Skip to main content

জামাইষষ্ঠী


দিন দুয়েক আগে বিগ বাজারে গিয়ে শুনি তারঃস্বরে মাইকে ঘোষণা হচ্ছে ‘আমার জামাই সেরা জামাই’ কনটেস্টের | প্রত্যেক শাশুড়িকে আহ্বান জানানো হচ্ছে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবার জন্য |

আজ খবরের কাগজে পড়লাম এই গরমের দুপুরে বয়স্ক মানুষেরা ইডেনের আইপিএল ফাইনালের টিকিটের জন্য কাউন্টারে লাইন দিচ্ছেন | ফাইনাল খেলাটা যে জামাইষষ্ঠীর দিনেই !! ক্রিকেটপাগল জামাই বাবাজিকে একটা টিকিট না দিতে পারলে যে শ্বশুরের মান-সম্মান থাকবে না !!! মনে আছে এরকমই একটা খবর আগের বছরেও পড়েছিলাম |

একটা জিনিস কিছুতেই আমার মাথায় ঢোকে না | জামাইষষ্ঠী নামক উৎসবটি যদি জামাইকে আদর আপ্যায়ন করবার জন্যই সৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলে সেটাকে বছরের উষ্ণতম দিনগুলোর একটায় ফেলা হল কেন ! আপনি বলবেন এটা তো আর ইচ্ছামত দিনে করা যায় না, এটা হয় রীতিমতো পঞ্জিকা দেখে হিন্দুশাস্ত্র মতে | আমি বলবো এই নিয়মও তো মানুষেরই বানানো, গ্রহ-নক্ষত্রের গতিপথের সাথে জামাই-আপ্যায়নের বিন্দুমাত্র যোগাযোগ নেই, ফলে যখন এই প্রথাটির প্রচলন হচ্ছে তখন শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিতেরা এই অনুষ্ঠানটির জন্য শীতকালের কোনো একটা দিন বেছে নিলেই তো পারতেন | আরেকটা যুক্তি শুনলাম যে বছরের এই সময়েই পাকা আম-কাঁঠাল পাওয়া যায়, যেগুলো কিনা অতি প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালিদের আদর-আপ্যায়নের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, ফলে জামাইষষ্ঠী উপুযুক্ত সময় হলো এই কাঠফাটা জ্যৈষ্ঠ মাস | কিন্তু এক্ষেত্রে আমার বক্তব্য হল পাকা আম-কাঁঠাল উপলব্ধ হলেও এই গরমে  মাংস-পোলাও-বিরিয়ানি-ইলিশ ভাঁপা-চিংড়ি মালাইকারি কিন্তু মোটেই আরাম করে খাওয়া যায় না | যে লোকটাকে এত আদর-যত্ন করা হচ্ছে সে বেচারা যদি সারাদিন গরমের চোটে হাঁসফাঁসই করতে থাকে তাহলে আর অনুষ্ঠানের সার্থকতা কোথায় ? শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র আর ক’জনের ঘরে আছে !

সে যাই হোক, সকল জামাই বাবাজির প্রতি আমার শুভেচ্ছা রইলো | (এবছর নানা কারণ বশতঃ আমি নিজে শ্বশুরবাড়ি যেতে পারছি না জামাইষষ্ঠী করতে | শ্বশুর-শাশুড়িকে জানিয়েছি যে অকাল-জামাইষষ্ঠী করতে আমি যাব অক্টোবর-নভেম্বর মাসে |) আপনারা ভালো থাকুন, শাশুড়ির আদর-যত্ন উপভোগ করুন | সঙ্গে রাখুন হজম, পেট খারাপের ওষুধ | ডিহাইড্রেশন থেকে বাঁচতে নুন-চিনির সরবত কিম্বা গ্লুকন-ডির জল খান |

আরেকটা কথা, ফেসবুকে এক বন্ধুর শেয়ার করা পোস্টে দেখলাম একজন লেখিকা একটি মজার ছড়া লিখেছেন জামাইদের নিয়ে | ছড়াটি এইরূপ:

               # সমস্ত ভাল ছেলেদের জন্য: #

          গরমকালে সাঁতার পুলে,
          সুন্দরীদের কোলে তুলে,
          করে এলাম এতটা কাল দেদার ফস্টিনস্টি |

          এখন আমি ভাল ছেলে,
          সব ভুলে যাই বৌকে পেলে,
          পাঞ্জাবীতে বোতাম এঁটে করি জামাইষষ্ঠী !

পাঠকদের জানাই, উপরের ছড়াটির নিঃসন্দেহে ভালো, তবু কেন জানি আমার মনে হয়েছে এটি কিঞ্চিৎ ‘racist’ কারণ বিবাহ-পূর্ব ‘ফস্টিনস্টি’তে কেবলমাত্র ছেলেদের দোষ দেওয়াটা অনুচিত | ফলে ব্যাপারটা ‘balance’ করবার জন্য একটা পালটি-ছড়া আমি লিখে ফেলেছি, আপনারা পড়ে দেখুন কেমন হয়েছে |

            # সমস্ত ভালো মেয়েদের জন্য : #

          বিয়ের আগে গরমকালে সাঁতার পুলে,
          টু-পিস্ পরে প্রেমিকদের কোলে,
          করে এসেছি দেদার কান্ড দুষ্টুমিষ্টি |

          এখন বাচ্চা নিয়ে কোলে,
          ঘোমটা দিয়ে শাড়ির আঁচলে,
          বরকে নিয়ে চলি বাপের বাড়ি, উপলক্ষ্য জামাইষষ্ঠী !! 

___________________
© অর্ঘ্য দাস
দুর্গানগর, ২৩-০৫-২০১৫ 



 

Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...
  ঝাড়গ্রাম : বসন্ত ১৪২৭ স্কুল পাশ করেছি সতেরো বছর হয়ে গেল | তারপর এই প্রথম আমার সুযোগ হলো স্কুলের বন্ধুদের সাথে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার | দু তিনটে জায়গা মাথায় ছিল – ঘাটশিলা , ঝাড়গ্রাম, অযোধ্যা পাহাড় | এই বসন্তের শুরুতে তিনটে জায়গাই মনোরম | শেষমেষ ঝাড়গ্রাম WBFDC এর গেস্ট হাউসের ছবি দেখে সেটাই ফাইনাল করা হলো | 6 ই মার্চ, 2021, শনিবার          ডিমসেদ্ধ : সকাল সাড়ে দশটা - ক্যালেন্ডারে মার্চের শুরু হলেও বেজায় গরম. আমি দরদর করে ঘামছি ডেবরা চৌমাথায় (পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) দাঁড়িয়ে, হাতে আমার একুশটা হাঁসের ডিম সেদ্ধ, সাথে পেঁয়াজ লঙ্কা কুচি এবং সাদা ও কালো নুন | এক সপ্তাহ আগে করা প্ল্যান অনুযায়ী আমরা নাকি আগামী দু’ ঘন্টায় গাড়িতে বসে পার হেড পাঁচটা করে হাঁসের ডিম খাবো | ওদিকে সৌমাভ ওর গাড়িতে গোল (সুমিত্র) আর পকাই (অর্ক) কে নিয়ে আসছে কলকাতা থেকে |          বব মার্লে : শেষমেষ আমায় প্রায় ঘন্টা খানেক রোদে দাঁড় করানোর পর তাঁরা এলেন এবং বসন্তের এই অকাল দাবদাহ থেকে আমায় মুক্তি দিলেন | ঠান্ডা গাড়িতে উঠে ওদের আনা এগ স্যান্ডউইচ আর কোলাঘাট KFC থেকে কেনা মুর...