মাটি একটু কেঁপে উঠতেই
ফেসবুক স্টেটাস আপডেট “উরিব্বাবা !! ভূমিকম্প !” সঙ্গে state of mind যেমন
‘feeling thrilled’ বা ‘feeling scared’ , সঙ্গে একটি emoji ফ্রি |
যেন সারা বিশ্ব বলবে,
“অসংখ্য ধন্যবাদ দাদাবাবু /বৌদিমনি | আপনি
না বললে আমরা জানতেই পারতাম না |”
এরপর যখন নেপালের সংবাদটা
মিডিয়ায় আছড়ে পড়ল, তখন শুরু হলো আরেক কেত্তন | ধ্বংসলীলা হলো নেপালে, আর কোলকাতার
বুকে বসে নিজেকে ‘safe’ marking করা | এক বন্ধু সেদিন জানালো যে তার এক পরিচিত ব্যক্তি সাত সমুদ্র তেরো নদীর
পারে সুদূর আমেরিকায় বসে নিজেকে safe মার্ক করেছে |
অসংখ্য ধন্যবাদ সেইসব
হুজুগে পাবলিককে যারা জানিয়েছে যে তারা ভালো আছে | বাকি দুনিয়া তো দুশ্চিন্তায়
প্রায় মরতে বসেছিল !!
আক্ষরিক অর্থেই আদিখ্যেতার
আরেক নাম হলো ‘স্টেটাস আপডেট’ !
বাঙালিদের আঁতলামি করার মূল
বিষয় প্রধানতঃ চারটি – সাহিত্য, সিনেমা, খেলা ও রাজনীতি | এবং এই আঁতলামি করার
জায়গা মূলতঃ দুটি- চায়ের দোকান এবং ফেসবুক |
সুচিত্রা ভট্টাচার্য্য মারা
গেলেন, তো সেই মতো একটা স্টেটাস আপডেট দেওয়াটা কর্তব্য | সুতরাং ফেসবুক ভেসে গেল
আপডেটে | যে কোনদিন ওঁনার লেখা একটা বইও পড়েনি সেও উইকিপেডিয়া থেকে দু-তিনটে তথ্য
জোগাড় করে মুখ(face)-বুকে টাঙ্গালো | আর যারা পড়েছে তারা শোকপ্রকাশের পাশাপাশি
খানিক নিজের বিদ্যার জাহিরও করলো | আফটার অল তারা যে কতটা সাহিত্যবোদ্ধা সেটা
জানাবার একটা ভালো প্ল্যাটফর্ম হাতে এসেছে, এ সুযোগ ছাড়া যায় না | একইসাথে
রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিনে ফেসবুকের দেওয়াল ছয়লাপ হয়ে যায় সাহিত্য-আঁতেলদের
আত্ম-বিজ্ঞাপনে | অন্যদিকে বিভিন্ন গল্প-উপন্যাসের নামে নিজের প্রোফাইলের নামকরণের
হিড়িক পড়ে যায় |
সত্যজিত রায়ের জন্মদিনে
ফেসবুকে আবার সিনেমাবোদ্ধাদের ভিড় | শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের চেয়েও বেশি প্রচেষ্টা নিজের
পান্ডিত্য জাহির করার | দেশী আর্টফিল্ম, প্যারালাল ফিল্ম আর বিদেশী film-noir
ইত্যাদি নিয়ে নাড়াচাড়া করে তারা যে গড়পড়তা ভেতো বাঙালীর থেকে খানিক উঁচু ‘class’-এ
উন্নীত হয়েছে সেটার জানান দিতে হবে তো |
সত্যি বলছি বাপের জন্মেও
নাম শুনিনি Floyd Mayweather আর Manny Pacquiao এর কথা | বক্সিং ম্যাচটা হয়ে যাবার
পর ওদের কথা প্রথম শুনলাম টিভিতে | কিন্তু ফেসবুক খুলে দেখি অনেক বোদ্ধা অলরেডি
অনেক পোস্ট করে রেখেছেন এটা নিয়ে, হাবভাবটা এমন যে অধীর আগ্রহে অন্ততঃ বছর দশেক
তাঁরা অপেক্ষা করছিলেন এই ডুয়েলটা দেখবার জন্য | অথচ তাঁদের টাইমলাইন তন্নতন্ন করে
খুঁজেও এই বিষয়ে আর কোনো পুরনো পোস্ট পেলাম না |
বছরে ৩৬৫ দিন বিদেশী ক্লাব
ফুটবলের খেলা লেগেই থাকে | ফলে রোজই ফুটবলপ্রেমীরা ফেসবুকের দেওয়ালে ভিড় করে |
একটি গোল হলেই আপডেট, পরের গোলে আবার আপডেট, এরকম চলতে থাকে | সেইসঙ্গে চরম
বোকাবোকা ‘মেসি বনাম রোনাল্ডো’ নিয়ে তর্কাতর্কি, কার্টুন ইত্যাদি | সেইসঙ্গে নিজের
প্রোফাইলের মানানসই নামকরণ, যেমন - 'পাঁচু রোনাল্ডো
ঘোষ', 'পল্টু দাভিদ লুইস সেন'
'ঘন্টু লিওনেল গুছাইত' ইত্যাদি ইত্যাদি | ক্রিকেটপ্রেমীরাও দেখাদেখি 'তোতোন দ্রাবিড়িস্ট বসাক' ‘বুবাই তেন্ডুল কর’ ইত্যাদি নাম রাখছে | (নামকরণ
হিসাবে অবশ্য এগুলো অতোটা হাস্যকর নয় যতটা হলো ন্যাকা মেয়েদের ‘রাতপরী' 'একটি মিষ্টি মেয়ে'
'একটি সাধারণ মেয়ে' 'রাতের তারা' গোছের
নামগুলো |)
সব ধরনের আঁতেলদের মধ্যে
সবচেয়ে বিরক্তিকর হলো রাজনৈতিক আঁতেল | সবদলের সমর্থকরাই স্টেটাস আপডেট দেয়,
কিন্তু আঁতলামো সর্বাধিক পরিমানে দেখা যায় একটি বিশেষ দলের সমর্থকদের মধ্যে, যারা
‘বুর্জোয়া’ ‘শ্রেণী সংগ্রাম’ ‘পুঁজিবাদ’ ইত্যাদি ভারী ভারী কথা নিয়ে বিশাল বিশাল লেকচার
ঝাড়ে | সেইসঙ্গে গু-এ ভরা কিম্বা তারাখচিত ডিসপ্লে ফটো বা কভার ফটো | আমি নিজে
কোনো রাজনৈতিক দলকেই সমর্থন করি না, ফলে বিদ্বেষও সবার প্রতিই সমান, তবু কেন জানি
এই সব কঠিন তত্ত্বকথা শুনলে রাগটা এই আঁতেলগুলোর উপরই সবচেয়ে বেশি হয় |
সত্যি, বড় আজব জিনিস ফেসবুকের
এই ‘স্টেটাস আপডেট’ | প্রথম কিস্তিতে (http://arghyadas1985.blogspot.in/2015/03/blog-post_19.html) এইসব নিয়েই আরো অনেক
কথা লিখেছিলাম, পাঠকদের সুবিধার্থে লিঙ্কটা দিলাম | কয়েকটা মজাদার ফটো নেটে পেলাম,
সেগুলোও সাথে দিলাম |
Comments
Post a Comment