Skip to main content

বিষয় : রাজনীতি

 ভূমিকা তথা কৈফিয়ৎ :
আজকাল রাজনৈতিক নেতারা মাঝেমাঝেই তাঁদের বক্তৃতার মাঝে বলেন ‘মানুষের এটাই ইচ্ছা’, ‘মানুষ জবাব দেবেন’, ‘মানুষ আমাদের পাশে আছেন’ ইত্যাদি ইত্যাদি | এখানে ‘মানুষ’ বলতে নেতারা কি বুঝাতে চান সেটি পুরোপুরি পরিষ্কার নয় ! সাধারণভাবে মনে হতে পারে যে ‘মানুষ’ বলতে এই নেতারা মূলতঃ ‘সাধারণ মানুষ’কে বোঝাতে চেয়েছেন | এইখানেই আমার কিঞ্চিত আপত্তি আছে | নেতারা যাদের কথা বলেছেন তারা আসলে তাঁদের দলের সমর্থকবৃন্দ, যারা প্রকৃতপক্ষেই ওই নেতাদের ‘পাশে আছে’, নেতাদের ইচ্ছাই তাদের ইচ্ছা এবং কিছু বেগড়বাই দেখলে এরাই বিরোধীপক্ষকে ‘মুখ-তোড়’ জবাব দেবে !!  অন্যদিকে ‘সাধারণ মানুষ’ বলতে আমজনতাকে বোঝায় যাঁরা কোনোরকম রাজনৈতিক ছত্রছায়ার বাইরে থাকেন, যে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি যাঁদের মনোভাব নিরপেক্ষ | একটু ভেবে দেখলেই বোঝা যায় নেতাদের ভাষণে উল্লিখিত ‘মানুষ’ আর এই  ‘আমজনতা’ কখনো এক হতে পারে না |
আমার বানানো একটা সুত্র আছে এই ‘সাধারণ মানুষ’ প্রসঙ্গে -
আমজনতা = দেশের মোট জনসংখ্যা  – {(শাসক + বিরোধীপক্ষ) + মিডিয়া + বুদ্ধিজীবী + মনীষীগণ}

আমি এক ক্ষুদ্র, স্বার্থান্বেষী সাধারণ মানুষ |আমার কাছে আমার নিজের এবং পরিবারের স্বার্থই সবচেয়ে বড় | কোনোরকম ‘ism’ (মতবাদ)-ই আমাকে আকর্ষণ করে না | আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞান জানি না, আমি সমাজবিপ্লবের স্বপ্ন দেখি না, আমি রুশো-ভলতেয়ার-ম্যাকিয়াভেলী-মার্কস-এঙ্গেলস-অ্যারিস্টট্ল-প্লেটো-মিল-চমস্কি পড়িনি – শুধু এঁদের নাম ইতিহাস বইয়ের পাতায় বা সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় কলামে দেখেছি | আজ এই লেখায় ‘রাজনীতি’ বিষয়টি সম্বন্ধে নিজের কিছু মতামত ব্যক্ত করব | অনেক বোদ্ধাই হয়তো প্রশ্ন তুলবেন যে এখানে বিষয়গুলোর অতি সরলীকরণ করা হয়েছে | তা আমি তো মশাই অত থিওরি পড়িনি, ফলে ঘুরিয়ে নাক ধরব কি করে বলুন তো ? আমি তো মশাই কোদালকে কোদাল বলতেই শিখেছি, এই অশিক্ষিত লোকটাকে আপনারা একটু ক্ষমা-ঘেন্না করে দেবেন দয়া করে !

রাজনীতি = স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার   
ভোটের আগে বিভিন্ন নেতার দলবদল, বিভিন্ন দলের ভোলবদল ইত্যাদি দেখে আমি নিদারুণ আনন্দ লাভ করি | একজন রাজনীতিবিদ, যিনি দু’দিন আগে পর্যন্ত নীতিগতভাবে একটি দলের বিরোধিতা করে এসেছেন, আজ তিনি কত সহজে নিজের দল ছেড়ে ওই দলে যোগ দিয়ে দেন ! বা একজন মাঝারি নেতা, যিনি এই সেদিনও নিজের দলের ও দলনেতা (/দলনেত্রীর) ভূয়সী প্রশংসা করে পথসভায় গলা ফাটিয়ে বক্তৃতা করেছেন, আজ তিনি সেই দল থেকে অবলীলায় বেরিয়ে নিজে একটি নতুন দল খুলে বসছেন ! অথবা দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন মতধারা পোষনকারী দল, যারা এই সেদিন পর্যন্ত একে অন্যকে গালাগালি, আক্রমন করে এসেছে, তারা আজ হরিহর আত্মা হয়ে জোট বাঁধছে !
এই প্রসঙ্গে তিনটে আলাদা উদাহরণ দেওয়া যায় | প্রথমটা আমার এক বন্ধু ‘ক’-এর | ‘ক’ পাঁচ বছর আগে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে একটি বহুজাতিক সংস্থা A-তে যোগ দেয় | এরপর ওখানে তিন বছর কাজ করার পর আরো অনেক ভালো প্যাকেজে আরেকটি বহুজাতিক সংস্থা ‘B’ তে যোগ দেয় |
দ্বিতীয় উদাহরণটা আমাদের পাড়ার ‘খ’ বাবুর | ‘খ’বাবু প্রায় পঁচিশ বছর একটি বেসরকারী সংস্থায় (ধরা যাক, সংস্থাটির নাম C ) কাজ করেছেন | অতঃপর বেশ খানিকটা অভিজ্ঞতা ও পয়সা উপার্জনের পর আজ থেকে প্রায় বছর খানেক আগে চাকরি থেকে অবসর নিয়ে নিজের একটি কন্সালটেন্সি ফার্ম খুলে বসেছেন |
তৃতীয় উদাহরণটা দুটি বেসরকারী সংস্থা D ও E-এর | একদা এই সংস্থাদুটি  একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল | পরে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে একটি সংস্থা অন্যটিতে মিশে (merge) যায় |
যে তিনটে উদাহরণ দিলাম তার সঙ্গে আমি ‘রাজনীতি’ বিষয়টার হুবহু মিল খুঁজে পাই | যে  উদাহরনগুলো দিয়েছি সেগুলোতে কিন্তু স্বার্থসিদ্ধিই (আর্থিক) সকল ঘটনাপ্রবাহের নিয়ন্ত্রক | সেখানে কিন্তু কোনো ‘নীতিগত আদর্শ’, ‘জনকল্যানের ইচ্ছা’ ইত্যাদি অন্য কোনো নিয়ন্ত্রক নেই | সুতরাং আমি মনে করি যে রাজনীতিতেও কেবলমাত্র নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধিই (অর্থ ও ক্ষমতা - এই দুটি বিষয় সংক্রান্ত)  সমস্ত ঘটনাপ্রবাহের নিয়ন্ত্রক | ‘নীতিগত আদর্শ’, ‘জনকল্যানের ব্রত’ ইত্যাদি সমস্তই ফাঁকা বুলি |
বস্তুতঃ আমি বিশ্বাস করি যে মানুষ মাত্রেই স্বার্থপর | যাঁরা ব্যতিক্রমী, তাঁদেরই আমরা মহাপুরুষ হিসাবে চিনি | সেই ব্যতিক্রমটুকু বাদ দিলে মানুষের জীবনের প্রায় প্রতিটি কার্যকলাপের পিছনেই থাকে স্বার্থ | এমনকি তথাকথিত ‘নিঃস্বার্থ’ উপকারের পিছনেও থাকে স্বার্থ – কখনো পুণ্যলাভ, কখনো প্রচারলাভ কিম্বা নিদেনপক্ষে আত্মতুষ্টি লাভ করা |

শাসকের ভূমিকা
এটা মনে রাখা দরকার শাসকদলও আদতে একটি রাজনৈতিক দল এবং সেটিই তাদের সর্বপ্রধান পরিচয় | ফলে শাসকদল যে সত্যিই নিঃস্বার্থ হয়ে জনসাধারণের জন্য কাজ করবেন সেটা আজকের দিনে ভাবাটাই বোকামো | শাসক কাজ করে ভয়েমেয়াদ শেষে সমূলে উত্পাটিত হওয়ার ভয়ে | রাজস্বের ষোলআনার দশআনা তাঁরা নিজেরা নানা উপায়ে খাবেন সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু এই গদি হারানোর ভয়টা থাকলে বাকি ছয় আনা দেশের ( বা রাজ্যের) উন্নয়নে ব্যয় করবেন | আর এই ভয়টা যদি তাঁদের মধ্যে না থাকে তাহলে ষোল আনাই যাবে তাঁদের পেটে | কোনোস্তরেই যদি এক শাসক দীর্ঘদিন জাঁকিয়ে বসেন তাহলে তাঁর গদি হারানোর ভয় ধীরে ধীরে উবে যেতে থাকে, ফলে উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে যেতে থাকে |

বিরোধীপক্ষের ভূমিকা :
নামেই লুকিয়ে আছে বিরোধীপক্ষের ভূমিকা !! শাসকদল ভালো-মন্দ যাই করুক না কেন তার বিরোধিতা করতে হবে ! দু’বছর আগে নিজেরা ক্ষমতায় থাকাকালীন কী কী করেছিলেন তা সমস্ত বিস্মৃত হয়ে আজ সেই একই কাজ করার জন্য সরকারের নিন্দা করাই এদের জীবনের প্রধানতম উদ্দেশ্য |
আমাদের রাজ্যের তথা দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটা কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে বর্তমান শাসক অপদার্থ সেই নিয়ে যেমন কোনো সন্দেহ নেই, সেরকম পূর্বতন শাসকও যে সমপরিমাণ (বা হয়তো তার থেকেও বেশি) অপদার্থ ছিলেন সে নিয়েও কোনো সংশয়ের অবকাশ নেই |

কোন রাজনৈতিক দল অপেক্ষাকৃত ভালো ?
কেউ নয় !! সব দলই চরিত্রে মূলতঃ একশুধু বহিরঙ্গে আলাদা আলাদা ! কোনটা ইন্ডিয়ান প্যানকোনোটা কমোড আর কোনটা খাটা পায়খানা – দেখতে সবকটা আলাদাকার্যপদ্ধতিও আলাদা আলাদাকিন্তু আসলে সব কটা সেই একটাই কাজে ব্যবহৃত হয় !! সুতরাং এদের মুখের লম্বাচওড়া বুলি শুনে মোহাচ্ছন্ন হলে চলবে না, একবার অন্ততঃ ভেবে দেখুন এদের কি দায় পড়েছে যে এরা রাজা হরিশ্চন্দ্রের মতো পরোপকারের ব্রত নিজেদের মাথায় চাপিয়ে নিয়েছে ? মনে রাখা জরুরি যে রাজনীতিটা আসলে তাদের রুজি-রুটি জোগাড়ের উপায়মাত্র, ঠিক যেরকম আপনি ব্যবসা বা চাকরি করে পরিবারের ভরণপোষণ করেন | তবুও তো আপনি সৎপথে উপার্জন করছেন কারোর ক্ষতি না করেই, আর এরা তো হেন অসদুপায় নেই যেটার আশ্রয় নেন না এবং নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ানো যে কোনো লোকের চরমতম ক্ষতি করতেও এঁরা পিছপা হন না |

নিয়মিত পালাবদল জরুরি
সাধারণ মানুষের উচিত তাঁদের নিজেদের স্বার্থেই  নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিয়মিত শাসক বদল করার | কোনো দলই ভালো না, কিন্তু কম্পিটিশনের বাজার তৈরী করতে পারলে তারা চেষ্টা করবে জনসাধারণের মন জয় করার | তাতে লাভ আমাদেরই |


দড়ি ধরে  মার টান, রাজা  হবে  খানখান !! ('হীরক রাজার দেশে')
এই যে কলেজসস্ট্রীটে বইয়ের দাম এত সস্তা, সেটা কেন ?  ওখানে আপনি গেলে সব দোকানদার হুমড়ি খেয়ে পরম সমাদরে আপনাকে অভ্যর্থনা করে কেন ? এক এবং একমাত্র উত্তর - কম্পিটিশন !! এক দোকানদার জানে যে সে বেশি দামে বই বেচলে তার কাছ থেকে কেউ কিনবে না, বরং তার চোখের সামনে দিয়ে ড্যাংড্যাং করে পাশের দোকান থেকে বই কিনে নিয়ে চলে যাবে ! সেরকম এই পার্টিগুলোরও এই ভয় থাকা জরুরি যে. পাঁচ বছর ভালো করে কাজ করি, নাহলে সামনের বার জনগণ অন্য কাউকে বেছে নেবে | তাহলেই হবে উন্নয়ন | আর যদি কারোর একচেটিয়া কারবার থাকে সেখানে জনগনের কোনো ভালো হবে না | আমাদের দুর্গানগরে একটাই মোটামুটি ভালো বইয়ের দোকান, ফলে তাদের একচেটিয়া কারবার, তারা জানে যে জনগণ তাদের কাছ থেকে বই কিনতে বাধ্য (ট্রেন-বাস ঠেঙিয়ে কলেজস্ট্রিট আর কজন লোক যাবে !) ফলে তারা বইয়ের দামে কোনো ছাড় দেয় না এবং কাস্টমারের সাথে মাঝেমাঝেই দুর্ব্যবহার করে বসে | একবার ভাবুন, এই দুর্গানগরেই যদি আরো তিন-চারটে ভালো বইয়ের দোকান থাকত তাহলে কি এই পরিস্থিতি থাকত ?

চিত্রঋণ - ইন্টারনেট 

২০১৬ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে দাঁড়িয়ে দু-একটি কথা :
প্রশ্ন : মানুষ কারে কয় ????
প্রথম রাজনীতিবিদের উত্তর  : ''মানুষ' তাঁরাই যারা আমাদের সমর্থক | তাই তো এবার ভোটের মুখে আমরা দুই ভাই মিলে যে জোট তৈরী করেছি, সেটার নাম দিয়েছি 'মানুষের জোট', খুব স্বাভাবিকভাবেই এই 'মানুষ' আর ওই মা-মাটি-মানুষের 'মানুষ' এক নয় ! বাংলার বুকে ৫ বছরের অপশাসনের অবসান করতে মানুষ আমাদের পাশে আছেন 
দ্বিতীয় রাজনীতিবিদের উত্তর  : আমাদের সমর্থকরাই মানুষ | মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন, থাকবেন, ছিলেন | আমাদের দলের ট্যাগ-লাইনেও তাই 'মানুষ' শব্দটার উল্লেখ আছে | ফলে যারা আমাদের দলে নেই তারা প্রকৃত অর্থেই 'অমানুষ' | বাংলার বুকে ৩৪ বছরের অপশাসনের দিনগুলো যাতে ফিরে না আসে সেটা নিশ্চিত করতেই 'মানুষ' আমাদের পাশে আছেন |
তৃতীয় রাজনীতিবিদের উত্তর  : আমাদের দলকে যারা সমর্থন করেন তাঁরাই মানুষ | বাংলার বুকে ৩৪+৫=৩৯ বছরের অপশাসন ঘুচিয়ে 'আচ্ছে দিন' আনার জন্য মানুষ আমাদেরকেই সমর্থন করছে |

আমার মতামত : ভোটের প্রাক্কালে 'মানুষ' শব্দটির অহরহ ব্যবহার হতে দেখি আমরা |  নেতাদের ভাষণে উল্লিখিত 'মানুষ' শব্দটি আসলে 'সমর্থক' শব্দটির code name | কারোর 'মান' আর 'হুঁশ' থাকলে সে কোনদিনই বাম-ডান-উপর-নীচ কোনো দলেরই তাঁবেদারি করতে পারবে না, ফলে তথাকথিত 'মানুষ' হবার কোনো উপায়ই তার নেই |

উপসংহার :
শেষে বলি, বহু বছর ধরে এই রাজ্যে ভোট যে রকম হচ্ছে তাকে নিচের চারটি বাক্যে তুলে ধরা হল -
ভোট - যেটা খাতায় কলমে হয়
ভাট - যেটা আসলে হয়ে থাকে
ভেট - যেটা শাসকপক্ষ দেয় সাধারণ মানুষকে (ভোট পাবার আশায়)
ভিটে - বিরোধীপক্ষকে ভোট দিলে যেটা কেড়ে নেওয়া হবে বলে শাসায় শাসকদল
___________________________________________
© অর্ঘ্য দাস @ টুকটাক লেখালেখি, দুর্গানগর, ১৯-০২-২০১৬


Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...
  ঝাড়গ্রাম : বসন্ত ১৪২৭ স্কুল পাশ করেছি সতেরো বছর হয়ে গেল | তারপর এই প্রথম আমার সুযোগ হলো স্কুলের বন্ধুদের সাথে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার | দু তিনটে জায়গা মাথায় ছিল – ঘাটশিলা , ঝাড়গ্রাম, অযোধ্যা পাহাড় | এই বসন্তের শুরুতে তিনটে জায়গাই মনোরম | শেষমেষ ঝাড়গ্রাম WBFDC এর গেস্ট হাউসের ছবি দেখে সেটাই ফাইনাল করা হলো | 6 ই মার্চ, 2021, শনিবার          ডিমসেদ্ধ : সকাল সাড়ে দশটা - ক্যালেন্ডারে মার্চের শুরু হলেও বেজায় গরম. আমি দরদর করে ঘামছি ডেবরা চৌমাথায় (পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) দাঁড়িয়ে, হাতে আমার একুশটা হাঁসের ডিম সেদ্ধ, সাথে পেঁয়াজ লঙ্কা কুচি এবং সাদা ও কালো নুন | এক সপ্তাহ আগে করা প্ল্যান অনুযায়ী আমরা নাকি আগামী দু’ ঘন্টায় গাড়িতে বসে পার হেড পাঁচটা করে হাঁসের ডিম খাবো | ওদিকে সৌমাভ ওর গাড়িতে গোল (সুমিত্র) আর পকাই (অর্ক) কে নিয়ে আসছে কলকাতা থেকে |          বব মার্লে : শেষমেষ আমায় প্রায় ঘন্টা খানেক রোদে দাঁড় করানোর পর তাঁরা এলেন এবং বসন্তের এই অকাল দাবদাহ থেকে আমায় মুক্তি দিলেন | ঠান্ডা গাড়িতে উঠে ওদের আনা এগ স্যান্ডউইচ আর কোলাঘাট KFC থেকে কেনা মুর...