Skip to main content

মিনিবাস (Minibus)

মিনিবাস
==============

কোলকাতার মিনিবাস এক বিষম বস্তু | মিনিবাসে একদিন যাত্রা করলে মানুষের আয়ু মাসখানেক মিনিমাইজ হয়ে যায় | মিনিবাস তিনটি বিচিত্র প্রাণীর বাসস্থল  – চালক, পরিচালক (কন্ডাকটর) এবং খালাসি |

খালাসির কাজ হল চলন্ত বাসের পাদানিতে দাঁড়িয়ে আশেপাশের অন্য সমস্ত বাসের চালকদের বাপ-ঠাকুর্দাকে মুখে-মুখেই খালাস করা, বাসের রেস চলাকালীন নিজের টিমমেটদের সরেস ভাষায় শাবাস জানানো এবং বাকি সারাক্ষণ মুখে বিড়ি জ্বালিয়ে বিড়বিড় করে হিন্দি গানের কলি গুনগুন করা |  

বাসের চালক খুব চালু লোক – ইনি একাধারে গোরুর গাড়ি, ফর্মুলা ওয়ান রেসিং কার এবং জেটপ্লেন চালনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত | কলেজলাইফে অনেকদিন এয়ারপোর্ট-যাদবপুর মিনিবাসে যাতায়াত করেছি | এই বাসটি এয়ারপোর্ট এক নম্বর গেট থেকে ছাড়ার পর প্রথম আধঘন্টা আক্ষরিক অর্থেই গরুর গাড়ির মতো চলে | প্রতিটা মোড়ের মুখে এক মিনিট করে দাঁড়িয়ে থাকে যাত্রীর আশায় | খানিক পরে বাস মোটামুটি ভরলে শুরু হয় অন্য বাসের সাথে রেস | এই রেস অবশ্য জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত প্রাইভেট বাসেরই ন্যাশনাল স্পোর্ট | এরপর একদম শেষের দিকে, মোটামুটিভাবে ঢাকুরিয়া ব্রিজ থেকে যাদবপুর ৮বি পর্যন্ত বাস চলে প্রায় মুক্তিবেগ(escape velocity) নিয়ে, প্রতি মুহূর্তে মনে হবে এই বুঝি মাধ্যাকর্ষণ ছাড়িয়ে চলল আকাশপানে |

কন্ডাকটর হল মিনিবাসের সবচেয়ে বর্ণময় চরিত্র | বলা হয় পৃথিবীতে দশটা উজবুক মারা গেলে একটা মিনিবাস কন্ডাকটরের জন্ম হয় | এর কাজ হল বাস দাঁড়ালেই বাসের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ‘খালি গাড়ি, খালি গাড়ি’ করে চিৎকার করা (তা সে বাসের ভিতর যত ভিড়ই হোক না কেন), খুচরো নিয়ে যাত্রীদের সাথে যথাসম্ভব মিসকন্ডাক্ট করা এবং ‘বাস কেন ইচ্ছা করে আস্তে চালানো হচ্ছে’ ইত্যাদি  প্রশ্ন করলে যাত্রীর মুখের উপর ‘না পোষালে নেমে যান দাদা’ গোছের উত্তর দেওয়া |

একবার শনিবার সকালে সাতটা নাগাদ যাদবপুর ৮বি থেকে যাদবপুর-এয়ারপোর্ট মিনিতে চড়ে বসেছি | সাকুল্যে আমরা ৫-৬ জন যাত্রী, ফলে বাসের প্রায় চলার ইচ্ছা নেই বললেই চলে | যাদবপুর ইউনিভার্সিটির তিন নম্বর গেটে ২ মিনিট, চার নম্বর গেটে ১ মিনিট, আনোয়ার শাহের ক্রসিং পার করে ৩ মিনিট – এরকম করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চলছে বাসটা | শেষে বাসটা সেলিমপুরে অকারণে মিনিটখানেক দাঁড়াতে এক ভদ্রলোক বলে উঠলেন, “কি হচ্ছে ভাই ? কেউ কোথাও নেই, রাস্তাও বিলকুল ফাঁকা, তাও দাঁড়িয়ে আছে কেন বাসটা?” | ন্যায্য প্রশ্ন ! কন্ডাকটর বলে উঠলো “দাদা, সকালে বাজারে যান কোনোদিন ?” | ভদ্রলোক অবাক হয়ে বললেন, “হ্যাঁ | কেন ?” | কন্ডাকটরের সাফ জবাব, “গেলে বুঝবেন জিনিসপত্রের দাম কিরকম | খালি বাস নিয়ে গেলে পেট ভরবে ? আপনার যদি এতই অসুবিধা থাকে তাহলে নেমে গিয়ে ট্যাক্সি ধরুন |”


Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...
  ঝাড়গ্রাম : বসন্ত ১৪২৭ স্কুল পাশ করেছি সতেরো বছর হয়ে গেল | তারপর এই প্রথম আমার সুযোগ হলো স্কুলের বন্ধুদের সাথে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার | দু তিনটে জায়গা মাথায় ছিল – ঘাটশিলা , ঝাড়গ্রাম, অযোধ্যা পাহাড় | এই বসন্তের শুরুতে তিনটে জায়গাই মনোরম | শেষমেষ ঝাড়গ্রাম WBFDC এর গেস্ট হাউসের ছবি দেখে সেটাই ফাইনাল করা হলো | 6 ই মার্চ, 2021, শনিবার          ডিমসেদ্ধ : সকাল সাড়ে দশটা - ক্যালেন্ডারে মার্চের শুরু হলেও বেজায় গরম. আমি দরদর করে ঘামছি ডেবরা চৌমাথায় (পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) দাঁড়িয়ে, হাতে আমার একুশটা হাঁসের ডিম সেদ্ধ, সাথে পেঁয়াজ লঙ্কা কুচি এবং সাদা ও কালো নুন | এক সপ্তাহ আগে করা প্ল্যান অনুযায়ী আমরা নাকি আগামী দু’ ঘন্টায় গাড়িতে বসে পার হেড পাঁচটা করে হাঁসের ডিম খাবো | ওদিকে সৌমাভ ওর গাড়িতে গোল (সুমিত্র) আর পকাই (অর্ক) কে নিয়ে আসছে কলকাতা থেকে |          বব মার্লে : শেষমেষ আমায় প্রায় ঘন্টা খানেক রোদে দাঁড় করানোর পর তাঁরা এলেন এবং বসন্তের এই অকাল দাবদাহ থেকে আমায় মুক্তি দিলেন | ঠান্ডা গাড়িতে উঠে ওদের আনা এগ স্যান্ডউইচ আর কোলাঘাট KFC থেকে কেনা মুর...