Article no. - 23
আজ থেকে প্রায় পনেরো বছর
আগের কথা | নদিয়া জেলার ‘বগুলা’ নামক জায়গায় আমার এক পিসি থাকেন, তাঁর বাড়ি আমরা
সেবার বেড়াতে গিয়েছি | সেসময় বগুলা ছিল একেবারে গন্ডগ্রাম, পিসির বাড়ির একপাশে ছিল
বিশাল ভূতুড়ে বাঁশ বন, আর আরেকদিকে ছিল ধান ক্ষেত | পিসির মেয়ে, মানে আমার পিসতুতো
দিদির শ্বশুরবাড়ি ছিল ওই পাড়াতেই | সেই দিদির ছেলে তখন বোধহয় ক্লাস ওয়ানে পড়ে,
স্কুল বাড়ির পাশেই – সরকারী প্রাথমিক স্কুল | ক্লাসরুমের মেঝেতে ছেলেরা বস্তা,
চাটাই ইত্যাদি পেতে বসত | স্কুলে মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা না থাকলেও ছাত্র-ছাত্রীদের
চাল, ছাতু ইত্যাদি দেওয়া হতো যা তারা বাড়ি নিয়ে আসত |
আমার এই ভাগ্নেটি প্রতিদিন
সকালে বই-খাতা ভর্তি টিনের বাক্স হাতে নিয়ে, একটা ভাঁজ করা ছোট পাটের বস্তা
বগলদাবা করে স্কুলে যেত আর ঘন্টা দুই-তিন পর আনন্দে তিড়িং-বিড়িং করতে করতে দৌড়ে
দৌড়ে বাড়ি ফিরত | একদিন তার সাথে গল্প করতে করতে তাকে স্কুলসংক্রান্ত দুটো প্রশ্ন
করেছিলাম | সরল শিশুমনের সেই উত্তরদুটো আমার সারাজীবন মনে থাকবে |
প্রথম প্রশ্ন ছিল, “তুমি
স্কুলে কি নিয়ে যাও ?”
আমি আশা করেছিলাম উত্তরটা
হবে বইপত্র, খাতা, পেন-পেন্সিল ইত্যাদি |
ভাগ্নে উত্তর দিল, “বস্তা”
|
দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, “স্কুল
থেকে তোমাদের কি দেয় ?”
উত্তরটা ছাতু-চিঁড়ে জাতীয়
হবে বলেই আশা করেছিলাম | ভেবেছিলাম খুব আলাদা হলে হয়ত বলবে ‘পড়া দেয়’ কিম্বা
‘হোমটাস্ক দেয়’ |
ভাগ্নের উত্তর, “ছুটি দেয়
|”
সত্যিই, একটা চার-পাঁচ
বছরের বাচ্চার কাছে স্কুলশেষের ছুটির ঘন্টার থেকে আনন্দদায়ক আর কি-ই বা হতে পারে !
_______________
© অর্ঘ্য দাস
দুর্গানগর, ১৩-০৬-২০১৫
Comments
Post a Comment