বহুদিন শিয়ালদা
স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করেছি | ভীষণ তাড়াহুড়ো না থাকলে প্রতিবারই গেটের একটু দুরে
দাঁড়িয়ে আমি আমি টিটি (TTE)-দের খেয়াল করি | ভারী মজা লাগে | কি অসাধারণ পর্যবেক্ষণ শক্তি, কি
দুর্দান্ত ক্ষিপ্রতা এঁদের ! একশজন যাত্রী গা-ঘেঁসাঘেসি করে বেরোচ্ছে, তার মধ্যে ঢুকে
অবলীলায় খপ করে একজনের হাত ধরে ফেললেন, আর আশ্চর্যজনক ভাবে সেই লোকটার কাছেই টিকিট
নেই ! রোজ বাড়িতে বসে এরা নির্ঘাত ডিসকভারি বা অ্যানিমাল প্ল্যানেট চানেল খুলে বাঘ,
সিংহ কিম্বা কুমিরের এপিসোডগুলো দেখেন , কিভাবে শিকার ধরতে হয় তা আরো ভালো করে
শেখার জন্য |
২০০১ থেকে ২০০৩ –
এই পর্বে খড়্গপুর রেলওয়ে স্টেশনে একজন টিটি ছিলেন | তিনি দোর্দণ্ডপ্রতাপ ছিলেন কিনা
খবর নেই, তবু আশা করি পেশাগত ট্রেড সিক্রেটটা তিনি ওই সময়ের মধ্যেই আয়ত্তাধীন
করেছিলেন |
পরবর্তীকালে সেই শিকারী মার্কা চোখ, গতি এবং ইস্পাতকঠিন মানসিকতা হারিয়ে তো যায়ই
নি, বরং নিরন্তর অভ্যাসে বহুগুন বৃদ্ধি পেয়েছে |
আজ তাই বিপক্ষদলের
যেকোনো ব্যাটসম্যানের আসল ত্রাস সামনে ধেয়ে আসা বোলার কিম্বা ক্যাচপ্রত্যাশী
ফিল্ডার নয়, বরং উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা এই শিকারী | একটু ভুল করেছ তো ফেঁসেছ | চাচা চৌধুরীর থেকেও তুখোড় তাঁর মস্তিস্ক | বিদ্যুতসম গতি তাঁর স্টাম্পিংয়ের
! আর সবচেয়ে বড় হল শিকার ধরার পর এই শিকারীর নির্লিপ্ত মানসিকতা | যেন কিছুই হয়নি !
তাঁর ব্যাটিং রাহুল দ্রাবিড়ের মতো ব্যাকরণসম্মত নয়, বীরেন্দ্র
সেহবাগের মতো ধুন্দুমার নয়, সচিন তেন্ডুলকরের মত সুন্দরও নয়, কিন্তু ম্যাচ ফিনিশার
হিসাবে তিনি এঁদেরও আগে | ক্যাপ্টেন
হিসাবেও তিনি পূর্বজ সকলের চেয়ে এগিয়ে – পরিসংখ্যান, বুদ্ধিমত্তা, attitude
সবকিছুতেই | তবে ‘মুনিনাঞ্চ
মতিভ্রমঃ’, ফলে ভুল তিনিও করেন | ওই ভুলটুকু করেন বলেই বাঁচোয়া, তাঁকে তখন আমাদের মতই এই
গ্রহের বাসিন্দা বলে মনে হয় !!
এই কথাটা এদেশে
বহুল প্রচলিত – “There are only two religions in India: Cricket and
Bollywood” | সুতরাং পাঁচ পা হাঁটার পর মোড়ের মাথায় পাথর, গাছ,
সাধুবাবা ইত্যাদি দেখে প্রণাম করার দেশ ভারতবর্ষে যে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এর পর
থেকে ভগবানের মর্যাদা পাবেন এতে আশ্চর্যের কিছু নেই | আবার পরপর দু-তিনটে ম্যাচ খারাপ
খেললেই যে এই ভগবান ভক্তের মনের সিংহাসনচ্যুত হবেন সেই নিয়েও বিন্দুমাত্র সংশয়
আমার নেই |
ওসব ভগবান-টগবান
কিছু না, Mr. Cool আমার কাছে আদ্যন্ত এক entertainer | শুধুমাত্র ক্রিকেটীয় বিচারে
তাঁকে চরম দেশপ্রেমিক আখ্যা দিতেও আমার আপত্তি, আমার কাছে তিনি আপাদমস্তক একদন
পেশাদার যিনি তাঁর কাজে নিজের একশ শতাংশ দেন | আর যদি ব্যক্তিপূজা করতেই হয়,
তাহলে ওই ক্রিকেট-ফিকেট কিছু নয়, করব ভদ্রলোকের ওই শান্ত কিন্তু ইস্পাতকঠিন
মানসিকতার জন্য !
একটাই অনুরোধ – সঠিক
সময়ে অবসর নেবেন ! এসেছিলেন রাজার মতো, থেকেছেন রাজার মতো, যাওয়াটাও যেন সেরকম হয় | “লোকটা এতদিন কেন রয়েছে”র থেকে “ইস..
এত তাড়াতাড়ি সব ছেড়ে দিল ! নিশ্চিন্তে আরো দু’একটা বছর খেলতে পারত”টা অনেক বেশি
সম্মানের !
_______________________________
_____________________________
পুনশ্চঃ : আমার
একটা পুরোনো লেখা, কট্টরপন্থী ভারতীয় ক্রিকেট ফ্যানদের নিয়ে, পড়ে দেখতে পারেন
:
_________________
_______________________________________________
© অর্ঘ্য
দাস @ টুকটাক লেখালেখি, দুর্গানগর, ২৪-০৩-২০১৬
Comments
Post a Comment