ‘ইসলামী-সন্ত্রাস’ কখনোই বলা উচিত নয় কারণ  সন্ত্রাসবাদীদের কোনো ধর্ম হয়না বা এই সন্ত্রাসবাদীরা ধর্মগ্রন্থের অপব্যাখ্যা করছে |

কিন্তু সত্যি কি তারা অপব্যাখ্যা করছে ? তাদের ধর্মগ্রন্থ (কোরান) কি তাদের বলছেনা যে পৃথিবীজুড়ে শুধুমাত্র তাদেরই ধর্ম ও তাদেরই ভগবান থাকা উচিত ? তাদের ধর্মগ্রন্থ কি বলছেনা ততক্ষণ পর্যন্ত লড়াই জারি রাখতে যতক্ষণ না তাদের ধর্মের কোনো বিরোধী থাকবে ? তাদের ধর্মগ্রন্থ কি "ধর্ম ও ঈশ্বরকে রক্ষার দায়" পরোক্ষভাবে জিহাদীদের হাতেই তুলে দিচ্ছে না ?

কোনো উত্তর দেবার আগে দয়া করে কোরান-এর 8.39 verseটি [ চ্যাপ্টার আট (8) -Surah Al-Anfal (The Spoils of War) এর উনচল্লিশ (39) নম্বর verse] পড়ে দেখুন ----

"And fight them until there is no more Fitnah (disbelief and polytheism: i.e. worshipping others besides Allah) and the religion (worship) will all be for Allah Alone [in the whole of the world ]. But if they cease (worshipping others besides Allah), then certainly, Allah is All-Seer of what they do."

ও.. বিশ্বাস হচ্ছে না ? ভাবছেন আমি ভুল তথ্য পরিবেশন করছি কিম্বা সঠিক তথ্যের ভুল ব্যাখ্যা করছি ???  এক কাজ করুন - নিজেই authentic জায়গা থেকে verseটি পড়ে নিন - google search দিন, হাজার-এক খানা ওয়েবসাইট আছে কোরানের ইংরাজি সংস্করণের, যেকোনো একটা খুলে দেখুন | যদি নিতান্তই আপনি খুঁজে না পান, সেক্ষেত্রে আমি কয়েকটা লিংক দিচ্ছি -


পুনশ্চঃ : কোনো ধর্মীয় বিদ্বেষের কারণে আমি লেখাটি লিখিনি, ব্যাপারটি আচমকা নজরে আসায় লেখাটি লিখছি | দয়া করে আপনারা এখানে হিন্দু-মুসলমান তরজা শুরু করবেন না | আমি বিশ্বাস করি,সব ধর্মই মূলগত দিক থেকে অভিন্ন, 'যত মত তত পথ' | সকল ধর্মেরই উদ্ভব হয়েছিল মানুষের হিতকল্যানেই, কিন্তু কালে কালে এই আসল উদ্দেশ্যটি বিস্মৃত হয়েছে, এবং আজ ধর্ম শুধুমাত্র ভড়ংবাজি, হানাহানিতে পরিণত হয়েছে |  ধর্মগ্রন্থের প্রণেতারাও কিন্তু সেই মানুষই, ঈশ্বর নন, ফলে ধর্মগ্রন্থগুলোও কখনো কখনো পক্ষপাতদুষ্ট, সংকীর্ণমনা, উস্কানিমূলক হয়ে উঠেছে | সেই বিষয়েই এই লেখার অবতারণা | সেইসঙ্গে আমার মনে হয়, অন্যান্য ধর্মের ধর্মগ্রন্থেও হয়তো সমজাতীয় কথা বলা আছে | যদি এরকম তথ্য আপনার কাছে থাকে তাহলে বিষয়টি(/গুলির) উপর আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন |



Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...
  ঝাড়গ্রাম : বসন্ত ১৪২৭ স্কুল পাশ করেছি সতেরো বছর হয়ে গেল | তারপর এই প্রথম আমার সুযোগ হলো স্কুলের বন্ধুদের সাথে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার | দু তিনটে জায়গা মাথায় ছিল – ঘাটশিলা , ঝাড়গ্রাম, অযোধ্যা পাহাড় | এই বসন্তের শুরুতে তিনটে জায়গাই মনোরম | শেষমেষ ঝাড়গ্রাম WBFDC এর গেস্ট হাউসের ছবি দেখে সেটাই ফাইনাল করা হলো | 6 ই মার্চ, 2021, শনিবার          ডিমসেদ্ধ : সকাল সাড়ে দশটা - ক্যালেন্ডারে মার্চের শুরু হলেও বেজায় গরম. আমি দরদর করে ঘামছি ডেবরা চৌমাথায় (পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) দাঁড়িয়ে, হাতে আমার একুশটা হাঁসের ডিম সেদ্ধ, সাথে পেঁয়াজ লঙ্কা কুচি এবং সাদা ও কালো নুন | এক সপ্তাহ আগে করা প্ল্যান অনুযায়ী আমরা নাকি আগামী দু’ ঘন্টায় গাড়িতে বসে পার হেড পাঁচটা করে হাঁসের ডিম খাবো | ওদিকে সৌমাভ ওর গাড়িতে গোল (সুমিত্র) আর পকাই (অর্ক) কে নিয়ে আসছে কলকাতা থেকে |          বব মার্লে : শেষমেষ আমায় প্রায় ঘন্টা খানেক রোদে দাঁড় করানোর পর তাঁরা এলেন এবং বসন্তের এই অকাল দাবদাহ থেকে আমায় মুক্তি দিলেন | ঠান্ডা গাড়িতে উঠে ওদের আনা এগ স্যান্ডউইচ আর কোলাঘাট KFC থেকে কেনা মুর...