Skip to main content

বানান বিভ্রাট


আমার এক অবাঙালি বন্ধু বিবেক মিশ্র ‘অটো’কে ‘আটো’, ‘রড’কে ‘রাড’, ‘সিনেমা হল’কে ‘সিনেমা হাল’, ‘অ্যালকোহল’কে ‘অ্যালকোহাল’ উচ্চারণ করে | প্রথম প্রথম ব্যাপারগুলো খুব অদ্ভুত ঠেকলেও পরে এক ঝাড়খন্ড-নিবাসী বাঙালী বন্ধু শুভজিতের কাছ থেকে শুনেছিলাম যে হিন্দিতে নাকি ওই শব্দগুলোর বানান ওই রকমই | ফলে ছোটবেলায় হিন্দি মাধ্যম স্কুলে পড়া যে কোনো ছাত্র-ছাত্রীর মুখ থেকে এই রকম উচ্চারণ শুনতে পাওয়াটা অদ্ভুত কিছু নয় |
গত সপ্তাহে এই বিবেকের বাড়ি গিয়েছিলাম ওর দাদার বিয়ে উপলক্ষে | ওর বাড়ি উত্তরপ্রদেশের বস্তি জেলার সদর শহর ‘বস্তি’র ‘আবাস বিকাশ কলোনি’তে | যাঁরা জানেন না তাঁদের উদ্দেশ্যে বলছি – উত্তরপ্রদেশের যে কোনো হিন্দু পরিবারের বিয়েতে আমিষ খাবার নিষিদ্ধ এবং এই বিয়ের অনুষ্ঠানটা চলে গোটা রাত জুড়ে !
আসল প্রসঙ্গে ফিরে আসি | এই বস্তি শহরেই নানা জায়গায় – পোস্টারে, দোকানের হোর্ডিংয়ে ইত্যাদিতে নানারকম অদ্ভুত বানান দেখেছি | যেমন -
১. Corner শব্দের উচ্চারণ কর্ণার | কিন্তু সেটি এদের উচ্চারণে হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘কার্ণার’ | ফলে এক দোকানের নামে এই বানানটা হয়ে গেছে ‘CARNER’

২. Hall শব্দের উচ্চারণ ‘হল’ | কিন্তু হিন্দিতে এর উচ্চারণ ‘হাল’ | এক জায়গায় দেখলাম হিন্দিতে স্পষ্ট করে লেখা আছে ‘ম্যারিজ হাল’ !

৩. একই রকম ভাবে কফি হাউস হয়ে গেছে ‘কাফি’ হাউস আর কর্পোরেশন হয়েছে ‘কার’পোরেশন !







৪. এটা সবথেকে সেরা | বিখ্যাত স্কুল Don Bosco-র নামের আদলে গড়ে ওঠা ‘DAWN VASCO’ স্কুল | আমার মনে হয় এই অদ্ভুত বানানের পিছনে রয়েছে উচ্চারণরীতির এই বিবর্তন : বস্কো > বাস্কো > ভাস্কো | অথবা বোধহয় ভাস্কো-ডা-গামা অতি প্রত্যুষে (Dawn   = উষালগ্ন) এই স্কুলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন |



এইসব বানান-বিভ্রাট ছাড়াও আরো অনেকগুলো মজাদার নামওয়ালা দোকান দেখলাম | যেমন KFC-এর আদলে SFC (সর্দার ফিশ এন্ড চিকেন) এবং ‘ভারতীয় ভাইয়ো কী দুকান’  !!




_____________________________________
 © অর্ঘ্য দাস @ টুকটাক লেখালেখি. দুর্গানগর, ২৯-০২-২০১৬


Comments

Popular posts from this blog

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ১০ : ইতিহাস ক্লাস

**********************************************************************      “ ইতিহাসে পাতিহাস, ভূগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হয়েছি পাগল ”  বহুদিনের পুরোনো ছড়া  |  আমরা সবাই ছোটবেলায় এটা শুনেছি  |  ‘পাতিহাস’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে জানিনা, তবে দুটো মানে বের করা যায়  |  এক, পাতিহাস ডিম পাড়ে, আর ডিম মানেই স্যারের দেওয়া ‘গোল্লা’  |  অন্য মানেটা ক্রিকেটের ‘Duck’ যার অর্থও শূন্য  |  মোদ্দা কথা ইতিহাসে নম্বর পাওয়া দুষ্কর  |  “পরীক্ষার্থী হত ইতি উত্তর লেখবার সময়াভাব, সাময়িক স্মৃতিনাশ এবং স্যারের স্কেল মাপা চেকিং”  |   ফলাফল মুখের হাসিতে ইতি টেনে দেওয়ার উপযোগী মার্কশীট  | পাঠকমাত্রেই মানবেন যে ইতিহাসের সাথে ঘুমের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে  |  তা সে ইতিহাস বই হোক বা ইতিহাস ক্লাস  |  ছাত্রজীবনে সন্ধ্যাবেলা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট পড়ার সময় দিব্বি জেগে থাকতাম. কিন্তু ইতিহাস বই খুললেই কেন জানি পাঁচ মিনিটেই ঘুম চলে আসতো ! আমি তো একবার ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই ঘুমি...

কাজের মাসি

কাজের মাসি গতকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় তে একটা লেখা পড়লাম কাজের মাসিপিসি দের নিয়ে | এ প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল – তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আর থাকি গড়ফা নামক একটি জায়গায় মেসবাড়িতে | আমাদের মেসে রান্না, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার ইত্যদি কাজ করত সবিতা দি | সদা হাস্যমুখ এই সবিতাদির বাড়ি ছিল নরেন্দ্রপুরে | মাঝেমাঝেই সবিতাদির নানা উদ্ভট কথাবার্তায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হতাম | আমাদের মেসের মনোজিত আর সুদীপকে চিরকাল সবিতাদি ‘মনোদীপ ভাই’ আর ‘সুজিত ভাই’ বলেই ডেকে এসেছে, বহুবার সংশোধন করার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি | আমাকে বলত ‘মোটাভাই’ | স্কচ বাইট কে বলত ‘কসবা’ | মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল কে বলত ‘মাছের তরকারী’ আর ‘মাংসের তরকারী’ | তখনো তৃনমূল ক্ষমতায় আসেনি, একদিন সবিতাদি এসে বলল, “ও ভাই জানো, আমাদের পাড়ায় কাল রাতে ঝামেলা হয়েচিল, এখন নতুন কি একটা পার্টি এসেচে না - ‘তিন আঙ্গুল’ না ‘দুই আঙ্গুল’ কি একটা নাম, তাদের সাথে ছি পি এমের | মারপিট ও হয়েচে |” আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন কোনো পার্টি সত্যিই বোধহয় এসেছে যাদের চিহ্ন ওই আঙ্গুলমার্কা ভিকট্রি সাইন ! মিনিট খানেক পর...

নরেন্দ্রপুরের স্মৃতিকথা (Memoirs of RKM Narendrapur) : পর্ব ৩ - ঘন্টা, আলু এবং ব্রহ্ম

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ছাত্রদের দৈনন্দিন আবাসিক জীবনকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছে এই ছোট্ট ছড়াটা - “ নরেন্দ্রপুরে সময় ঘন্টাময় , খাদ্য আলুময় , চিন্তা ব্রহ্মময়  | ” অনেকদিন আগে শোনা এই ছড়ার রচয়িতার নাম আমার জানা নেই , কিন্তু ছড়াটা এতটাই প্রাসঙ্গিক যে এটা আমার মনের মধ্যে যেন গেঁথে গেছে  | ************************************************************ প্রথম ভাগ : ঘন্টা বাস্তবিকই আমাদের আবাসিক জীবন ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  |   ভোর পাঁচটায় rising bell শুনে ঘুম ভাঙতো , তারপর ঘন্টার তালে তালে সেই যে লেজ তুলে দৌড় শুরু হত , সেটা থামত রাত সাড়ে দশটা নাগাদ , ‘lights out’ এর ঘন্টাধ্বনি শুনে  |   চার বেলা ডাইনিং হলে খেতে যাওয়ার ঘন্টা , প্রার্থনা কক্ষে যাবার ঘন্টা , স্কুলে যাবার ঘন্টা , হোস্টেলে পড়া শুরু করার ঘন্টা , খেলতে যাবার ঘন্টা , রাত্রে শুতে যাবার ঘন্টা – আমাদের প্রতিটা কাজ ছিল ঘন্টা-নিয়ন্ত্রিত  | প্রতিদিন এই সময়ে-অসময়ে ঘন্টা বাজানোর জন্য প্রত্যেক ভবনে (হস্টেলে) প্রতি মাসে দু’জন ছাত্রকে নিয়োগ করা হতো , এদের বলা হতো ‘...