Skip to main content

ব্যস্ততা

আজকালকার গতিময় জীবনে ফালতু সময় কার আছে ? Time is money, ফলে আমরা সবসময়েই সময় বাঁচানোর চেষ্টা করে থাকি | শিয়ালদা স্টেশন থেকে বেরিয়ে জগৎ সিনেমাহলের দিকে আসবার পথে কয়েকটা কাউন্টারে এক টাকা বেশি দাম দিয়ে লোকাল ট্রেনের সব স্টেশনের টিকিট পাওয়া যায়, অনেকেই শিয়ালদা স্টেশনের মেইন টিকিট কাউন্টারের লম্বা লাইন এড়াবার জন্য এখান থেকে টিকিট কাটেন | এক টাকার বিনিময়ে যদি দশ মিনিট সময় বাঁচে তাহলে মন্দ কি !!

চরম ব্যস্ততার প্রতিচ্ছবি দেখা যায় দমদমে মেট্রো থামার পর | পড়িমরি করে আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই খ্যাপা ষাঁড়ের মতো ছুটতে শুরু করে | একজন দু’জন নয়, প্রত্যেকে | টালিগঞ্জ, থুড়ি মহানায়ক উত্তমকুমারেও সেই এক দশা | এসব জায়গায় গেলে নিজেকে ভারী অকর্মণ্য মনে হয় | মনে মনে ভাবতে থাকি, “জগতে সবার এত কাজ, সবাই এত ব্যস্ত, শুধু কি আমারই কোনো তাড়াহুড়ো নেই ?”

আমাদের স্কুলে একজন শিক্ষক ছিলেন যিনি সব সময় দৌড়ের উপর থাকতেন | তিনি কোনো মেইন সাবজেক্ট পড়াতেন না, তিনি কর্মশিক্ষা ও শরীরশিক্ষার ক্লাস নিতেন, ক্লাসের সংখ্যাও যে খুব বেশি ছিল তা নয়, তবু সারাদিনে যখনই মুখোমুখি হতাম তখনই দেখতাম স্যার গম্ভীর মুখে হন্তদন্ত হয়ে চলাফেরা করছেন | শেষে আমাদের এক বন্ধু স্যারের এই সিনড্রোমের নাম দিয়েছিল ‘কর্মহীন ব্যস্ততা’ |

পশ্চিমবঙ্গের এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সদাব্যস্তময় | টিভিতে খবরে দেখতাম কোনো বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসবার পর সাংবাদিকরা তাঁকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছেন, তিনি একটুও না থেমে ঝড়ের গতিতে হাঁটতে হাঁটতেই তাঁর দায়সারা উত্তর দিচ্ছেন, ফলে ক্যামেরাম্যান সহ সাংবাদিকরাও তাঁর সাথে তাল মিলাতে প্রায় দৌড়চ্ছেন | সুস্থ হয়ে পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে দু-পাঁচটা প্রশ্নের উত্তর দিতেও তাঁর কোনদিন সময় ছিল না | তাঁর দীর্ঘ রাজত্বকালে সরকার কাজের কাজ প্রায় কিছুই করেনি, ফলে তাঁর ওই ব্যস্ততাও ‘কর্মহীন ব্যস্ততা’ ছিল কিনা সে সম্বন্ধেও সংশয় থেকেই যায় !!


হাওড়া স্টেশনের ওল্ড সেকশনে মহিলাদের জন্য একটি আলাদা টিকিট কাউন্টার আছে | ভিড়ে গুঁতোগুঁতি না করে যাতে অল্প সময়ের মধ্যেই মহিলারা টিকিট কাটতে পারেন সেজন্য এই ব্যবস্থা | মাস দুয়েক আগে একবার সকাল ছ’টা নাগাদ হাওড়া স্টেশনে যেতে হয়েছিল | সেদিন একটা অদ্ভুত জিনিস দেখেছিলাম | সেদিন দেখলাম মহিলারা সময় বাঁচাবার জন্য প্রত্যেকেই মহিলা কাউন্টারে লাইন দিয়েছেন, ফলে বিশাল লম্বা লাইন দু’বার পাক খেয়ে প্রায় গেট অব্দি পৌঁছে গেছে, অথচ বাকি কাউন্টারগুলোর কোনটাতেই জনা দশেকের বেশি লোক দাঁড়িয়ে নেই | নিচের ছবিটা এই ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ প্রাসঙ্গিক :



-অর্ঘ্য দাস, ২৪-০৭-২০১৫ 

Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ৩ - ঘন্টা, আলু এবং ব্রহ্ম

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ছাত্রদের দৈনন্দিন আবাসিক জীবনকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছে এই ছোট্ট ছড়াটা - “ নরেন্দ্রপুরে সময় ঘন্টাময় , খাদ্য আলুময় , চিন্তা ব্রহ্মময়  | ” অনেকদিন আগে শোনা এই ছড়ার রচয়িতার নাম আমার জানা নেই , কিন্তু ছড়াটা এতটাই প্রাসঙ্গিক যে এটা আমার মনের মধ্যে যেন গেঁথে গেছে  | ************************************************************ প্রথম ভাগ : ঘন্টা বাস্তবিকই আমাদের আবাসিক জীবন ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  |   ভোর পাঁচটায় rising bell শুনে ঘুম ভাঙতো , তারপর ঘন্টার তালে তালে সেই যে লেজ তুলে দৌড় শুরু হত , সেটা থামত রাত সাড়ে দশটা নাগাদ , ‘lights out’ এর ঘন্টাধ্বনি শুনে  |   চার বেলা ডাইনিং হলে খেতে যাওয়ার ঘন্টা , প্রার্থনা কক্ষে যাবার ঘন্টা , স্কুলে যাবার ঘন্টা , হোস্টেলে পড়া শুরু করার ঘন্টা , খেলতে যাবার ঘন্টা , রাত্রে শুতে যাবার ঘন্টা – আমাদের প্রতিটা কাজ ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  | প্রতিদিন এই সময়ে-অসময়ে ঘন্টা বাজানোর জন্য প্রত্যেক ভবনে (হস্টেলে) প্রতি মাসে দু’জন ছাত্রকে নিয়োগ করা হতো , এদের বলা হতো ‘...