না, এই লেখা
কোনো পাখিকে নিয়ে নয় | তবুও এর থেকে ভালো
কোনো নাম মাথায় এল না | নিজের বউকে নিয়ে
কথা কইতে ভীষণ ভালবাসেন এমন একজন পত্নীনিষ্ঠ বাঙালী ভদ্রলোককে নিয়ে এই লেখা | কর্মসূত্রে এই ভদ্রলোকের সাথে আমার আলাপ | যদিও তাঁর সাথে আমার আর যোগাযোগ নেই তবুও ভবিষ্যতে যাতে
কোনরকম মানহানির মোকদ্দমায় পড়তে না হয় সেজন্য চরিত্রের নামগুলো কিঞ্চিৎ পরিবর্তিত করে এই লেখা আপনাদের
সামনে পরিবেশন করছি |
বিশ্বজিত-মোহিতা
দুজনেই পেশায় শিক্ষক, কর্মসূত্রে বহুদিন ধরেই কোলকাতার বাইরে | পাঞ্জাব, উত্তরাখন্ডে বেশ কিছুদিন কাটিয়ে এখন মধ্যপ্রদেশের
বাসিন্দা | বিশ্বজিতবাবু একটি আবাসিক
বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক, মোহিতা দেবী একটি ডে-স্কুলে বিজ্ঞান পড়ান | দুজনে থাকেন বিশ্বজিতবাবুর কোয়ার্টারে | বছরে দুইবার ছুটিতে সোদপুরে নিজেদের বাড়িতে বেড়াতে যান | বৌপাগল এই মানুষটির আরো দুটি শখ ছিল – আত্মপ্রশংসা এবং
পরনিন্দা পরচর্চা | স্ত্রী-বন্দনায় যদি তিনি
পি.এইচডি ডিগ্রীপ্রাপ্ত হন, তাহলে এই দুটি বিষয়েও নিঃসন্দেহে তিনি এম.ফিল করেছিলেন
|
বিশ্বজিতবাবু
ধর্মে বৈষ্ণব না হলেও অষ্টপ্রহর নামজপে ব্যস্ত থাকেন – তবে ভগবানের নয়, নিজের
স্ত্রীর | মোহিতার রূপে-গুনে তিনি এতটাই
মোহিত যে চক্ষুলজ্জার সীমা ছাড়িয়ে প্রায় সর্বক্ষেত্রেই নিজপত্নীর শ্রেষ্ঠত্ব
প্রমাণে উঠেপড়ে লাগেন | কয়েকটা উদাহরণ
দেওয়া যাক -
স্কুলের
টিচার্স রুমে বিশ্বজিতবাবু সহকর্মীদের মাঝে বসে আছেন, এমন সময় কারোর মোবাইলের
রিংটোন বেজে উঠল | সুরটা খুবই চেনা, কিন্তু গানের
লাইনগুলো সেই মুহূর্তে কারোরই মাথায় আসছে না, বিশ্বজিতবাবু বলে উঠলেন, “ইস...
গানটা একদম মনে আসছে না | মোহিতা থাকলে
কিন্তু এক্ষুনি বলে দিত | ওর স্মৃতিশক্তি
খুব ভালো |” একদিন কথা
হচ্ছে ‘বিগ বস’ নিয়ে | এটা সত্যিই
রিয়ালিটি শো নাকি আগে থেকেই সাজানো সে নিয়ে প্রত্যেকে নিজের মতামত ব্যক্ত করছেন | হঠাৎ
সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে বিশ্বজিতবাবু বলে উঠলেন, “ বিগ বস মোহিতার খুব
পছন্দ, ও একটা এপিসোডও মিস করে না |”
আরেকবার আমি
আর বিশ্বজিতবাবু গল্প করছি | বাঙালীর আড্ডায়
খাওয়াদাওয়া নিয়ে কথা হবেই, ফলে একসময় বিরিয়ানির প্রসঙ্গ উঠল | বিশ্বজিতবাবু আমাকে বললেন, “একদিন তোমায় মোহিতার হাতের
বিরিয়ানি খাওয়াবো | খেলে বুঝবে - সিরাজ, আমিনিয়া,
আরসালান ধারেকাছে লাগে না |” চমকে আমার
হার্টফেল হওয়ার জোগাড় ! তবে নিমন্ত্রণ সত্যি জুটেছিল, খেয়েওছিলাম, একবার নয় – দুই
দু’বার | মন্দ নয় মোটেই, তবে তুলনাটা
নিতান্তই অতিশয়োক্তি !!
একদিন কথা
হচ্ছে পাহাড়ী রাস্তায় ড্রাইভিং নিয়ে | বিশ্বজিতবাবু
জানালেন, মোহিতাদেবী রাতের অন্ধকারে বহুদিন দেরাদুন-মুসৌরী স্কুটিতে যাতায়াত
করেছেন | আরেকদিন কথা হচ্ছে বি. এড. করা
নিয়ে | বিশ্বজিতবাবু সঙ্গে সঙ্গে
জানালেন যে মোহিতা ইগনুর বি. এড.-এর রিজিওনাল টপার | একদিন কথা হচ্ছে ক্লাস-টিচারদের দায়-দায়িত্ব নিয়ে | বিশ্বজিতবাবু জানালেন, ওনার স্ত্রী আগের স্কুলে ‘বেস্ট
ক্লাস টিচার অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছিলেন | আরেকদিন লন
টেনিসের প্রসঙ্গ উঠলে বিশ্বজিতবাবু জানালেন মোহিতা টিভিতে টেনিস দেখতে খুব
ভালবাসেন, অন্যদিন ‘দাবাং ২’ এর কথা উঠতেই আমরা জানলাম সলমন খান মোহিতার সবচেয়ে
প্রিয় অভিনেতা |
এরকম বহু
ঘটনা রয়েছে | মোহিতা দেবী যে সঙ্গীতে,
রন্ধনে, গৃহকর্মে, দেশ বিদেশের জ্ঞান আহরণে, , শিক্ষকতায় অতুলনীয়া সেসব খবর আমরা
বিশ্বজিতবাবুর কাছ থেকেই পেয়েছিলাম | বিশ্বজিতবাবু
মিথ্যা কথা হয়ত বলতেন না, কিন্তু সর্বদা তাঁর এই বউ-বড়াই বিবাহিত-অবিবাহিত আমাদের
সকলের কাছেই বেশ বিরক্তিকর হয়ে উঠেছিল | কাহাঁতক আর সহ্য করা যায় ! শেষে তাঁর পিছনে লোকে হাসাহাসি করতে শুরু করে |বিশ্বজিতবাবুর নাম দেওয়া হয় ‘মিস্টার মোহিতা’ ! কয়েকজন
তাঁর পিছনে তাঁকে ‘জরু কা গোলাম’ বা ‘স্ত্রৈণ’ নামেও অভিহিত করতে শুরু করেন | তবে সেরা সার্টিফিকেটটা দিয়েছিলেন সাতে-পাঁচে না থাকা,
নিতান্তই নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকা আমাদের এক সহকর্মী | তিনি বলেছিলেন,
“জীবনে হয়তো কখনো নিজের বউয়ের নাম ভুলে যেতে পারি, কিন্তু বিশ্বজিতবাবুর স্ত্রীর
নাম কিছুতেই ভুলব না |”
______________________________________________________________
© অর্ঘ্য দাস
দুর্গানগর,
৭-৪-২০১৫
Comments
Post a Comment